‘সন্তানকে’ বেচতে এসে গাবতলীতে আবেগাপ্লুত রমিসা

| রবিবার , ১৬ জুন, ২০২৪ at ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর গাবতলীর হাটে এক নারী বিক্রেতা এসেছেন যিনি যে গরুটিকে নিয়ে এসেছেন তাকে নিজের একটি ‘সন্তান’ বলে তুলে ধরেছেন। গতকাল শনিবার কয়েক ঘণ্টা ধরে তার সঙ্গে সেই ‘সন্তানের’ যে আবেগের সম্পর্ক দেখা গেল, তা ছুঁয়ে গেছে হাটে আসা ক্রেতাদেরও।

খুলনার ডুমুরিয়ায় রমিসা বেগমের বাড়িতেই জন্ম গরুটির। চার বছর এক মাস ধরে পেলে পুষে দুজন দুজনার হয়ে গেছেন। গরুটি বাধা থাকা অবস্থায় কখনো রমিসার কাঁধে মাথা রাখছিল, কথনো তার ওড়না মুখে ধরে রাখছিল। এটা স্পষ্ট প্রাণীটি তাকে বেশ মায়া করে। রমিসাও চোখে পানি নিয়ে বিক্রেতার অপেক্ষায় ছিলেন। খবর বিডিনিউজের।

গরুটির নাম রাখা হয়েছে নুন্টু, তার মায়ের নাম ঘণ্টু। রমিসার দাবি, নুণ্টু তার কথা বোঝে, এমনকি হাসতে বললে হাসেও। বিশ্বাস হচ্ছিল না মানুষের। কিন্তু রমিসা সেই বলেছেন, ‘নুণ্টু হাস তো’। গরুটি দাঁত বের করে দিল, সেটি হাসি বলেই ধরে নিল সবাই। ফ্রিজিয়ান জাতের কালো রঙের শংকর গরুটি আকারে বিশালই না কেবল, বেশ হৃষ্টপুষ্টও। এর লাইভ ওয়েইট ৩৭ থেকে ৩৮ মণ। দেখা গেল রমিসা একবার তার গরুকে চুমু খাচ্ছেন, আবার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। আবার ব্রাশ দিয়ে মাথার লোম আঁচড়ে দিচ্ছেন। নুন্টুও যেন রমিসার সঙ্গে ভাববিনিময় করছে। একবার কোলে গরু মাথা রাখছে, আবার মুখ চাটছে।

অনেক ক্রেতাই নুন্টুকে দেখতে এসে মাথায় হাত বুলায়, গায়ে হাত দেয়। তখন কিছুটা রাগ দেখায় নুন্টু। অপরিচিত জনদের আদর সে খুব একটা নিতে চায় না। কিন্তু রমিসা আদর করলে যেন দাঁত বের করে হাসে।

নুন্টু যখন রমিসার কোলে মাথা ঠেকালো তখন রমিসার চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। টাকার প্রয়োজনে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। না হয় বিক্রি না করার ইচ্ছা ছিল না, কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন তিনি। রমিসা বলেন, আমি তাকে আমার সন্তানের মতোই পেলেছি। সন্তানের জন্য যেমন মায়া, এই নুন্টুর জন্যও ঠিক তেমন মায়া আমার। অতি আদরের এই গরু আমাকে দেখলে খুশিতে হাসে। জীবনে কখনও মারি নাই তাকে। একটু জোরে কথা বললেই সে বোঝে আমি রাগ করছি। নুন্টুকে গমের ভুসি, ভুট্টার গুঁড়ো, খড়, ঘাস খাওয়ানো হতো। বেশিরভাগ সময় খাবার দিয়েছেন রমিসাই।

রমিসা ও নুন্টুর মধ্যে এই সম্পর্ক অবাক করেছে গরু দেখতে আসা অন্য ক্রেতাদের। একজন বলছিলেন, এমন তো এর আগে কখনো দেখিনি। সত্যিই বিষয়টা অবাক করার মতো।

বুধবার রাতে ডুমুরিয়া থেকে গরুটি বিক্রির জন্য রমিসার স্বামী মোজাহার আলী শেখ, ছেলে আল শাহরিয়ার জয় ও শ্বশুর মতিন শেখ ঢাকায় আসার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। কিন্তু তারা নুন্টুকে ট্রাকে তুলতে ব্যর্থ হন। পরে রমিসাও প্রস্তুত হয়ে ট্রাকে উঠেন। তাকে দেখা মাত্র গরুটি সহজেই ট্রাকে উঠে এল।

মোজাহার বলেন, আমার স্ত্রী না আসলে নুন্টুকে গাড়িতেই ওঠানো সম্ভব ছিল না, ঢাকায় আসা তো দূরের কথা। নিজের সন্তানের মতোই এটাকে আদর করে আমার স্ত্রী। করোনার সময় জন্ম হয় এটার। আমার ছোট মেয়ে শখ করে এর মায়ের নাম রেখেছিলেন ঘন্টু। আর বাচ্চাটার নাম মায়ের নামের সঙ্গেই মিলিয়ে রেখেছিল নুন্টু।

রমিসার স্বামী মোজাহার আলী শেখ গরুটির দাম চাইছেন ১২ লাখ টাকা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দাম উঠে আট লাখ টাকা। প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম মিলছে না জানিয়ে মোজাহার বলেন, বাড়িতেই আট লাখ টাকা দাম হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য হাটে এনে সেই একই দাম শুনছি। এই হাটে খুলনা থেকে নুন্টুকে আনা ও আনুষঙ্গিক সব মিলিয়ে আমার অনেক খরচ হয়েছে। অন্তত সেই খরচ তো উঠতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় মহিষের হামলায় আহত ৪, ভাঙলো বাইসাইকেল
পরবর্তী নিবন্ধবাড়ছে জেলিফিশ বিশ্ব সামুদ্রিক কাছিম দিবস আজ