সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মাঠে নামছেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা

মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি । মামলা ও জরিমানা আদায়সহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশের পাশাপাশি বিআরটিএর কর্মকর্তারাও মামলা এবং জরিমানা আদায় করতে পারবেন। গতকাল সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক আদেশের মাধ্যমে বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের এ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।

আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তারা হলেন মোটরযান পরিদর্শক, সহকারী পরিচালক ও উপপরিচালক। এসব পদের কর্মকর্তাদের মোটরযান আইন ও বিধির সাতটি ধারায় মোটরযান সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের ব্যাপারে মামলা রেকর্ড এবং জরিমানা আদায়সহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর সংঘটিত কিছু ঘটনার জের ধরে সড়কে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশ পুরোপুরি কাজ শুরু করেনি। সড়কে ট্রাফিক পুলিশের আগের তৎপরতা নেই। পুলিশ ঠিকঠাকভাবে দায়িত্বে না ফেরায় সড়ক মহাসড়কে বেহাল অবস্থা তৈরি হয়। যানজটে স্থবির হয়ে যাচ্ছে দেশের বড় বড় শহরগুলো। ছাত্ররা যে কদিন রাস্তায় ছিল তখন সড়কে যান চলাচলে শৃঙ্খলা থাকলেও তারা রাস্তা ছাড়ার পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ছাত্রদের পক্ষে রাস্তা সামলানো সম্ভব নয়, তাদের লেখাপড়া রয়েছে।

সড়কের শৃঙ্খলা পুলিশকে ফেরাতে হবে বলে মন্তব্য করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, কিন্তু পুলিশের মনোবল ফিরে আসতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। এই অবস্থায় বিআরটিএর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকেই গতকাল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইনি ক্ষমতা প্রদান করে নতুন আদেশ জারি করা হয়েছে। গতকাল জারি করা আদেশে বলা হয় যে, সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে সড়কমহাসড়কে সংঘটিত কতিপয় অপরাধের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ১০৮, ১০৯, ১১১, ১১২ ও ১১৩ ধারা এবং সড়ক পরিবহন বিধিমালা, ২০২২ এর ১৬১ ও ১৬২ বিধি অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে বিআরটিএএর মোটরযান পরিদর্শক, সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং), সহকারী পরিচালক (সাধারণ), উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) এবং পরিচালকদের অভিযান পরিচালনা বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে ক্ষমতা প্রদান করা হলো।

সড়ক পরিবহন বিধিমালা, ২০২২এর বিধি ১৬৪ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের মোটরযান পরিদর্শক, সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং), সহকারী পরিচালক (সাধারণ), উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং), উপপরিচালক এবং পরিচালকদেরকে কোনো প্রকার অগ্রিম নোটিশ দেওয়া ছাড়া মোটরযান বা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বা এতদসংশ্লিষ্ট স্থাপনা পরিদর্শনের ক্ষমতা প্রদান করা হলো।

বিআরটিএএর ২০০১ সালের ২১ জুলাই বিআরটিএ/৪১এম(অংশ)/২০০০১৭৫১ সংখ্যক প্রজ্ঞাপনে মোটর ভেহিক্যালস অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ (১৯৮৩ সনের ৫৫ সংখ্যক আইন) এর ১৫৯, ১৬১, ১৬২ এবং ১৬৪ ধারার অধীনে প্রয়োগযোগ্য ক্ষমতা প্রদানের সাথে মিলিয়ে ও সামঞ্জস্যপূর্ণ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এবং সড়ক পরিবহন বিধিমালা, ২০২২ এর সংশ্লিষ্ট ধারা ও বিধি অনুযায়ী সড়কমহাসড়কে সংঘটিত কতিপয় অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিআরটিএএর মোটরযান পরিদর্শক, সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং), সহকারী পরিচালক (সাধারণ), উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং), উপপরিচালক এবং পরিচালকদের ক্ষমতা প্রদানের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এতে আরো বলা হয় যে, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এবং সড়ক পরিবহন বিধিমালা, ২০২২ এর কতিপয় ধারা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিআরটিএএর মোটরযান পরিদর্শক বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা প্রদানের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছে।

বিআরটিএ’র দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, মোটরযান আইন২০১৮এ বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সড়কে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা বিগত ২০১৮ সাল থেকেই দেয়া আছে। কিন্তু বিষয়টির প্রয়োগ ছিল না। ওই ক্ষমতাবলে মোটরযান পরিদর্শকেরা সড়কে যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারতেন। কিন্তু তারা শুধু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে অভিযানে গেলেই এই দায়িত্ব পালন করতেন। গতকাল জারি করা নয়া আদেশের মাধ্যমে মোটরযান পরিদর্শকের পাশাপাশি সহকারী পরিচালক ও উপপরিচালকেরাও সাতটি ধারায় সংঘটিত অপরাধের ব্যাপারে আইনের প্রয়োগ করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, এখন থেকে এসব আইনে বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মামলার পাশাপাশি জরিমানাও আদায় করতে পারবেন। মোটরযান আইন ২০১৮ এর ১০৮, ১০৯, ১১১, ১১২ ও ১১৩ এবং ২০২২ সালের বিধিমালার ১৬১ এবং ১৬২ বিধিতে মোটরযানের বিভিন্ন ধরনের অপরাধ, গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তল্লাশি এবং জরিমানা আদায়ের ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সমর্থ হবে : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধআনোয়ার পাশাকে চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক নিয়োগ