কক্সবাজার সৈকত থেকে তুলে নিয়ে এক নারী পর্যটককে দুই দফা ধর্ষণের ঘটনা সন্দেহের দোলায় দুলছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ জনগণও বিশ্বাস করতে পারছেন না, কী করে এমন জনবহুল এলাকা থেকে এক নারীকে বিনা বাধায় জোর করে তুলে নিয়ে এক কিলোমিটার দূরের হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করতে পারে!
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, “কথিত ধর্ষণের ঘটনাটি সন্দেহের দোলায় দুলছে। ইতোমধ্যে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী স্বীকার করেছে যে, কথিত ধর্ষক আশিক তার পূর্ব পরিচিত। আদালতেও একই স্বীকারোক্তি দেয়া হয়েছে।”
এ মামলার তদন্তকারী সংস্থা কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহি উদ্দিন আহমেদ বলেন, “ভুক্তভোগী নারী এবং তার স্বামীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী তিন মাস ধরে কক্সবাজারে অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। এছাড়াও এ মামলার প্রধান আসামী আশিকুল ইসলামের সাথেও তার পূর্ব পরিচয় থাকার কথা তিনি স্বীকার করেছেন।”
তিনি জানান, আশিক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী এবং ১৬ মামলার আসামি। সে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। এ ধরনের একজন অপরাধীর (আশিকের) সঙ্গে বাইরের একজন নারীর পরিচয় থাকার বিষয়টি সন্দেহজনক। বিষযটি পুলিশ খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং ঘটনার গভীরে গিয়ে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছে।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহি উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, “ঘটনাটি শুধু একপক্ষের কথা শুনে তদন্ত করলে হবে না। আমরা উভয় দিক বিবেচনা করে তদন্ত কাজ চালাব।”
র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর দাবি, রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসা এক নারী হোটেলে তিন যুবকের হাতে ধর্ষণের শিকার হন। বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শহরের সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকত থেকে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে হত্যার ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে অপহরণের পর হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়। রাত ২টার দিকে র্যাবের একটি দল হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে।
ঘটনার ব্যাপারে বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীর স্বামী মামুন মিয়া বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় সাতজনের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা রুজু করেন।
মামলার আসামীরা হলো কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আবদুল করিমের ছেলে আরিফুল ইসলাম আশিক, মোহাম্মদ শফির ছেলে আব্দুল জব্বার জয়, বাবু ও রিয়াজউদ্দিন ছোটন সহ অজ্ঞাতনামা আরো তিনজন। তাদের মধ্যে হোটেল ম্যানেজার রিয়াজউদ্দিন ছোটন গ্রেফতারের পর এখন কারাগারে রয়েছে।
পুলিশ জানায়, ধর্ষণের শিকার নারীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তির পর তার ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
আজ শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) আদালতে তিনি ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতেও তিনি আশিকের সাথে পূর্ব পরিচয় থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে, নারী পর্যটক ধর্ষণের ঘটনায় সাধারণ মানুষও সন্দেহের দোলায় দুলছে। আজ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষের সাথে কথা বলেও এমন ঘটনা অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করেন তারা।
তারা বলেন, ওই নারী ধর্ষণের আগে ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়ের সামনে দিয়েই আশিকের সঙ্গে হোটেলে গিয়েছেন। পথে অসংখ্য মানুষ তাকে দেখেছে। দৃশ্যত: কোথাও তিনি বাধা দেননি। আসলে কক্সবাজার পর্যটন শহরে এভাবে একজন নারীকে ধর্ষণ করা কতটুকু সম্ভব তা নিয়েও প্রশ্নও তোলেন তারা।