জেলাভিত্তিক গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত এবং আন্তঃজেলা বাস চলাচলের অনুমতি না দেওয়া নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছিল। পত্রিকান্তরে সংবাদ বেরোয় যে নিরুপায় হয়ে অনেক শ্রমিক পেশা বদল করছে। এক পর্যায়ে গণপরিবহন চালুর দাবিতে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এলে সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসে। অন্যদিকে, আন্তঃজেলা বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া না হলে ঈদের আগে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। শ্রমিক নেতারা বলছেন, দূরপাল্লার বাস চালুর দাবিতে শ্রমিকরা রাস্তায় নামলে তার দায় নেবে না ফেডারেশন। তবে এটাও ঠিক যে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও, রাজধানী এবং বিভিন্ন বিভাগীয় শহর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে মানুষের যাতায়াত বন্ধ নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস, এমনকি মটরবাইকে করেও ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে। অবশ্য এজন্য কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে তাদেরকে। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে ঘরমুখো মানুষ আর বিভিন্ন যানের ভিড় বাড়লেও, এনিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো নজরদারি নেই। অন্যদিকে নগরীর সবগুলো আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে অলস সময় কাটাচ্ছেন বাসের শ্রমিক ও কর্মচারীরা। কোনো কাজ না থাকায় তাদের আয়ও নেই। তারা বলছেন, ট্রিপ ও দিনের হিসাবে কাজ করে বেশিরভাগ শ্রমিক। তাই তাদের এখন কোনো আয় নেই। এই পরিস্থিতিতে গণপরিবহন খুলে দেয়ার দাবিতে গেলো রোববার বিক্ষোভ করেছিলো বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। সেদিনই সরকার ঘোষণা দেয় শহরের বাসগুলো চলবে, তবে বন্ধ থাকবে আন্ত:জেলা বাস চলাচল। কিন্তু ঈদের আগে দূরপাল্লার বাস চালানোর দাবি জানিয়েছে আবারো।
এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরও পড়ছে লকডাউনের মধ্যে। প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও বাড়ানোয় এ ঘটনা ঘটছে। তবে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনায় নিয়ে গণপরিবহন আংশিক চালুসহ কিছু কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিম্নমুখী। শনাক্তের হার ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। চলমান বিধিনিষেধের কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমছে- এটি প্রমাণিত। সুতরাং ঈদের আগে আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না সরকার। এ কারণে চলমান বিধিনিষেধ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দোকানপাট ও শপিংমলের পর এবার গণপরিবহনও সীমিত পরিসরে চালু করা হলো। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে গাদাগাদি করে ঘরে ফেরার দৃশ্য অত্যন্ত পরিচিত। এটা চিন্তা করে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ রাখছে সরকার। কিন্তু দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ রাখলেও মানুষের গ্রামে ফেরা কতটুকু আটকানো যাবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ গত বছরের ঈদযাত্রার ইতিহাস সুখকর নয়। গত বছরের ঈদযাত্রা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ওই সময় গণপরিবহন বন্ধ ছিল। কিন্তু বিকল্প পথে প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স ও পিকআপভ্যান ভাড়া করে গ্রামে ফিরেছিল। ওই সব মানুষ ঈদ শেষে আবার ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরীতে ফিরে আসে। এরপরই সারাদেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং জুন মাসে ভয়াবহ পরিস্থিতি ধারণ করে। জুলাই মাসে পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছিল। এবারও সে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, জীবন ও জীবিকার তাগিদে চলমান বিধিনিষেধ অনির্দিষ্টকাল অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না। কারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিকসহ অধিকাংশ মানুষ এতে করে বেকার হয়ে পড়বে। অর্থনীতিতে স্থবিরতা আসতে পারে। সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। তাই ঈদের পর সবকিছু খুলে দেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে শতভাগ মাস্ক ব্যবহার ও শরীরী দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ঈদ উৎসবের মতো বড় জমায়েতের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। তাহলে সংক্রমণ কমে আসবে। এখন সরকারকে সবার জন্য চিন্তা করতে হবে। কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালু করা যায়, দূরপাল্লার যাত্রীরা কিভাবে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে পারে এবং কিভাবে ঝুঁকি এড়ানো যায়- তা নিয়ে কৌশল বের করতে হবে। নইলে মাঝখানে সাধারণ আয়ের মানুষের দুর্গতি বাড়বে এবং পরিবহন শ্রমিকদের আয়ের পথও রুদ্ধ হবে।