সন্দ্বীপের রাতের আঁধারে সরকারি খাস জায়গা ও বেড়িবাঁধের বাইরে মাটি কেটে বিক্রি করছে কয়েকটি চক্র। সন্দ্বীপ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাত ১০ টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত আইন অমান্য করে এস্কেভেটর দিয়ে বেড়িবাঁধের বাইরের থেকে ফসলি জমির থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। উপজেলার প্রতিটি এলাকায় সিন্ডিকেট করে মাটি কাটা চলছে।
প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একাধিক চক্র রাতে মাটি কেটে বিক্রি করলেও প্রশাসন উদাসীন। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে দু’য়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করলেও তা আমলে নিচ্ছেন না মাটি ব্যবসায়ীরা। এসব অভিযান আর জরিমানা তার গায়ে মাখছেনা। এতে চুনোপুটিরা আইনের আওতায় আসলেও অধিকাংশ মাটিখেকো রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। গত ১৮ মার্চ উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ভূমি) সৈয়দ মুরাদ ইসলাম অবৈধ মাটি কাটার দায়ে ২ টি ট্রাক জব্ধ করে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, অবৈধ মাটি কাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে ট্রাক মালিকদের জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে। তবুও থামছে না মাটি কাটা।
২০–৩০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে ধীরে ধীরে ফসলি জমি পুকুরে পরিণত হচ্ছে। সন্দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে চর দিলেও এভাবে লাগামহীন মাটিকাটা হলে পুনরায় ভাঙন শুরু হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উপজেলার রহমতপুর, মগধরা, আজিমপুর, সন্তোষপুর, কালাপানিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সরকারি খাস জমি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ীরা রাতের সময়কে উত্তম সময় হিসাবে বেছে নিয়েছে।
এ বিষয়ে সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলনের সভাপতি হাসানুজ্জামান সন্দ্বীপী বলেন, বালিমহাল ও মাটিব্যবস্থাপনা আইন অতিক্রম করে দিনে রাতে মাটি কাটছে একটি চক্র। কাঁচারাস্তাগুলো ধ্বংস করে ও রোজাদারদের ঘুম হারাম করার পরও কেউ যেন দেখার নেই। উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরো বলেন, মাটিকাটা বন্ধে আমরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
অধিকাংশ এলাকায় প্রকাশ্যে রাতে ও দিনে দেদারসে মাটি কাটলেও রহস্যজনক কারণে ওসব স্থানে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয় না। এ বিষয়ে সন্দ্বীপ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন বলেন, মাটি কাটার জন্য এখন আর কেউ বলে কয়ে কাটে না। আমরা যতটুকু পারছি ব্যবস্থা নিচ্ছি। সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিগ্যান চাকমা বলেন, খাস জমির মাটি কাটা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। তবে ব্যক্তি নিজের জমিতে থেকে কী পরিমাণ মাটি কেটে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে সেটা আইনে পরিষ্কারভাবে বলা আছে। কিন্তু কোনো অবস্থায়ও সে মাটি বিক্রি করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, সার্বিক বিষয় জেনে তিনি সরকারি খাস জমি ও বেড়িবাঁধের বাইরের জমি থেকে মাটি কাটা ও বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবেন।