উখিয়ায় কুতুপালং-১ ইস্ট ও ২ ওয়েস্ট ক্যাম্পে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে সন্ধ্যা নামলেই শত শত রোহিঙ্গা দা, খন্তি, লাটিসোটা নিয়ে রাস্তায় নামছেন। এদিকে গত কয়েকদিনের ঘটনায় উখিয়া থানায় ২টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ ও র্যাব পৃথক অভিযান চালিয়ে এসব ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল কুতুপালং-১ ইস্ট ও ২ ওয়েস্ট ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পের মূল জংশন চার রাস্তার মোড়ের লম্বাশিয়া বাজারের ৪/৫শ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। পুলিশ কাউকে বাজারের আশেপাশে অবস্থান নিতে দিচ্ছে না। দেশি-বিদেশী সেবা সংস্থার লোকজনকেও সেখানে দেখা যায়নি। ক্যাম্প-২ ওয়েস্টের একটু ভেতরে তাবলীগ জামায়াতের একটি মসজিদ। যেটিকে রোহিঙ্গারা মারকাজ নামে চেনে। মারকাজের ভেতর ও বাহিরে কয়েকশ রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষের জটলা দেকা যায়।
কথা হয় এক সন্তানের জননী রমিদার সাথে। তিনি জানান, গত সোমবার ৬নং ক্যাম্প থেকে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তার স্বামীকে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে গেছে। রমিদার মতো অন্তত শ’খানেক মহিলা জানান, তারাও বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে মারকাজে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। আবুল কালাম (৫০) নামে একজন জানান, তিনি ও তার মত শতাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ভয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের কারো ছেলে, কারো স্বামী, কারো ভাইকে সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে কাউকে কাউকে মোটা অংকের মুক্তিপণের বিনিময়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও অনেকের কোনো খোঁজ মিলছে না।
লম্বাশিয়া বাজারে দায়িত্বরত এপিবিএনের এএসআই আবদুর রহমান জানান, আশপাশের রোহিঙ্গা পুরুষরা সন্ধ্যার পরে থেকে ভোর পর্যন্ত রাস্তায় জটলা বেঁধে অবস্থান নেন। কখন কারা কাদের ওপর হামলা চালান তা বলা যায় না।
ক্যাম্প-২ ওয়েস্ট এর বাসিন্দা মাহমুদ উল্লাহ জানান, বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে নিরাপত্তার অভাবে অনেকে মারকাজে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। মারকাজে আশ্রিতদের তুলে নিতে সন্ত্রাসীরা বারবার হামলা করছে।
উল্লেখিত ২টি ক্যাম্পসহ ৫টি ক্যাম্পের প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত উপ সচিব মো. খলিলুর রহমান খান বলেন, মূলত রোহিঙ্গাদের ভাষায় আরসা ও মুন্না গ্রুপের মধ্যে ইয়াবা ব্যবসা, লোকজন অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে হামলা, পাল্টা হামলা চলছে।
কুতুপালং এপিবিএন ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক সালে আহমেদ পাঠানও একই কথা জানান। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে এপিবিএন সদস্যরা। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ বলেন, ক্যাম্পের সংঘটিত ঘটনায় ৪টি মামলা হয়েছে। দিনের বেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও রাতে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তবে সব মিলিয়ে এখন পরিবেশ অনুকূলে রয়েছে।