প্রায় ১৩০ একর জায়গা পুরোপুরি প্রস্তুত। প্রস্তুত করা হয়েছে টেন্ডার ডকুমেন্টস। প্রকল্পের ডিজাইনও তৈরি। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না হওয়ায় দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিট (ইআরএল–২) স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। অর্থের সংস্থান হলেই কাজ শুরু হবে। এদিকে প্রকল্প গ্রহণের পর পেরিয়ে গেছে এক যুগ।
জ্বালানি তেল পরিশোধন সক্ষমতা তিন গুণে উন্নীত করে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল। বিগত সরকার আলোচিত এবং বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেও ছাত্র–জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই চুক্তি বাতিল করেছে। বর্তমানে সরকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইআরডির মাধ্যমে প্রকল্পটিতে অর্থায়নের মতো বিদেশি অংশীদার খুঁজছে। প্রকল্পটিতে বিনিয়োগের ব্যাপারে সরকার সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও জাপানের সাথে প্রাথমিক আলোচনা করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
জানা যায়, দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রতি বছর বাড়ছে। বর্তমানে ৭০ লাখ টনের মতো জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এই তেলের প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। বিশ্বের তেল সমৃদ্ধ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) পরিশোধিত এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। আমদানিকৃত অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করে বাজারজাত করা হয়। ১৯৬৮ সালে চালু হওয়া ইস্টার্ন রিফাইনারি বছরে ১৪ লাখ টন ক্রুড অয়েল পরিশোধন করতে পারে। চাহিদার বাকি তেল পরিশোধিত অবস্থায় আমদানি করতে হয়। এতে প্রতি লিটারে ১০ টাকার বেশি অর্থ বাড়তি ব্যয় হয়। দেশের পরিশোধন সক্ষমতা থাকলে বিপিসির প্রতি লিটারে ১০ টাকার বেশি অর্থ সাশ্রয় হতো। এছাড়া নিজেদের পরিশোধন সক্ষমতা থাকলে নিশ্চিত হতো জ্বালানি নিরাপত্তা।
সূত্র জানায়, জ্বালানি নিরাপত্তা ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ইস্টার্ন রিফাইনারির পাশে ১৩০ একর জায়গায় ইআরএল সেকেন্ড ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১২ সালে নেওয়া এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে অনেক আলোচনা এবং পরিকল্পনা হয়েছে। বার্ষিক ৩০ লাখ টন ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন সেকেন্ড ইউনিটের জন্য ভূমি প্রস্তুত করা হয়। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ, টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরি এবং ডিজাইন তৈরি করা হয়। ১৯৬৮ সালে ইআরএলের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের টেকনিপ কোম্পানি সেকেন্ড ইউনিটের ডিজাইন প্রস্তুত করে।
প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে তা বেড়ে উন্নীত হয় ২৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের অর্থবিভাগ ১৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা বিপিসিকে ঋণ হিসেবে প্রদান করতে সম্মত হয়েছিল। বাকি ৬ হাজার ৯১৬ কোটি ৯২ লাখ ৯৩ হাজার টাকার যোগান বিপিসির নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়ার কথা। কিন্তু হুট করে সিদ্ধান্ত পাল্টে বিগত সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের সাথে চুক্তি করে। এস আলম প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু করে। নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে মাঠ পর্যায়ের কাজে হাত দেওয়ার আগে ছাত্র আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটে। পরে অন্তর্বর্তী সরকার এস আলমের সাথে চুক্তি বাতিল করে। সূত্র বলেছে, বর্তমানে সরকার দেশি–বিদেশি যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভূমির সংস্থান থাকায় অর্থায়নে সমস্যা হবে না বলে মন্তব্য করে বিপিসির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা এবং সরকারের সাথে আলোচনা করছে। প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজগুলো গোছানো থাকায় দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করবে।
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শরীফ হাসনাত আজাদীকে বলেন, সরকার অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান হলেই প্রকল্পের অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ শুরু হবে। প্রকল্পটি নিয়ে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা নেই।