চট্টগ্রামের শস্যভান্ডারখ্যাত গুমাই বিল, লাইগ্যা বিল, তলয় ভাঙা বিল, বগা বিলসহ একাধিক শস্যভান্ডারের উপজেলা রাঙ্গুনিয়া। কৃষিনির্ভর রাঙ্গুনিয়ায় অন্তত ৩৬ হাজার কৃষক রয়েছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় অনেকাংশে পিছিয়ে ছিলেন নারীরা। তবে গেল কয়েক বছর ধরে রাঙ্গুনিয়াতেও কৃষি কাজে এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি শীতকালীন সবজি আবাদে পুরুষদের পাশাপাশি জড়িত রয়েছেন অন্তত ৯ হাজার কৃষাণী। ধূসর কৃষি জমিতে সবুজের বিপ্লব ঘটিয়ে এসব কৃষাণী পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন; অবদান রাখছেন দেশের অর্থনীতিতেও।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রতি তিন ওয়ার্ড নিয়ে একেকটি ব্লক রয়েছে। প্রতি ব্লকে ১২টি করে কৃষকদল রয়েছে। একেকটি দলে রয়েছে ৩০ জন করে কৃষক। প্রতি দলের ৩০ জনের ৯ জনই কৃষাণী বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কৃষাণীর প্রত্যেকেই কৃষি কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন, পরিবারে স্বচ্ছলতা এনে সৃষ্টি করেছেন সফলতার গল্প।
সরেজমিনে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের নারিশ্চা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রেনুয়ারা বেগম নামে চল্লিশোর্ধ্ব এক কৃষাণী ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নিজের ফ্রান্সবিন ক্ষেতে। আমন ধান ঘরে তোলার পর এবার তিনি ৬ কানি জমিতে আবাদ করেছেন নানা জাতের সবজি। এর মধ্যে ১৬ শতক জমিতে করেছেন ফ্রান্সবিন আবাদ। এছাড়া বাকি জমিতে লাউ, মরিচ, পেলন, পেঁয়াজ, বাদাম, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ নানা জাতের সবজি আবাদ করেছেন। সবজি বাজারজাত করে ভালোই উপার্জন হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, ২০১০ সাল থেকে কৃষিকাজের সাথে যুক্ত তিনি। তখন মানুষ নানা কথা বললেও কারো কথা না শুনে তিনি স্বামীর পাশাপাশি কৃষিকাজ চালিয়ে গেছেন। বর্গা জমিতে চাষাবাদ করে নিজের দুই ছেলের একজনকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। অন্যজনকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। কৃষিকাজের মাধ্যমে তার সংসারের দারিদ্র্যও ঘুচেছে।
একই গ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা রহমানিয়া ঘোনার কৃষাণী দিলুয়ারা বেগম। কৃষি অফিসের পরামর্শে এবং প্রণোদনা নিয়ে দুই একর পাহাড়ি ঢালু জমিতে কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা ও লেবুর আবাদ করেছেন। এর থেকে ভালোই উপার্জন হচ্ছে তার। এছাড়া বাড়ির আশেপাশে করেছেন পারিবারিক পুষ্টি বাগান। বর্গা নেওয়া জমিতে আমন ধান আবাদের পর এবার নানা সবজি আবাদ করে বাজারজাত করছেন তিনি। এতে তার দরিদ্র পরিবারে এসেছে স্বচ্ছলতা।
একইভাবে পোমরা গ্রামের কৃষাণী ফাতেমা আক্তারও করেছেন নানা ধরনের আবাদ। তার স্বামী নেই। কৃষিকাজকেই সঙ্গী করে সংসারের অভাব দূর করেছেন বলে জানান তিনি।
বেতাগী গ্রামের কৃষাণী ডেজি বড়ুয়া বলেন, নারীরা কৃষিকাজ করবে, এটা একসময় মানুষের চিন্তার বাইরে ছিল। মাঠে কাজ করতে গিয়ে কিংবা বাজারজাত করার সময় নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হতো। তবে মানুষের চিন্তার পরিবর্তন হওয়ায় এখন কৃষিকাজে নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হলে নারীরও কৃষিকাজে পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, কৃষকদল গঠন করার সময় বাধ্যতামূলক ৩০% নারী কোটা রাখায় মাঠ পর্যায়ে নারীদের উৎসাহিত করে কৃষাণীদের চাষাবাদে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। প্রণোদনা দেওয়ার সময় তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা করা হয়। উপজেলার ৩৬ হাজার কৃষকের ২৫ শতাংশই নারী বলে জানান তিনি।