প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়। এটাকে যদি শতাংশে হিসাব করি, তবে তা মোট জিডিপির ১.৫ শতাংশের বেশি। এটা তো শুধু আর্থিক হিসাবের কথা বললাম। একটা কর্মক্ষম ব্যক্তি যদি কোনো পরিবারের মারা যায়, তাহলে তো পুরো পরিবার ধ্বংস। গতকাল শনিবার দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনালে বিআরটিএর আয়োজনে সড়ক নিরাপত্তামূলক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিআরটিএর নেওয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন তিনি। খবর বাংলানিউজের।
ই–ড্রাইভিং লাইসেন্সই মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স : নানা সীমাবদ্ধতার কারণে হার্ডকপি ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ই–ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে হার্ড কপির জন্য কেউ মরিয়া যেন না হয়। এটা ওয়েল সার্কুলেটেড। ই–ড্রাইভিং লাইসেন্সই মূল ড্রাইভিং লাইসেন্স। এটা মোবাইলে প্রদর্শন করে গাড়ি চালনা করা যাবে। কেউ যদি মনে করেন পুলিশ এটা মানছে না, ই–ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখানোর পরও পুলিশ আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাহলে নির্দিষ্ট করে সেই পুলিশের নাম, ফোন নাম্বার লিখে আমাদেরকে জানালে আমরা কিন্তু পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেটা নিয়ে লিখব। যদি কোনো পুলিশ সদস্য এটা না জানে সেটা আইনের লোক হিসেবে তার ব্যর্থতা। সেটার জন্য ওই পুলিশ সদস্য দায়ী থাকবে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের সমস্যা আছে তারিখ দেওয়া বন্ধ করে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মতো করে সার্ভিস দেওয়ার জন্য বিআরটিএ কর্মকর্তাদের আহবান করছি।
ডোপ টেস্ট সহজ করা হচ্ছে : গাড়ি চালকদের লাইসেন্স পেতে ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া আরও সহজ করা হচ্ছে জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের প্রস্তাবে ডোপ টেস্ট ডিজিটাল করার প্রস্তাব এসেছে। ডোপ টেস্ট নিয়ে প্রথমে আমরা কিছু সমস্যা ফেস করেছিলাম। এখন এটা নাই বললেই চলে। আমরা কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে একাধিক মিটিং করে একটা অ্যাপস প্রস্তুত করেছি। এটা এখনো চালু হয়নি। চালু হলে বারবার অফিসে যেতে হবে না।
অভিযান অব্যাহত থাকবে : সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, চালকরা স্বেচ্ছায় একটা পিঁপড়াও মারতে চায় না। কিন্তু নানা পারিপার্শ্বিক কারণে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। সড়কে যান চলাচল ব্যতীত পাটকাঠি শুকানো বা অন্য যেকোনো কাজে ব্যবহার করা বেআইনি। এজন্য সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। জেলা উপজেলায় সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোকে আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের বিভিন্ন অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম চালু আছে। শুক্রবারও সারা দেশের ৬৪টি জেলায় আমরা ওভারস্পিড নিয়ন্ত্রণে ৪০৫টি মামলায় ১০ লাখের বেশি টাকা জরিমানা করেছি। এই অভিযান প্রতিদিনই চলমান থাকবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি পেলেই ডাম্পিং করার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, গাড়ির রোড পারমিট অবশ্যই আপ টু ডেট থাকতে হবে। সেটার জন্য আমাদের যা যা করা দরকার আমরা বসে করব। কোনোভাবেই সড়কে রুট পারমিটবিহীন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে নামা যাবে না।
টার্মিনালভিত্তিক ট্রেনিং ব্যবস্থা চালু হচ্ছে : চালকদের টার্মিনলভিত্তিক ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা ট্রেনিংয়ের কথা বলেছেন। পেশাদারদের ট্রেনিং ব্যবস্থা চালু আছে। আর ব্যাপক ট্রেনিংয়ের জন্য আমরা চিন্তা করেছি টার্মিনালভিত্তিক ট্রেনিং দেব। এ ধরনের অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম ঘন ঘন করব। যাতে চালক, যাত্রী থেকে শুরু করে সকল স্টেকহোল্ডাররা আরও বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল হয়।