সঠিক পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ কিশোর অপরাধ কমাতে সাহায্য করতে পারে

| বৃহস্পতিবার , ৪ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজকাল প্রায়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন অপরাধের খবর প্রচারিত হয়। এতে অনেক যুবকের ভবিষ্যত নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ ব্যাপারে যুবস মাজকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।’ রাজধানীর ওসমানী অডিটরিয়ামে ‘জাতীয় যুব দিবস-২০২১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, যুবদের উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। যুবদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, শুধু নিজে ভালো থাকলে চলবে না, অন্যরাও যাতে ভালো থাকে সে চেষ্টাও করতে হবে। সন্তান যেন লেখাপড়ার পাশাপাশি কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে মা-বাবা এবং অভিভাবকদের পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি। আবদুল হামিদ বলেন, সম্ভাবনার পাশাপাশি যুব সমাজের সামনে চ্যালেঞ্জও অনেক। এ ছাড়া দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কর্মসংস্থানের অভাব, অপরাধ ও সহিংসতা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার জন্ম দেয়। যাবতীয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, কর্মসম্পাদনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে যুব উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের অমিত সম্ভাবনাময় যুবসমাজকে অবশ্যই উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
রাষ্ট্রপতি যে বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেছেন, সেটি হলো কিশোর গ্যাং। আমাদেরও সে বিষয়ে এখন তীব্রভাবে ভাবায়। কিশোর গ্যাং, যা এখন সমাজের বিষফোড়া হিসেবে পরিণত হয়েছে। কিশোর গ্যাং মানে আতঙ্ক। এটাকে কোনোভাবেই যেন প্রতিহত করা যাচ্ছে না। এদের কর্মকাণ্ড যেন দিনদিন আগ্রাসী ও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সারা দেশে এখন এর বিস্তার লাভ করেছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, যৌন হয়রানি, মাদক গ্রহণ, চাঁদাবাজি, হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে।
মূলত ছোট অপরাধ থেকে তাদের যাত্রা শুরু। আস্তে আস্তে ইভটিজিং বা বখাটেপনা করলেও পরবর্তীতে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মাদক কেনা-বেচা, ধর্ষণের মতো নৃশংস ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। এমনকি দলবেঁধে বিরোধীপক্ষের ওপরও হামলা করছে তারা। গত কয়েক বছর ধরে প্রায়শই খবরের শিরোনাম হচ্ছে ‘কিশোর গ্যাং’। এমন চক্রের সংখ্যা নেহাত কমও নয়। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে কিশোরদের ‘গ্যাং কালচার’ বা সংঘবদ্ধ অপরাধের ভয়ঙ্কর চিত্র সামনে এলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে কিশোর অপরাধের প্রবণতা কমানো যায়নি, বরং বেড়েছে। সমপ্রতি টিকটক, লাইকির মতো ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহারে ঝুঁকে পড়ছেন কিশোর-তরুণরা। এক্ষেত্রেও তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন গ্যাং। এসব গ্যাংয়ে থাকছে একাধিক মেয়ে সদস্য। তাদের দিয়ে তৈরি হচ্ছে আকর্ষণীয় ভিডিও। সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে না বুঝে এসব গ্যাংয়ে যুক্ত হচ্ছে উঠতি বয়সী তরুণীরা। অনেক ক্ষেত্রে টিকটকের নায়িকা বানানোর টোপ দিয়ে তাদের দলে ভেড়ানো হচ্ছে। একবার দলে ভেড়ানো গেলে সেখান থেকে বের হওয়ার আর কোনো রাস্তা থাকে না।
দেশের প্রচলিত আইনকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে, যা রীতিমতো সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত। আর এর মাত্রাটা কয়েকগুণ বেড়েছে এই বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সময়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই যদি এই কিশোর গ্যাং কালচারের শিকড় তুলে না ফেলা যায়, তবে ভবিষ্যতে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। এ জন্য সর্বপ্রথম পরিবারকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এটা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার কাজ নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনীতির দুষ্টচক্রে নিজের স্বার্থে কেউ কিশোর গ্যাং গড়ে তুললে পুলিশের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে কঠোর হস্তে তা দমন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। আসলে সমাজে এখন তরুণ-কিশোরদের সামনে রোল মডেল (পথিকৃৎ) হিসেবে কেউ নেই। কাকে অনুসরণ করবে তরুণরা! আমাদের মনে হয়, আমাদের আইকনিক রোল মডেল তৈরি করতে হবে। সামাজিক অবক্ষয় রোধে জোর দিতে হবে। তা না হলে সামনে খুব খারাপ দিন অপেক্ষা করছে। আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। খুনির বিচার খুনের আইনেই করতে হবে। কিশোর বা তরুণ বলে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। কিশোর খুনির যাবজ্জীবনকাল না হয় কেটে যাবে কিশোর সংশোধনাগারে। কিন্তু বিচার করতেই হবে। কিশোর গ্যাং যেহেতু এটি একটি সামাজিক অপরাধ, তাই সমাজের সবার দায়বদ্ধতার রয়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবার ও সামাজিক পর্যায়ে সঠিক পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ কিশোর অপরাধ কমাতে অনেক সাহায্য করবে। সেই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও কঠোর হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে