সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করতেই হবে

| শুক্রবার , ৪ জুলাই, ২০২৫ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে লক্করঝক্কর মার্কা গাড়ি চলছে দেদারসে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চলাচল করলে ও তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। আটক ও জরিমানার ঘটনা ঘটলেও যেন কোনো কিছুরই তোয়াক্কা না করে রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলছে এ সব গাড়ি। যাত্রীরা নিরূপায়। ঝুঁকি নিয়ে এ সব গাড়িতেই চলাচল করতে হয়। গত ২ জুলাই দৈনিক আজাদীতে ‘গাড়ির বয়সসীমা নির্ধারণ, আসছে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম/ বাসমিনিবাস ২০ বছর, ট্রাককাভার্ডভ্যান ২৫ বছর এর বেশি পুরনো গাড়ি চলতে পারবে না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে বাসমিনিবাস এবং ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানসহ যানবাহন ও পণ্যবাহী গাড়ির বয়সসীমা বা ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বিশ বছরের বেশি পুরনো বাস ও মিনিবাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরনো ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সড়কে উপরোক্ত বয়সসীমার বেশি পুরনো গাড়ি যাতে চলতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বিআরটিএ শীঘ্রই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নিয়ে মাঠে নামছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সড়কমহাসড়কে শৃঙ্খলা আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা ঠেকাতে সরকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নতির পাশাপাশি গাড়ির ব্যাপারেও কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে। ফিটনেসবিহীন লক্করঝক্কর গাড়ি যাতে সড়কে চলাচল করতে না পারে সেজন্য গাড়িগুলোর বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রচলিত সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৬এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাসমিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক কাভার্ডভ্যান প্রভৃতি মালবাহী মোটরযানের ক্ষেত্রে ২৫ বছর ইকোনমিক লাইফ বা বয়সসীমা নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ ২০০০ সালের আগের কোনো মডেলের ট্রাক কাভার্ডভ্যানসহ পণ্যবাহী গাড়ি এবং ২০০৫ সালের আগের কোনো মডেলের বাসমিনিবাস শহর কিংবা মফস্বলে চলাচল করতে পারবে না। গত ১ জুলাই থেকে সরকার এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ গত ১ জুলাই থেকে সড়কে বয়সসীমা উত্তীর্ণ হওয়া কোনো বাসমিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান আইনত চলাচল করতে পারবে না।

সরকারের পক্ষ থেকে বয়সসীমা উত্তীর্ণ বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান প্রভৃতি যান ও পণ্যবাহী মোটরযানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু বিআরটিএ নয়, জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগকেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে সারা দেশে একযোগে দিনে ও রাতে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা সড়কে দুর্ঘটনা রোধে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বিশ্বে সকল বয়সের মানুষের মৃত্যুর ৮ম প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ। এর কারণে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ মারা যান। একই সাথে ৫২৯ বছর বয়সের শিশু ও তরুণদের মৃত্যুর প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ। তাঁরা আরও বলেন, সড়ককে নিরাপদ করার জন্য জাতিসংঘের কৌশলপত্রে পাঁচটি স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো, সড়ক নিরাপদ করতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ যানবাহনের ব্যবস্থা, সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, রোডক্র্যাশ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা ও যান চলাচলের নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু অতীব দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে সড়কে এখন শৃঙ্খলা নেই। প্রতিদিন মৃত্যু আছে, আছে বিশৃঙ্খলা।

সড়ক দুর্ঘটনার নানা কারণের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলোচালকের অদক্ষতা, চালকের ক্লান্তি, গাড়ির বেপরোয়া গতি এবং গাড়ির ফিটনেস না থাকা। সাধারণের মনে এখন একটাই প্রশ্নমহাসড়ক নিরাপদ হবে কবে? গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া চালকের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে। মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করতে হবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যানজট ও দুর্ঘটনার জন্য রাস্তায় চলাচলকারী ফিটনেসবিহীন গাড়িই দায়ী। তবে অদক্ষ চালক এবং সড়ক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা দুর্ঘটনার বড় একটি কারণ। তাঁরা বলেন, রাস্তায় যত্রতত্র অলস গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য যানজট সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধবিচার হোক নিরপেক্ষ, আইন চলুক নিজের ছন্দে