সজীব হত্যার তিন দিনের মধ্যে রহস্য উদঘাটন

মূল ঘাতক ও সহযোগী গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

স্বামী নুরুল আমিন ও স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের মধ্যে দাম্পত্য কলহ তীব্র আকার ধারণ করলে একপর্যায়ে দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। স্ত্রীর জীবনে আসে তৃতীয় পুরুষ সজীব। স্বামী ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। তার বিশ্বাস ছিল, স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিলেও একসময় অভিমান ভেঙে ফিরে আসতো। সজীবের কারণে পারছে না। সমাধান হিসেবে নুরুল আমিন তার দুই সহযোগীকে নিয়ে সজীবকে খুন করেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটির রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), চট্টগ্রাম মেট্রো। গ্রেপ্তার করেছে মূল ঘাতক স্বামী নুরুল আমিন (২৭) ও দুই সহযোগীর একজন মো. শাহজাহানকে (৩৬)। নুরুল আমিনের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায়। শাহজাহানের বাড়ি কুমিল্লায়।
পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা আজাদীকে বলেন, গত ২৭ অক্টোবর নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন উত্তর কাট্টলী টোল রোড এলাকার কৃষি জমি থেকে সজীব (২২) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রথমে নাম পরিচয় পাওয়া না গেলেও পরে স্বজনরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। তার ভাই ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে ২৮ অক্টোবর পাহাড়তলী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার তদন্ত পিবিআইয়ের হাতে আসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে।
সন্তোষ চাকমা বলেন, সজীবের মোবাইলে কল লিস্টের সূত্রে ২৮ অক্টোবর হবিগঞ্জ থেকে নুরুল আমিন এবং পরদিন নগরীর আকবর শাহ থেকে শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছে খুনের বিস্তারিত বিবরণ ও কারণ পাওয়া যায়। ৩০ অক্টোবর নুরুল আমিন আদালতে জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন।
সন্তোষ চাকমা আরও জানান, তিনি পেশায় টাইলস শ্রমিক। স্ত্রী নিয়ে তিনি চট্টগ্রাম নগরীতে থাকতেন। সাত বছর আগে বিয়ে করলেও নুরুল আমিন ও জান্নাতুল ফেরদৌস দম্পতির কোনো সন্তান ছিল না। কোভিড মহামারিতে গত লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়ায় তারা গ্রামের বাড়িতে চলে যান। এদিকে দীর্ঘদিনেও নাতি নাতনির মুখ দেখতে না পাওয়ায় নুরুল আমিনের মা ছেলেকে আবারও বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে থাকেন। বিষয়টি জানার পর জান্নাতুল ক্ষুদ্ধ হন। তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। মাসখানেক আগে জান্নাতুল রাগ করে বাপের বাড়ির উদ্দেশে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড এলাকায় এসে গাড়ির জন্য অপেক্ষারত জান্নাতুলের সঙ্গে পিকআপ চালক সজীবের পরিচয় হয়। দুজনের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। এরপর থেকে তাদের মধ্যে মোবাইলে যোগাযোগ ছিল। একমাস আগে জান্নাতুল নুরুল আমিনকে ডিভোর্স দেন। নুরুল আমিন জান্নাতুলকে বারবার আগের দাম্পত্য জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু সজীবকে বিয়ে করার উদ্দেশ্য ছিল জান্নাতুলের। নুরুল আমিন জানতে পেরে উত্তেজিত হয়ে সজীবকে খুন করার পরিকল্পনা করেন।
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা আরও জানান, সজীবকে খুনের উদ্দেশে নুরুল আমিন ৫ হাজার টাকায় তার পূর্বপরিচিত শাহজাহান ও আরেকজনকে ভাড়া করেন। গত ২৫ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীতে এসে সজীবকে পিকআপ ভাড়ার কথা বলে ডেকে উত্তর কাট্টলী টোল রোডে ডেকে নিয়ে যান নুরুল আমিন। এরপর ধানক্ষেতের দিকে নিয়ে গেলে সজীব বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পালানোর চেষ্টা করলে নুরুল আমিন তাকে জাপটে ধরেন। পরে শাহজাহানসহ অপর দুইজন তার বুকের ওপর চড়ে বসেন ও নুরুল আমিন স্যান্ডো গেঞ্জি দিয়ে গলায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। মরদেহ ধানক্ষেতে ফেলে রেখে তারা তিনজন রিকশাযোগে চলে আসেন। নুরুল আমিন অলংকার মোড়ে একটি হোটেলে রাতযাপন করে সকালে হবিগঞ্জ চলে যান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বর্ণের বারের তথ্য জানতেই বন্ধুকে খুন
পরবর্তী নিবন্ধইনকনট্রেড লিমিটেডের সাড়ে তিন কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি