সঠিক নিয়মে জাকাত প্রদান করা জরুরি

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | রবিবার , ২৩ মার্চ, ২০২৫ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

জাকাত প্রসঙ্গে এর আগে দুদিন আলোচনা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জাকাত ইস্যুটি এত বড় যে, বেশ কয়েকদিন আলোচনা করেও শেষ করা যাবে না। ইসলামের অর্থনৈতিক ফরজ ইবাদত হচ্ছে জাকাত। দারিদ্র্য জিইয়ে রাখতে নয়, পৃথিবী থেকে দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাতেই মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে জাকাতের অর্থনৈতিক বিধান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা চারপাশে কী দেখছি?

ধনীরা বছর বছর জাকাত দিচ্ছেন; অথচ দারিদ্র্য পরিস্থিতি তেমন বদলাচ্ছে না। কোথাও যেন গলদ রয়ে গেছে। অনেক ধনী জাকাত দেন। কিন্তু হিসাব করে সঠিক পন্থায় জাকাত দেন বলে মনে হয় না। অথচ গরিবদের জনপ্রতি ১০০/২০০/৫০০ টাকা বিক্ষিপ্তভাবে দিলে কখনো দারিদ্র্য নির্মূল হবে না। এটা ধনীরা বুঝতে চান না। প্রতি লাখে আড়াই হাজার, এক কোটি টাকার বিপরীতে আড়াই লাখ টাকা জাকাত দিতে হয়। কারো কাছে শত কোটি নগদ টাকা আছে। তখন তাকে আড়াই কোটি টাকা জাকাত দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে বাধ্যতামূলক। অথচ ধনীদের এদিকে বিশেষ দৃষ্টি নেই। অনেকে হিসেব করে পরিকল্পিতভাবে জাকাত দেন তা বলা যাবে না।

দেশে লক্ষ লক্ষ জাকাতদাতা থাকা সত্ত্বেও এখনো দারিদ্র্য কেন রয়েছে? কেন কান পাতলে দরিদ্র মানুষের আহাজারি শোনা যায়? তা গভীরভাবে ভাববার সময় এসেছে। জাকাত সংগ্রহ ও বণ্টন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। পরিকল্পিতভাবে সুবিধাবঞ্চিত, কম সৌভাগ্যবান লোকদের মাঝে মোটা অংকের টাকা দিয়ে তাদের স্থায়ীভাবে স্বাবলম্বী করাই জাকাতের মূল উদ্দেশ্য। এ বছরের জাকাত গ্রহীতা পরের বছর যাতে আর জাকাতের জন্য ধর্ণা না দেয়, তাকে এমনভাবে স্বাবলম্বী করে দিতে হবে। গরিবদের কেউ গৃহহীন থাকলে তাকে জাকাতের টাকায় ঘর বানিয়ে দেওয়া যায়। গরিব কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারকে বিবাহ সহায়তা দেওয়া যায় জাকাতের টাকায়। কেউ টাকার অভাবে চিকিৎসা খরচ মেটাতে পারছে না। তাকে জাকাতের টাকায় চিকিৎসার টাকা জোগান দেওয়া যায়। কেউ ঋণের ভারে জর্জরিত, অথচ চক্ষুলজ্জায় কারো কাছে হাত পাততে পারছে না। এমন আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী ঋণগ্রস্ত হকদার খুঁজে খুঁজে জাকাতের টাকা বণ্টন করলে তবে সমাজের চেহারা পাল্টে যাবে। এটাই মূলত ইসলামের অন্তর্নিহিত জাকাত দর্শন।

কোরআন মজিদের ৮২টি স্থানে নামাজ কায়েম করার পাশাপাশি জাকাত প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আবার অন্যদিকে কোরআন মজিদের সূরা তওবার ৩৪ নং আয়াতে জাকাত না দেওয়ার শাস্তির কথাও এসেছে। আল্লাহ পাক বলেন, ‘আর যারা স্বর্ণ রৌপ্য জমা করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না (অর্থাৎ জাকাত দেয় না) তাদেরকে কষ্টদায়ক শাস্তির বার্তা প্রদান করুন।’

অতএব, আসুন সঠিক নিয়মে পরিকল্পিতভাবে জাকাত বণ্টন করে দরিদ্র্য মানুষের ভাগ্য বদলে দেওয়ার প্রত্যয় গ্রহণ করি মহিমান্বিত এই রোজার মাসে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৬ বছর বয়সে ভোটার আর ২৩ বছরে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব এনসিপির
পরবর্তী নিবন্ধহাতির আক্রমণে শিশুর মৃত্যু, মা হাসপাতালে