চট্টগ্রাম বিভাগে গত মার্চ মাসে ৯০টির বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ৯০ জনের। আহত হয়েছেন ১৭৪ জন। এর মধ্যে বেশি ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। চট্টগ্রাম বিভাগে শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৫ জনের মতো। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৩৫টি। গত শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সারা দেশের মাসিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। প্রতিদিন সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং প্রাণহানি হচ্ছে। প্রতিদিন চট্টগ্রাম বিভাগে সড়কে ২ দশমিক ৮২ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে। এই গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি এবং চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দরকার বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। যানবাহনের বেপরোয়া গতি এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে। এজন্য সরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালালে সড়কে দুর্ঘটনা কমবে জানান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্চ মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৮৭টি। নিহত হয়েছেন ৬০৪ জন এবং আহত ১২৩১ জন। এর মধ্যে ২৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২৩৩ জন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১ দশমিক ২২ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১০৯ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৮ জন।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুর্ঘটনার মধ্যে ২২৮টি সংঘটিত হয়েছে জাতীয় মহাসড়কে, যা ৩৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ২৫৬টি সংঘটিত হয়েছে আঞ্চলিক সড়কে, ৭২টি সংঘটিত হয়েছে গ্রামীণ সড়কে এবং ৩১টি শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে। মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী নিহত ছাড়াও বাসের যাত্রী নিহত ৬ জন, ট্রাক–পিকআপ আরোহী ১০ জন, প্রাইভেটকার–মাইক্রোবাস আরোহী ৪ জন, থ্রি–হুইলার যাত্রী ২০ জন, স্থানীয় যানবাহনের যাত্রী ৩ জন এবং বাইসাইকেল–রিকশা আরোহী ২ জন নিহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক–মানসিক অসুস্থতা, বেতন–কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ–যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে বলে জানান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে হলে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। চালকদের বেতন–কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, পরিবহন মালিক–শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা তৈরি করতে হবে, পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে, রেল ও নৌ–পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সড়ক পরিবহন আইন–২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সাইদুর রহমান জানান, পেশাগত সুযোগ–সুবিধা বিশেষ করে নিয়োগপত্র, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকায় যানবাহনের অধিকাংশ চালক শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। এজন্য তারা সবসময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন এবং বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালান। ফলে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে পরিবহন শ্রমিকদের পেশাগত সুযোগ–সুবিধা এবং সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।