চট্টগ্রামের দক্ষিণ রাউজান এখন ‘কিলিং জোন’ এবং ‘টক অব দ্যা টাউন’–এ পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে এখানে ‘সন্ত্রাস–নৈরাজ্য, গুম–খুন ও চাঁদাবাজি’ বন্ধে র্যাব ক্যাম্প স্থাপনসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে গতকাল লিখিতভাবে এ দাবি জানান তিনি। দাবিগুলোর মধ্যে আছে –দক্ষিণ রাউজান এলাকায় একটি র্যাব বা যে কোনো বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন করা, রাউজানে নিয়মিত সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশি টহল জোরদার করা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা। এছাড়া চতুর্থ দাবিতে বলা হয়, ফ্যাসিস্ট সরকারের আত্মগোপনকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারপূর্বক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করার ব্যবস্থা করা হোক।
দাবিগুলোসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রাউজান উপজেলার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। অন্যথায়, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দেয়া পত্রে দাবি করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত দাবি জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী আজাদীকে বলেন, পাখির মত মানুষ মারছে রাউজানে। জাতীয়তাবাদী দলে অনুপ্রবেশকারীরা এসব করছে। কারা এসব অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছে সেটা সবাই জানে। কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না। তাই রাউজানে জুলাই–২০২৪ পরবর্তী চলমান এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বন্ধ করার লক্ষ্যে এবং এলাকাবাসীর জান–মালের নিরাপত্তা বিধানে কিছু দাবি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেছি। এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দেয়া দাবি সম্বলিত লিখিত পত্রে রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, রাউজান উপজেলা চট্টগ্রাম জেলার সামপ্রদায়িকতা মুক্ত ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভরা এক অনন্য জনপদ। রাউজান এলাকার জনসাধারণ বিগত দীর্ঘ ১৭ বছর ফ্যাসিস্টদের অত্যাচারে এক নারকীয় বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে দিনাতিপাত করেছিল। চট্টগ্রামের ফ্যাসিবাদের অন্যতম গডফাদার, চট্টগ্রামের জুলাই–২০২৪ গণহত্যার মূল মাস্টারমাইন্ড ও একাধিক গণহত্যার সাথে জড়িত সাবেক এমপি ফজলে করিম রাউজানকে অবৈধ অস্ত্রের মিনি ক্যান্টনমেন্টে পরিণত করেছিল। গুম–খুন, রাহাজানি, অত্যাচার, যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, ভূমি জবর দখল, সংখ্যালঘুর উপর নির্যাতন, রাউজানের সাধারণ মানুষকে বিতাড়ণসহ এমন কোনো ঘৃণ্য কাজ নেই যা এই স্বৈরাচার এমপি করেনি।
গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী লিখিত পত্রে দাবি করেন, ফজলে করিমের কালো ইতিহাস শেষ হওয়ার পর, জুলাই–২০২৪ বিপ্লব পরবর্তী সময়ে রাউজানে স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরে এসেছিল। কিন্তু হঠাৎ অজানা কারণে গত কয়েক মাস যাবত দক্ষিণ রাউজান এলাকায় আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। প্রতিনিয়ত এ এলাকায় গুম–খুন, অস্ত্রের মহড়া, লুটপাট, চাঁদাবাজি, গোলাগুলি ও সন্ত্রাসীদের দৌরাত্বে এলাকাবাসীর মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে। সমপ্রতি আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টরা রাউজানের জাতীয়তাবাদী দলে ঢুকে রাউজানে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে সমগ্র চট্টগ্রাম ও দেশজুড়ে দক্ষিণ রাউজান এলাকাটি এখন কিলিং জোন এবং টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে রাউজানে খুনের ঘটনা বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ বিরোধ থেকেই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। খুন হওয়াদের বেশির ভাগই বিএনপি ও তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।