অন্তর্বর্তী সরকার সঞ্চয়পত্রের সুবিধা বৃদ্ধি করছে এবং তিন মাসের জায়গায় প্রতিমাসে মুনাফা প্রদানের অভাবনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, তিন মাস অন্তর নয়, সঞ্চয়পত্রের সুদ মিলবে প্রতি মাসে। পাশাপাশি বিদ্যমান সুদহার বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বর্ধিত সুদহার নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটি কাজ করছে। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হবে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের সভাপতিত্বে ওই বৈঠক হয়েছে।
এক বছর আগেই সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর থেকে প্রতি তিন মাসের পরিবর্তে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা গ্রাহকদের হিসাবে প্রতি মাসে দেওয়ার বিধানসহ বড় ধরনের সংস্কার কর্মসূচির প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই সংস্কারে ‘পেনশন সঞ্চয়পত্র’ ক্রয়সীমা ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকা, পরিবার সঞ্চয়পত্রে পুরুষের বয়সসীমা ৬৫ বছর থেকে ৫০–এ নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়।
এছাড়া ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে’ অনেক বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের রাস্তা করে দিতে বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলো পুনর্বিন্যাস করার উদ্যোগ ছিল। কিন্তু তৎকালীন আইআরডির সিনিয়র সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান নিজের একক ক্ষমতাবলে এ প্রস্তাব আটকে দেন। পরবর্তী সময়ে সংস্কার কার্যক্রম ক্ষমতায় থাকার শেষদিন পর্যন্ত তিনি বাস্তবায়ন করতে দেননি। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদে আরো জানা যায়, বর্তমানে সঞ্চয় অধিদপ্তর ১১টি সঞ্চয় স্কিম পরিচালনা করছে। এসব স্কিমে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অর্থ মেয়াদ শেষে ফেরত দেওয়া হয়। যারা আবারও বিনিয়োগ করতে চান, তাদের নতুন করে আবার বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। তবে নতুন সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এখন থেকে মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের অর্থ প্রত্যাহার করে না নিলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃবিনিয়োগ হবে। একইভাবে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের বিনিয়োগও মেয়াদ শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃবিনিয়োগ হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নবিত্ত, নিম্ন–মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য দেশে নিরাপদ বিনিয়োগের বিকল্প কম। বয়স্ক অনেক মানুষ তাঁদের জীবনযাপনের ব্যয় সঞ্চয়পত্রের আয় থেকে করে থাকেন। সরকার ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে ছোট ও মাঝারি সঞ্চয়কারীদের সুবিধার্থে। তবে অনেক অবসরপ্রাপ্ত ও বয়স্ক নাগরিক আছেন, যাঁদের দীর্ঘদিনের সঞ্চয় এর চেয়ে বেশি এবং তাঁরা সঞ্চয়পত্রের আয় থেকেই চলেন। তাঁদের দৈনন্দিন খরচ নির্বাহ করা কঠিন।
সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বৃদ্ধি করার চিন্তাভাবনা করছে। তিন মাস অন্তর নয়, সঞ্চয়পত্রের সুদ মিলবে প্রতি মাসে। সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্তের ফলে সংশ্লিষ্ট সকলেই খুশি হবেন–তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের একটি বড় অংশ লাভবান হবেন বলে জানা যায়।
বর্তমানে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে বলে সংসার চালাতে গিয়ে নাভিশ্বাস অনেকেরই। সঞ্চয় ভেঙে মানুষ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চালাচ্ছে জীবনচাকা। আবার কিছু কিছু মানুষের যেটুকু সঞ্চয় ব্যাংকে আছে সেখানেও বসছে নানামুখী থাবা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকে টাকা রেখে কম মুনাফার কারণে অনেকেই সঞ্চয়পত্র কিনে কিছুটা স্বস্তি খোঁজে। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ানো বা সুবিধা বাড়ানোর খবরে নির্ধারিত আয়ের মানুষের দুঃখী মনে সুখ আসছে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা জরুরি যে, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর নীতিমালায় দেখা যায়, সঞ্চয়স্কীম সমাজের বিশেষ বিশেষ শ্রেণিকে উদ্দেশ্য করে করা হয়েছে, বহিঃবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। জনগণকে সঞ্চয়ে আগ্রহী করতে এবং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মুদ্রাষ্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দ্যা পাবলিক ডেট এ্যাক্ট–১৯৪৪ এর আলোকে সঞ্চয়স্কীমের যাত্রা শুরু হয়। ফলে সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, শারীরিক প্রতিবন্ধী, মহিলা, শিশু, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মজীবীও প্রবাসীদের সঞ্চয়ে মনোযোগ বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হয়। সে হিসেবে সঞ্চয়পত্র কারা কিনছেন– কী পরিমাণ বিনিয়োগ করছেন, তার নজরদারি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। না হলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মূল টার্গেট ভেস্তে যাবে। তাঁরা সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর (আয় কর) আরোপ করা থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।