প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ (ইউএইচসি) নিশ্চিত করতে পাঁচটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গতকাল জাতিসংঘ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি)’ বিষয়ক ইউএনজিএ উচ্চ–স্তরের বৈঠকে ভাষণদান কালে এ আহ্বান জানান। এদিকে অধিক মাছ ধরা এবং অন্যান্য মানবিক কর্মকাণ্ডের কারণে ভঙ্গুর সামুদ্রিক পরিবেশের ক্ষতির হাত থেকে বিশ্বের মহাসাগর এবং নদীগুলোকে রক্ষায় মেরিন বায়োডাইভারসিটি অব এরিয়াজ বিয়ন্ড ন্যাশনাল জুরিসডিকশন (বিবিএনজে) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদেরকে সবার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ নিশ্চিত করতে পাঁচটি ক্ষেত্রে আমাদের সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করছি। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে : প্রথমত, শিশু, মা এবং কিশোর–কিশোরীদের স্বাস্থ্যের জন্য উন্নয়ন সহায়তা বজায় রাখা এবং অভিবাসীদের স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু–স্বাস্থ্য চক্র মোকাবেলা করা। দ্বিতীয়ত, সকলের জন্য স্বাস্থ্য আইডিসহ একটি আন্তঃ–চালিত, ডেটা–নির্ভর স্বাস্থ্য তথ্য সিস্টেম বিকাশে দক্ষতা বিনিময় করা। তৃতীয়ত, আমাদের উপযোগী একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য বীমা স্কিম বিকাশে সহায়তা করা। চতুর্থত, দ্রুত বর্ধনশীল স্বাস্থ্য–প্রযুক্তি স্টার্ট আপসহ স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো; এবং পঞ্চমত, জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পেটেন্ট প্রকাশ এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের ‘ট্রিপ’ (ট্রাফিক রেসপন্স এন্ড ইনফর্মেশন পার্টনারশিপ) বাধ্যবাধকতা মেনে চলা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী অথচ অর্জনযোগ্য এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সবার জন্য স্বাস্থ্যেসেবার সুযোগ নিশ্চিত করা আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিশেষায়িত মেডিকেল হাসপাতাল পর্যন্ত দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা তৃণমূলে বেসরকারি অংশীদারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ লভ্যাংশ দিয়েছে, কারণ, বাংলাদেশ প্রতি ১ লাখ জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ১৬৩–এ নামিয়ে এনেছে। এগুলো ছাড়াও প্রতি হাজার জন্মে নবজাতকের মৃত্যুহার ১৫ এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী মৃত্যু হার ২৮–এ নেমে এসেছে। তিনি বলেন, শিশু টিকাদানের ওপর আমাদের গুরুত্ব সার্বজনীন কভারেজ অর্জন করেছে। আমাদের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছরের কাছাকাছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মানবিক ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চিকিৎসা সেবা প্রদানের মান প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি আরও বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং স্নায়বিক রোগের বিষয়ে বাংলাদেশের নীতি এবং পদক্ষেপ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। আমরা সংস্কৃতিগত ভাবে সংবেদনশীল পদ্ধতিতে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করি। আমরা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের বিরুদ্ধে প্রস্তুতির জন্য একটি ‘এক স্বাস্থ্য পদ্ধতি’ প্রচার করছি। আমরা পুষ্টি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা এবং পানিতে ডুবে মৃত্যুর বিষয়ে সচেতনতা বাড়াচ্ছি।
এ সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।
বিবিএনজেতে স্বাক্ষর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেরিন বায়োডাইভারসিটি অব এরিয়াজ বিয়ন্ড ন্যাশনাল জুরিসডিকশন (বিবিএনজে) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। জেনারেল অ্যাসেম্বলি বিল্ডিং এর ট্রিটি ইভেন্ট এলাকার গ্রাউন্ড ফ্লোরে বুধবার ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অফ দ্য সি’র অধীনে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততা সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এ কথা জানান। চুক্তিতে সাধারণ ঐতিহ্য হিসাবে বর্ণিত জেনেটিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান এবং নেদারল্যান্ডের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী লিজে শ্রেইনেমাচারের সাথে কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগদানের পাশাপাশি জলবায়ু গতিশীলতার ওপর প্রাতঃরাশ শীর্ষ সম্মেলন এবং ১৮ তম এশিয়া সহযোগিতা সংলাপসহ বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন। মোমেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ বাকি দেশগুলোর জন্য রোল মডেল হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ধনী দেশগুলো মূলত কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবদান মাত্র ০.৪৭ শতাংশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধনী দেশগুলোকে প্রতি বছর জলবায়ু তহবিলে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি মেনে চলার আহ্বান জানান।
এ সময়ে অন্যান্যের মধ্যে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বিষয়ভিত্তিক রাষ্ট্রদূত সায়মা ওয়াজেদও উপস্থিত ছিলেন।