সমাজের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা যদি সড়ক দুর্ঘটনার কারণের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে তাদের বিচার হয় না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্র্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন প্রয়োজন।
পূর্বাচল উপশহরের ৩০০ ফুট সড়কে বৃহস্পতিবার গভীররাতে প্রাইভেট কারের চাপায় রূপগঞ্জ পুলিশের চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে থাকা বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদ মারা যান। ঘটনার সময় প্রাইভেট কারটি চালাচ্ছিলেন মুবিন আল মামুন, তিনি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছেলে।
সেই প্রসঙ্গ ধরে গতকাল শনিবার প্রেস ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে নাহিদ বলেন, বুয়েটের একজন মারা গেল। একটা ধারণা যে সমাজের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যারা আছেন তাদের বিচার হয় না, জবাবদিহি হয় না। এখানে সাধারণ মানুষদের জীবনটা আসলে যায়। এই চিত্র আমাদের সমাজে আছে। এটার পরিবর্তন দরকার। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন আয়োজিত সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত সংস্কার বিষয়ে জাতীয় সংলাপে নাহিদ কথা বলছিলেন। যেখানে সড়ককেন্দ্রিক বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও পরিবহন খাতের অংশীজন উপস্থিত ছিলেন। পরিবহন খাতের দুর্নীতি চলমান আছে মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, আগের দল দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল আবার এখন আরেক দল রয়েছে। দুর্নীতি বন্ধের তাগিদ দিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভুমিকা প্রয়োজন। কারণ রাজনৈতিক কর্মীরাই এগুলোর সঙ্গে জড়িত। এখানে দুর্নীতির, রাজনীতিকরণের এবং জনসচেতনতার সমস্যা রয়েছে। আমাদের অদক্ষতা ও নিয়ম নীতি না মানার বাস্তবতা আছে। এখানে বহুমাত্রিক সমস্যা তাই এটার সমাধানও চ্যালেঞ্জের। সব অংশীদারজনদের একত্রে আনতে হবে। এখানে রাজনৈতিক চাপ থাকবে। এখানে একটা সুবিধাভোগী গোষ্ঠী জড়িত।
নাহিদের ভাষ্য, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ছিল সবার জন্য মূল ভিত্তি। সে সময় স্কুল কলেজের দুইজন শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে এই আন্দোলন শুরু হয়। মানুষের দীর্ঘদিনেয় একটা ক্ষোভ ছিল। নিরাপদ সড়ক না থাকায় মানুষের ভোগান্তি ছিল। ওই আন্দোলন সেসময় সহিংসভাবে দমনের চেষ্টা করেন সেই সময়ের সরকার। বিগত ১৫–১৬ বছর আমরা উন্নয়নের একটা গল্প শুনেছি। ব্যাপক উন্নয়ন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের একটা ন্যারেটিভ।
নাহিদ বলেছেন, এত উন্নয়ন হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু নিরাপদ সড়ক নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। উন্নয়ন জনকল্যাণমূলক হয়নি বর্ণনা করে তিনি বলেন, এই উন্নয়নের সঙ্গে মানুষের নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা যোগ হয়নি। কাঠামোগত উন্নয়ন দেখানো হচ্ছে। সেইসব উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের, নিরাপদ সড়কের সম্পর্ক ছিল না।
সংলাপে বিআরটিএর চেয়ারম্যান ইয়াসীন বলেন, বিআরটিএ ও পুলিশ সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হিমশিম খাচ্ছে। কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। ফুটপাত দখলমুক্ত করার পরই আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশন বলেছে তারা সকালে দখল মুক্ত করলে আবার বিকালে আবার বেদখল হয়। তাহলে এমন দখল মুক্ত করে কিছু হচ্ছে না। এটা যেন সাস্টেইন করে সেটা করতে হবে।
জাতীয় সংলাপে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক আরমানা সাবিহা হক সংলাপে অংশ নেন।