সদস্য পদে যেন তারুণ্যের জোয়ার

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২৩ at ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনে সবচাইতে বেশি পদ নির্বাহি সদস্য (সাধারণ)। এখানে ১৩টি পদ রয়েছে। আর এই ১৩ পদের বিপরীতে এবারে প্রার্থী হয়েছে ২৮ জন। গতকাল আদালতের রায়ে এম এ মুছা বাবলুর প্রার্থীতা বাতিল হয়ে গেছে। ফলে এই পদে এখন প্রার্থী রয়েছে ২৭ জন। যেখান থেকে নির্বাচিত হবেন ১৩ জন। এই ২৭ জন প্রার্থীর মধ্যে গত কমিটির রয়েছেন আট জন। তারা হলেন আবদুল হান্নান আকবর, মোহাম্মদ শাহজাহান, গোলাম মহিউদ্দিন হাসান, জহির আহমেদ চৌধুরী, দিদারুল আলম, নাসির মিয়া, হাসান মুরাদ বিপ্লব এবং হারুন আল রশিদ। আর নতুন প্রার্থী হয়েছেন অনুপ বিশ্বাস, আলমগীর পারভেজ, আখতারুজ্জামান, এ এস এম ইকবাল মোরশেদ, এ এস এম সাইফুদ্দিন চৌধুরী, এনামুল হক, কল্লোল দাশ, ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন, দিদারুল আলম মাসুম, . নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, প্রবীন কুমার ঘোষ, মুজিবুর রহমান, রাশেদুর রহমান মিলন, রায়হান উদ্দিন রুবেল, শওকত হোসাইন, সাইফুল আলম খান, সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর, সুমন দে, সাহেলা আবেদীন রীমা।

আবদুল হান্নান আকবর ক্রিকটে খেলেছেন প্রায় ২৫ বছর। তবে কাউন্সিলর হিসেবে এসেছেন দেরিতে। ২০০৭ সালে তিনি কাউন্সিলর। তবে ২০০৩ সাল থেকে তিনি ক্রিকেট সম্পাদক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথম নির্বাহি সদস্য। এরপর থেকে টানা চারবার তিনি এই পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এবার হলে পাঁচবার হবে। তিনি আম্পায়ার এন্ড স্কোরার্স এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্টে পালণ করেছেন দায়িত্ব। ছিলেন ক্রিকেট বোর্ডের আম্পায়ার্স কমিটির সদস্য সদস্যও। ক্রিকেট নিয়েই তার ধ্যান জ্ঞান।

মোহাম্মদ শাহজাহানের ক্যারিয়ার শুরু একজন ফুটবলার হিসেবে। খেলেছেন রাইজিং স্টার, কাস্টমস এস সি, আবাহনী, ঢাকা লিগে ধানমন্ডী ক্লাব সহ চট্টগ্রাম জেলা ও বিভাগীয় দলে। খেলা শেষে রাইজিং স্টার ক্লাবের হয়ে আসেন জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। গত নির্বাচনে হন নির্বাহি সদস্য। পান ফুটবল সম্পাদকের দায়িত্বও। আর সে দায়িত্ব পাওয়ার পর চেষ্টা করেছেন ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়ার। বিশেষ করে অনূর্ধ্ব১২ ফুটবল এবং ফুটবলারদের বিশেষ ক্যাম্প করে চেষ্টা করেছেন ফুটবলার সৃষ্টি করতে। জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করছেন বেশ কয়েক মেয়াদে। চট্টগ্রাম আবাহনী লিঃ এর পরিচালকের দায়িত্বও পালণ করছেন তিনি। ফুটবল নিয়ে তার পথ চলা। তার দুটি ক্লাব খেলেছে চট্টগ্রামের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ফুটবলেও খেলে প্রথম বিভাগে। সাবেক এই ফুটবলারের স্বপ্ন চট্টগ্রামের ফুটবলকে একটি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। এমন একটি সিস্টেম চালু করা যেখান থেকে বেরিয়ে আসবে মান সম্মত ফুটবলার।

গোলাম মহিউদ্দিন হাসান ক্রিকেটার থেকে সংগঠক। দীর্ঘ দিন খেলেছেন ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বিভিন্ন দলের হয়ে। খেলেছেন জেলা দলে। খেলা শেষে জেলা ক্রীড়া সংস্থায় আসেন ওপিএ এর কাউন্সিলর হয়ে। জেলা ক্রীড়া সংস্থায় বাস্কেটবল কমিটির চেয়ারম্যান, ক্রিকেট কমিটির যুগ্ম সম্পাদকও। ২০১১ সালে প্রথম নির্বাহি সদস্য নির্বাচিত হন। সেই থেকে টানা তিনবার তিনি এই পদে আছেন। এবার চতুর্থবারের মত নির্বাচিত হওয়ার পালা। গত নির্বাচনের আগে তিনি চিটাগাং রয়েল এর প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। এবারেও সে ক্লাবেরই প্রতিনিধি তিনি।

জহির আহমেদ চৌধুরী চট্টগ্রামের দক্ষ একজন ফুটবলার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, মোাহমেডান সহ খেলেছেন বিভিন্ন ক্লাবে এবং জেলা দলে। খেলা শেষে মোহামেডানের হয়ে আসেন জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। পালন করেন ফুটবল সম্পাদেকর দায়িত্ব। একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন নির্বাহী সদস্য হিসেবে। এবারেও তিনি আছেন নির্বাহি সদস্য পদে প্রার্থী হিসেবে।

হাসান মুরাদ বিপ্লব ফুটবলার থেকে সংগঠক। জেলা প্রশসকের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি আসেন জেলা ক্রীড়া সংস্থায় ২০১৫ সালে। গত নির্বাচনে নির্বাচিত হন নির্বাহী সদস্য হিসেবে। বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের নির্বাহি সদস্য বিপ্লব এবারেও প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন নির্বাহী সদস্য পদে।

দিদারুল আলম গতবার উপ নির্বাচনে নির্বাহী সদস্য নির্বাহি সদষ্য নির্বাচিত হন। অবশ্য তার আগে থেকেই তিনি ব্যাডমিন্টন কমিটির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একাধিক জাতীয় ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা আয়োজনের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। একাধিকবার ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য এবং যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালণ করেন। আবারো তিনি নির্বাহী সদস্য প্রার্থী। মোহাম্মদ নাসির মিয়া গত নির্বাচনে কল্লোল সংঘের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন। এবারেও তিনি একই পদে প্রার্থী। বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন তিনি। হারুন আল রশিদ গত নির্বাচনে উপজেলা কোটায় সদস্য নির্বাচিত হলেও এবার তিনি নির্বাচন করছেন বিসিআইসি ক্রীড়া সংসদের প্রতিনিধি হিসেবে সাধারন সদস্য পদে।

এবারের নির্বাচনে একঝাক নতুন কাউন্সিলর নির্বাচন করছেন সদস্য পদে। এদের মধ্যে অনুপ বিশ্বাস দাতা সদস্য হিসেবে কাউন্সিলর। তিনি চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে একাধিক ইভেন্টের স্পন্সর। আলমগীর পারভেজ একজন ব্যাবসায়ী এবং ক্রীড়া সংগঠক। গত দুই মেয়াদে তিনি মোহামেডানের কাউন্সিলর। তবে এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আখতারুজ্জামান ফুটবলার থেকে কাউন্সিলর। নিজেদের ক্লাব ইয়ং স্টার এবং ইয়ং স্টার ব্লুজ এক সময় খেলোয়াড় সৃষ্টির অন্যতম মঞ্চ ছিল। ফুটবল কমিটির যুগ্ম সস্পাদক তিনি। যেকোন দায়িত্ব তিনি পালন করেন অত্যন্ত দক্ষতা এবং দায়িত্বশীলতার সাথে। এ এস এম ইকবাল মোরশেদ। দীর্ঘ দিন ধরে ক্রীড়াঙ্গনের সাথে যুক্ত। গত নির্বাচনে তিনি ছিলেন দাতা সদস্য। এবারে তিনি আবাহনী লিঃ এর কাউন্সিলর। তিনি একাধিক সাব কমিটির সাথেও যুক্ত। এ এস এম সাইফুদ্দিন চৌধুরী একজন বডি বিল্ডিার। সে সাথে সিজেকেএস বডি বিল্ডিং কমিটির সম্পাদকও। এক সময়ের বেঙ্গল ক্লাব কিনে নিয়ে তারা সেটিকে করেছেন ইউনাইটেড স্পোর্টিং ক্লাব। সে ক্লাবের প্রতিনিধি হয়ে এবারে নির্বাহি সদস্য পদে লড়ছেন সাইফুদ্দিন। এনামুল হক চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের অতি পরিচিত এক মুখ। খেলতেন ফুটবল। বিভিন্ন ক্লাব গঠন করে খেলাতেন কিশোর এবং পাইওনিয়ার ফুটবলে। গতবার উপ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আগ্রাবাদ নওজোয়ান গ্রীনের কাউন্সিলর এনামুল হক জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্যারম সম্পাদকও। কল্লোল দাশ একজন জেলা দলের হ্যান্ডবল খেলোয়াড়। খেলা ছেড়ে তিনি শহীদ শাহজাহান সংঘের পক্ষে দুইবারের কাউন্সিলর। এবারে প্রথম নির্বাচন করছেন। সংস্থার হ্যান্ডবল সম্পাদকও তিনি। এছাড়া নতুন একাধিক ইভেন্টেরও দায়িত্ব পালন করছেন কল্লোল। এবারের নির্বাচনে নতুনদের মিছিলে তিনিও একজন। ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন ২০১৫ সালে নির্বাহি সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন উপজেলা কোটায়। এবার তিনি রাফা ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে এসেছেন নির্বাচনে অংশ নিতে। দিদারুল আলম মাসুম রিজেন্সী স্পোর্টস ক্লাবের প্রতিনিধি। প্রথমবারের মত নিবাচনে অংশ নিচ্ছেন। ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু সাবেক ফুটবলার এবং ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির সভাপতি। প্রথমবার এসেছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থায় উদয়ন সংঘের প্রতিনিধি হয়ে। আর প্রথমবারই অংশ নিচ্ছেন নির্বাচনে। প্রবীন কুমার ঘোষ উল্লাস ক্লাবের প্রতিনিধি দ্বিতীয়বার তিনি নির্বাচনে লড়ছেন। মুজিবুর রহমান সিএফসি প্রতিনিধি। প্রথমবারের মত এসেছেন নির্বাচনে। তার চাচা এস এম কামাল উদ্দিন ছিলেন এই সংস্থার প্রথম নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক। রাশেদুর রহমান মিলন কর্ণফুলি ক্লাবের প্রতিনিধি। বেশ দক্ষতার সাথে তারা দলটি পরিচালনা করেন। প্রথমবারের মত তনিও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। রায়হান উদ্দিন রুবেল গত দুই মেয়াদে গোসাইলডাঙ্গা যুবক গোষ্ঠীর কাউন্সিলর। নতুনদের মিছিলে তিনিও এবার প্রথম নির্বাচনে লড়ছেন। শওকত হোসাইন গত তিন মেয়াদে বার্ডস ক্লাবের প্রতিনিধি। তারও আগে থেকে তিনি সিজেকেএস ক্রিকেট কমিটির যুগ্ম সম্পাদক। ক্রিকেটের আইন কানুনের প্রতি তার যতেষ্ট জ্ঞান। আম্পায়ার্স এসোসিয়েশনের অতিরিক্তি সাধারন সম্পাদকও তিনি। চট্টগ্রামের ক্রিকেটের নান আয়োজনের সাথে দীর্ঘ দিন ধরে তিনি জড়িত। দেশের শীর্ঘ স্থানীয় একজন আন্তর্জাতিক স্কোররাও। সাইফুল আলম খান দুই মেয়াদে বক্সিরহাট ইয়ংম্যান্স ক্লাবের প্রতিনিধি। নতুনদের মধ্যে তিনি আরেকজন নির্বাহি সদস্য প্রার্থী। সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর প্রথমবারের মত জেলা ক্রীড়া সংস্থায় এলেও তিনি এখন সকলের প্রিয়। নানা ইভেন্ট স্পন্সর করে এরই মধ্যে তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার পাশে দাড়িয়েছেণ। তার স্পন্সরে আয়োজিত হয়েছে দেশে প্রথমবারের অনূর্ধ্ব১২ ফুটবল টুর্নামেন্ট। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের ফুটবল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করলেও তিনি সাড়া দেন সবার ডাকে। জেলা ফুটবল দলের সাথে জড়িয়েছেন নিজেকে। যেকোন ইভেন্টে তাকে ডাকলে তিনি স্বানন্দচিত্তে হাত বাড়িয়ে দেন। এক সময় ঝিমিয়ে পড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে জাগিয়ে তুলেছেন তানসীর সহ কয়েকজন তরুন মিলে। এবারের নির্বাচনে তিনিও নির্বাহি সদস্য প্রার্থী। সুমন দে গত দুই মেয়াদে শতদল ক্লাবের স্টেডিয়াম প্রতিনিধি। তিনি একাধিকবার তায়কোয়ান্ডো ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। শতদল ক্লাবের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানও। তার নেতৃত্বে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পদক নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ তায়কোয়ান্ডো দল। এবারের সিজেকেএস নির্বাচনে সবচাইতে চ্যালেঞ্জিং পদ হচ্ছে নির্বাহি সদস্য পদ। যেখানে নতুন এবং পুরাতন মিলে একাকার। ২৭ জনের মধ্য থেকে নিশ্চয়ই সঠিক ব্যক্তিটিকেই বেছে নেবে ভোটাররা। যাদের দিয়ে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের উপকার হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনানাকে হারালেন পরীমনি
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ১১.৮০ কোটি টাকা