সরু রাস্তা, নেই কোনো ফুটপাত। আছে শুধু মূল রাস্তা। এ মূল রাস্তাতেই বসে পড়েছেন হকাররা। নগরীর ব্যস্ততম কোর্ট হিলের এ চিত্র নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে একটি মহলের প্ররোচনায় হকারদের এ দৌরাত্ম্য চলে আসছে। বিশেষ করে কোর্ট হিলের আইনজীবীদের দোয়েল ভবন–লাগোয়া চার রাস্তার মোড় ঘিরে হকাররা নানা পণ্য বসিয়ে ব্যবসা করে আসছেন এবং সেটি একেবারে মূল রাস্তাতে বসেই। এতে বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের চলাচলে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে তেমনি আদালতে আসামি আনা নেওয়ার প্রিজন ভ্যানেরও সমস্যা হচ্ছে। কোর্ট হিলে উঠানামা করতে প্রতিদিনই বাধার সম্মুখীন হচ্ছে প্রিজন ভ্যান। এমন অবস্থা চোখে পড়ার পরও হকারকরা তাদের সাজিয়ে রাখা পণ্য কখনো সরিয়ে নেন না।
গত কয়েকদিন সরেজমিনে দেখা যায়, হকারকরা মূল রাস্তার ধারে নানা পণ্য নিয়ে ব্যবসা করছেন। একটি প্রিজন ভ্যান তখন আসামিদের নিয়ে কারাগারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। যখনই প্রিজন ভ্যানটি দোয়েল ভবন–লাগোয়া চার রাস্তার মোড়ে আসে তখনই লাগে বিপত্তি। কোনোভাবেই সেটি টার্ন নিতে পারছিল না। রাস্তার ধারে বসে পড়া শুটকি ব্যবসায়ীদের কারণেই প্রিজন ভ্যানটির এ অবস্থা। অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টার পর কোনোরকম সেখান থেকে বের হয় এবং গন্তব্যে ছুটে চলে।
কোর্ট হিলের শুরু যেখান থেকে অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের সীমানা দেওয়াল থেকে শুরু করে মূল আইনজীবী ভবনের পর পর্যন্ত হকারদের এ দৌরাত্ম্য। বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী, বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট অনেকের গাড়ি প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে কোর্ট হিলে উঠানামা করে। এ সময় পুরো সড়কজুড়ে জ্যামের সৃষ্টি হয়। এ জ্যামের মূল নেপথ্যে রয়েছেন হকারকরা। সাবলীলভাবে যানবাহন, মানুষ চলাচল করার জন্য এবং জ্যাম থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এ হকারদের উচ্ছেদ জরুরি বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তারা বলছেন, কোর্ট হিল একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে ৮০টিরও বেশি আদালত রয়েছে। রয়েছে জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নানা ইউনিট। আরো রয়েছে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে শুরু করে আইনজীবীদের বেশ কয়েকটি ভবন। প্রতিদিন অনেক মানুষ এ এলাকায় সেবা নিতে আসেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কিভাবে হকারকরা বসে পড়েন! বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট, আইনজীবী থেকে শুরু করে সবাই জ্যামের সম্মুখীন হচ্ছেন। এ পরিস্থিতির লাগাম এখনই টেনে ধরা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন আইনজীবী ও আদালত সংশ্লিষ্টরা। কোর্ট হিল ঘিরে হকাররা শুটকির পাশাপাশি নানা রকম ফলমূল, শার্ট, প্যান্ট, সেন্ডেল থেকে শুরু করে প্রায় সব রকম পণ্য নিয়ে বসেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, কোর্ট হিলে জ্যামের পেছনে হকারদের পাশাপাশি যানবাহনেরও দায় রয়েছে। মূল রাস্তাতেই পার্ক করে রাখা হয় গাড়ি। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য। যেখানে সেখানে মোটরসাইকেল পার্ক করে রাখে কোর্ট হিলে আসা লোকজন। হকারদের উচ্ছেদ করা গেলে এবং যেখানে সেখানে গাড়ি পার্ক করা বন্ধ করতে পারলে সমস্যার সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এ বক্তব্য আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও। তারা বলছেন, কোর্ট হিলের রাস্তাগুলো খুবই সরু। এ শুরু রাস্তায় হকারদের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরেই এ অবস্থা চলে আসছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, কোর্ট হিলে হকার আসলেই একটি সমস্যা। বিশেষ করে আসামিদের প্রিজন ভ্যান আসা যাওয়া করতে সমস্যা হয়। অনেকক্ষণ লেগে যায় প্রিজন ভ্যানের গন্তব্যে যাওয়া আসা করতে। যত্রযত্র গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়টিও রয়েছে। সবমিলে পরিস্থিতি ভালো নয়। এ সমস্যার সমাধান জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, আমরা মাঝে মাঝে হকারদের তুলে দিলেও পরে তারা আবারও বসে পড়েন। বেশ কিছু সময় আগে জেলা প্রশাসকও একটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। আসলে সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ। কোর্ট হিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়, তাও আবার মূল রাস্তায় বসে হকারদের ব্যবসা মেনে নেওয়া যায় না। এখানে তাদের (হকারদের) পেছনে কেউ না কেউ আছেন। অন্যথায় তারা রাস্তায় বসে ব্যবসা করতে পারতেন না।