চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর একজন ঠিকাদারকে অপহরণ, মারধর, চাঁদা দাবি এবং মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ৬ জনকে আসামিসহ অজ্ঞাত ১৫-১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মিলাদ উদ্দিন মুন্না একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ঠিকাদার হিসেবে পিডিবির বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছেন। তিনি জানান, ২৭ জুন চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপে এসে অফিসিয়াল কার্যক্রম শেষে আনুমানিক বিকাল ৬টার দিকে সেনেরহাট তিন রাস্তার মোড়ে পৌঁছালে ১৫-২০টি মোটরসাইকেলযোগে একদল সন্ত্রাসী তাকে ঘিরে ফেলে।
অভিযুক্তরা হলেন আবদুল করিম, মো. জুয়েল, দিদারুল আলম জিল্লু, মঈনুল শুভ, শাহদাত হোসেন ও আলতাফ।
মামলার এজাহার সূত্রে আরও জানা গেছে, তারা দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার মোটরসাইকেল গতিরোধ করে এবং জোরপূর্বক তাকে অপহরণ করে মুছাপুর ধামের মাস্টারপাড়া স্কুলের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তারা ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়।
পরবর্তীতে স্থানীয়দের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোন (স্যামসাং S24 ও স্যামফোনি), একটি হাতব্যাগসহ যার মধ্যে ছিল ৮১,০০০ টাকা, ৭টি ব্যাংক কার্ড, “জেড.টি.আই কর্পোরেশন” এর ৬টি সাক্ষরবিহীন চেক ও ৩টি ব্যবসায়িক চেক (মোট ২.৫ লক্ষ টাকা মূল্যের) – সব লুট করে নেয়।
ভগ্নিপতি ও এজাহারের ১নং সাক্ষী নেছার উদ্দিন বাবলুর সহায়তায় তিনি সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।
এ বিষয়ে মিলাদ উদ্দিন মুন্না বলেন, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মূলত এ হামলা চালানো হয়েছে। আমার কাছ থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি মূলক ভিডিও ধারণ করতে চেয়েছে সন্ত্রাসীরা। আমি রাজী না হওয়াতে আমাকে এক ঘন্টা ধরে মারা হয়েছে। আমি এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহেদুল করিম কচি বলেন, মুন্না ঠিকাদারি ব্যবসার আগে চট্টগ্রামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালাতেন, সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কারণে তার পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হয়। তার উপর এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলা দুঃখজনক। যে সকল সন্ত্রাসী এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করছি।
চট্টগ্রাম উত্তরজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আলাউদ্দীন সিকদার বলেন, সন্দ্বীপে শুধু মাত্র মুন্নার হামলা ছাড়াও প্রতিদিন আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। প্রসাশন এর দায় এড়াতে পারে না। মুন্নার উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
এ বিষয়ে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন বলেন, মুছাপুর ধামে একজন তরুণ উদ্যোক্তা ও বিদ্যুৎ বিভাগের ঠিকাদার মিলাদ উদ্দিন মুন্নাকে আটকে রেখে তার উপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। প্রশাসনের কাছে জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি, এই ঘটনায় জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
এ বিষয়ে সন্দ্বীপ থানার অফিসার ইনচার্জ এ.কে.এম শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, “ঘটনার পরপরই মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”