ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুন লাগার পর দুই সন্তানকে নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে যান দগ্ধ জিয়াসমিন। দুই সন্তানসহ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়; পথেই সাত বছরের মেয়ে মাহিনুরকে হারান তিনি। ১০ বছরের ছেলে তামিম ও মৃত মেয়েকে নিয়ে মাওয়া লঞ্চঘাট থেকে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিউটে আসেন জিয়াসমিন। সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। খবর বিডিনিউজের।
হাসপাতালের আবাসিক সার্জন আইউব হোসেন জানান, তামিমের শরীরের ৩০ শতাংশ ও জিয়াসমিনের ১২ শতাংশ পুড়েছে। তার মামা মামুন জানান, অসুস্থ নানিকে দেখার জন্য এ মাসের শুরুর দিকে বরগুনা থেকে স্বামী আব্দুল খলিল ও দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যায় আসেন ২৮ বছর বয়সী জিয়াসমিন। তিনি বলেন, ১০-১২ দিন আগে তার নানি মারা যান। ব্যবসার কাজে স্বামী আগেই বরগুনা চলে যান। বৃহস্পতিবার রাতে জেসমিন তার দুই সন্তানকে নিয়ে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে রওনা হয়।
‘রাতে ওই লঞ্চে আগুন লেগে গেলে কোনোরকম সন্তানদের নিয়ে থেকে বের হন, কিন্তু ততোক্ষণে তাদের শরীরে অনেকাংশই পুড়ে যায়। জেসমিনের মেয়ে মাহিনুরের পুরো শরীর ঝলসে যায়। মাওয়া লঞ্চ ঘাটে মাহিনুর মারা যায়।’
চিকিৎসকরা জানান, জেসমিনের মুখ-হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে; তামিমের হাত-পা-মুখ পুড়ে গেছে।
তার মামা মামুন বলেন, সন্তানের জন্য আহাজারি করছে জেসমিন, কোনো কিছু বলেই তাকে থামানো যাচ্ছে না। তারও শরীরের অনেকখানি পুড়ে গেছে। তার আরেকটা বাচ্চাও পোড়া ক্ষত নিয়ে কাতরাচ্ছে। এক আগুনে ছারখার হয়ে গেল পরিবারটা। জিয়াসমিন ছয় মাসের গর্ভবতী বলেও তার মামা মামুন জানান। অভিযান-১০ লঞ্চে দগ্ধ আরও এক পরিবারের আরও চারজনকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছে।
পুতুলের পরিবারের ৬ জনের খোঁজ নেই : এদিকে পরিবারের ৯ সদস্য মিলে বরগুনায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন ঢাকার মাদারটেকের পুতুল বেগম। গভীর রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগার পর চিৎকারে তার ঘুম ভাঙে।
ঘুম থেকে উঠে পরিস্থিতি বুঝতে পেরেই পুতুল লাফিয়ে পড়েন নদীতে, কিন্তু তার আগেই আগুনের শিখায় পুড়ে যায় শরীরের বিভিন্ন অংশ। এখন তিনি বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। গতকাল দুপুর পর্যন্ত পরিবারের আরও দুই সদস্যের খোঁজ পেয়েছেন পুতুল বেগম, কিন্তু বাকি ছয় জনের কোনো খবর তিনি এখনও জানেন না।
রাতের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, তারা সবাই নিচতলার ডেকে এক জায়গায় ছিলেন। রাত তখন অনেক, সবাই ছিলেন ঘুমের মধ্যে।
‘হঠাৎ আগুন আগুন চিৎকার শুনে আমি লাফিয়ে পড়ি। অন্যরাও যে যার মত লাফিয়ে পড়ে। এরপর আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’ নিজের দুই সন্তান, মা, স্বামী, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী মিলে পরিবারের মোট ৯ সদস্য বরগুনায় বোনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন বলে জানালেন পুতুল।