সন্ধ্যার মধ্যেই ‘সাফ’ নগরী

দুইদিনে ১৪ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ সবার সম্মিলিত প্রয়াসে এ সাফল্য : মেয়র

মোরশেদ তালুকদার | সোমবার , ৩ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে এবারো সাফল্য ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)। কোরবানির দিন সন্ধ্যার মধ্যেই পুরো শহর ‘সাফ’ করে প্রশংসা কুড়িয়েছে সংস্থাটি। নগরকে ছয়টি জোনে ভাগ করে চলে এ পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম। স্বয়ং সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দিনভর এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে ছুটে চলে মনিটরিং করেন বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম। এসময় দেন বিভিন্ন নির্দেশনা। এতে গতি আসে কাজে এবং ধরা দেয় সাফল্য।

চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দুইদিনে ১৪ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম দিন বৃহস্পতিবার সাত হাজার টন জবাইকৃত কোরবানি পশুর বর্জ্য এবং দুই হাজার টন নিয়মিত বর্জ্য (গৃহস্থালি ও অন্যান্য) অপসারণ করা হয়। দ্বিতীয় দিন অপসারণ করা হয় পাঁচ হাজার টন বর্জ্য। এর মধ্যে তিন হাজার টন কোরবানি পশুর বর্জ্য এবং বাকি দুই হাজার টন ছিল নিয়মিত বর্জ্য।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম দিন বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে ৩৬টি ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শেষ হয়ে যায়। গাড়ি নষ্ট হওয়ায় পাঁচটা ওয়ার্ডে তখনো বাকি ছিল। এসব ওয়ার্ড থেকে রাত ৭টা৮টার মধ্যে সবগুলো বর্জ্য অপসারণ করা হয়। প্রথমদিন সাড়ে ১২টার মধ্যে গোসাইলডাঙ্গাসহ কয়েকটি ওয়ার্ডের সম্পূর্ণ বর্জ্য অপসারণ করা হয়। পাথরঘাটাসহ কয়েকটি ওযার্ডে কাজ শেষ হয় আড়াইটার দিকে। এছাড়া প্রথম দিন ৩টা৪টার মধ্যে শহরের প্রধান সড়ক থেকে বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, কোরবানিদাতাদের মাঝে ৮০ হাজার পলিথিনের ব্যাগ বিতরণ করা হয়। এসব ব্যাগে জবাইকৃত পশুর নাড়িভূড়িসহ অন্যান্য উচ্ছিষ্ট রেখে দেন কোরবানিদাতারা। যা চসিকের সেবকররা এসে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এছড়া দুর্গন্ধ রোধে ছিটানো হয় ব্লিচিং পাউডার। বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে কাজ করেন ৪ হাজার ৭০০ কর্মী। বর্জ্য সরিয়ে নেওয়ার জন্য সাড়ে ৩০০ গাড়ি ব্যবহার করা হয়।

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, বর্জ্য অপসারণে যাদের উপর দায়িত্ব ছিল সবাই আন্তরিকভাবে পরিশ্রম করেছেন। কাউন্সিলর, কনজার্ভেন্সি অফিসার, সাড়ে চার হাজার সেবক, যান্ত্রিক শাখার প্রকৌশলী এবং গাড়ি চালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে সাফল্য এসেছে। তাই অতীতে কর্পোরেশনের যে সুনাম ছিল তা এবারো ধরে রাখতে পেরেছি। গতবার সাত ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করা হয়, এবার আরো কম সময় লেগেছে।

কয়টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, প্রথম দিন প্রধান সড়ক ৪টার মধ্যে পরিষ্কার হয়েছে। অলিগলিতে আরো ঘন্টাদেড় ঘণ্টা সময় লাগে। সবমিলিয়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে পুরো শহর পরিষ্কার হয়ে গেছে। দ্বিতীয় দিনেও অনেকে কোরবানি পশু জবাই করেছেন, এ সংখ্যাও কম নয়। সেদিনও আমরা ত্বরিৎ ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রথমদিনের মত চাপ না থাকলেও দ্বিতীয় দিনেও আমরা একই জনবল ও ইক্যুপমেন্ট প্রস্তুতি রাখি। ফলে সেদিনও সমস্যা হয়নি। দ্রুত বর্জ্যগুলো অপসারণ করা হয়।

মেয়র বলেন, আমরা পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ করেছিলাম। কোরবানিদাতারা পশুর নাড়িভূড়িসহ অন্যান্য উচ্ছিষ্ট সেখানে রাখে। সাথে সাথে আমাদের সেবকরা সেগুলো নিয়ে যায়। ফলে রাস্তাঘাট, নালানর্দমা কোথাও কোনো বর্জ্য পড়ে ছিল না। এমনভাবে পরিষ্কার করা হয়েছে কোরবানি হয়েছে সেটাও বুঝার উপায় নাই।

নগরবাসীও সহযোগিতা করেছেন জানিয়ে বলেন, নগরবাসী আগের চেয়ে কোরবানি পশুর বর্জ্যসংক্রান্ত বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন। তারা নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি পশুর বর্জ্যগুলো রাখে। তাদেরও সহযোগিতা ছিল। সব মিলিয়ে সাফল্য এসেছে।

এর আগে কোরবানির দিন (বৃহস্পতিবার) বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শনের সময় দুপুরে আলমাস সিসেমা হলে হলের সামনে সাংবাদিকদের মেয়র বলেন, বিকাল সাড়ে তিনটার মধ্যে নগরীর ৮০ শতাংশ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। নগরে অনেকে দুপুর ২টার পর কোরবানি দেন, আবার কিছু প্রান্তীয় এলাকায় পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা কিছুটা কঠিন। এসব এলাকায় এবং নগরীর সব অলিগলি সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে পরিষ্কার করা হবে।

চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেম আজাদীকে বলেন, সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে পুরো শহর পরিষ্কার হয়ে গেছে। বর্জ্যবাহী গাড়ি নষ্ট হওয়ায় ১, ২৪, ও ৩৫ নম্বরসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে সাতটা হয়েছে। বাকিগুলোতে ৫টার মধ্যে শেষ হয়েছে। সবগুলো ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক থেকে ৪টার মধ্যে পরিষ্কার করা হয়। অলিগলিতে একটুৃ সময় লেগেছে। এবার নগরে আনুমানিক এক লাখ ৫৫ থেকে ৬০ হজার পশু জবাই করা হয়েছে বলেও ধারণা করেন তিনি।

চসিকের বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী আজাদীকে বলেন, এবারও নির্ধারিত সময়ে বর্জ্য অপসারণ করে আমরা সফল হয়েছি। কোথাও নগরবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পাইনি।

কোরবানের দিন নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৯টা থেকে বর্জ্য অপসারণে কাজ শুরু করে চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। মুরাদপুরসহ কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, আবর্জনা অপসারণের কর্পোরেশনের পানিবাহী গাড়ি থেকে পানি ছিটিয়ে সড়ক ও গলি পরিষ্কার করা হচ্ছে। এছাড়া ব্লিচিং পাউডারও ছিটিয়ে দেয় পরিচ্ছন্ন কর্মীরা।

নগরীর জেল রোড এলাকার বাসিন্দা সোলাইমান আজাদীকে বলেসন, বেলা ১ টার মধ্যে আমাদের এলাকার বর্জ্য পরিষ্কার হয়ে গেছে। মুরাদপুর, মুহাম্মদপুরেও কাছাকাছি সময়ে বর্জ্য অপসারণ করা হয় বলে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে। দ্রুত সময়ে কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ করায় অনেকে মেয়রকে ধন্যবাদও জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোরবানি দাতা কম, পূরণ হয়নি চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিশোধ নিলে বিএনপি-জামায়াতের অস্তিত্বই থাকত না : শেখ হাসিনা