সড়কে লাল সোনাইলের সম্ভাষণ

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | বৃহস্পতিবার , ১ মে, ২০২৫ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়ের পথ এখন ভীষণ রঙিন। কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, জারুল, কনকচূড়াসহ বাহারি ফুলে ভরপুর। ফুলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার শ্রেষ্ঠ সময়। পাহাড় টিলা বা চলার পথে সবখানেই গ্রীষ্মের ফুলের মিছিল। আমাদের চেনা ফুলের ভিড়ে সুন্দরের পেখম মেলে মুগ্ধ করছে অনেকের অচেনা ফুল ‘লাল সোনাইল’। অনেকের কাছে ক্যাশিয়া জাভানিকা নামে পরিচিত।

খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশমুখ জিরো পেরিয়ে সামনেই হটিকালচার পার্ক। পার্কের বিপরীতে অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহার। বিহারের সীমানা ঘেষা ফুলের শাখা মেলেছে ‘লাল সোনাইল’। ফুলে ফুলে ভরে গেছে গাছের প্রতিটি শাখাপ্রশাখা। নামে লাল সোনাইল হলেও ফুলে গোলাপী রঙের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। ২০২০ সালে গাছটি রোপণ করেন খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের তৎকালীন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা। গত বছর থেকে ফুল আসা শুরু হলেও এবার একেবারে পুষ্পভারে মুখরিত। ছাতার মতো ডালপালা ছড়ানো গাছে এপ্রিল ও মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত থাকবে ফুল। সড়কে চলাচলকারীদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে এ ক্যাশিয়া জাভানিকা। ফুলটি সুন্দর হলেও সর্বত্র দেখা দেখা যায় না। খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ফুলে ফুলে শোভিত ক্যাশিয়া জাভানিকার বীথি থাকলেও পরবর্তীতে মড়কের আক্রমণে মারা যায়।

ক্যাশিয়া জাভানিকা গ্রীষ্মের ফুল। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়াসহ উষ্ণমন্ডলীয় এলাকায় এ ফুল ফোটে। গাছ দ্রুত বর্ধনশীল, মাঝারি আকৃতির, ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বর্তমানে রাঙামাটি সড়ক বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। সড়কের পাশে সৌন্দর্য্য বাড়ানোর জাকারান্ডা, লাল সোনাইল, সোনালুসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, গাছটি পাহাড়ে বহু বছর যাবত দেখা যায়। ১৯৯৪ সালে আমাদের বাড়ির পাশে একটি গাছ ছিল। সেটি প্রাকৃতিকভাবে জন্মেছিল। আমি খাগড়াছড়ি থেকে এ গাছের চারা সংগ্রহ করেছি। খাগড়াছড়িচট্টগ্রাম সড়কের লাগায়ো অপরাজিতা বৌদ্ধ বিহারের সীমানায় গাছটি লাগিয়েছিলাম। এখন সেটি ফুলে ভরে উঠেছে। ফুলের রং পিংক হওয়াতে দূর থেকে দর্শনার্থীদেরক মুগ্ধ করে। এছাড়া দীঘিনালার বন বিহারসহ কয়েকটি এলাকায় এটি দেখা যায়। তবে সোনালু বা কৃষ্ণচূড়ার মতো এটির আধিক্য নেই।

নিসর্গ বিষয়ক লেখক মোকারম হোসেন বলেন, লাল সোনাইলের ফুল, পাতা ও গাছের গড়ন সুন্দর। গাছগুলো দেখতে ছাতার মতো। লাল সোনাইলের পোশাকি নাম পিংক ক্যাশিয়া বা পিংক শাওয়ার। নিসর্গবিদ অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা নাম রাখেন লাল সোনাইল। শীতকাল পাতা ঝরার মৌসুম। গ্রীষ্মের শুরুতে কচি পাতার সঙ্গে গোলাপি রঙের ফুলের থোকায় ভরে ওঠে গাছ। ফুল প্রায় ৩ সেমি চওড়া, সুগন্ধি, পাপড়ি ও পুংকেশর অসমান। বাসি ও তাজা ফুল মিলে চমৎকার বর্ণবৈচিত্র্য তৈরি করে। ফল গোলাকার, লম্বা, গাঢ়ধূসর ও শক্ত। বংশবৃদ্ধি বীজের মাধ্যমে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাই কোর্টে চিন্ময় দাসের জামিন, স্থগিতের আবেদন রাষ্ট্রপক্ষের
পরবর্তী নিবন্ধবাড়ির দেয়াল ভেঙে সিমেন্টের ট্রাক ঘরে অল্পের জন্য বেঁচে গেল পুরো পরিবার