ক্যালেন্ডারের হিসেবে ফাগুন আসতে আরো এক সপ্তাহ। তবে এরই মধ্যে খাগড়াছড়ির পথে প্রান্তরে ফাগুনের উচ্ছ্বাস। শিমুল, পলাশের সাথে পাল্লা দিয়ে ফুটছে শ্বেতশুভ্র সজনে ফুল। পত্রবিহীন সজনের ডালে এক মুগ্ধ করা ফুল। বাংলা সাহিত্য বা সংগীতে সজনে ফল উপেক্ষিত হলেও পথিক ঠিকই মুগ্ধ হয় সজনে ফুলে। খাগড়াছড়ি–সাজেক সড়কের দীঘিনালার কবাখালী বাজার পেরিয়ে কিছুদূর যেতেই সম্ভাষণ জানাবে সারি সারি সজনে গাছ। যেন সজনে ফুলে সেজেছে সড়ক। অন্তত ২০টি সজনে গাছ সেখানে। দীর্ঘকায় গাছের শরীরজুড়ে থোকায় থোকায় ফুটেছে ফুল। আর এসব ফুলের মধু আহরণে শ্বেতাক্ষী পাখির সরব উপস্থিতি। পাশের বন থেকে তারা ছুটে আসে সজনের ডালে। সজনের বাগানে সকাল পেরিয়ে তপ্ত দুপুরেও সুদর্শন ধবল চোখ বা শ্বেতাক্ষী পাখির দেখা পাওয়া যায়। পুরো বসন্তজুড়ে গাছে ফুল থাকে বলে জানায় স্থানীয়রা।
সজনের ডালে উড়ে বেড়ানো শ্বেতাক্ষী পাখি বাংলাদেশের আবাসিক পাখি। পাখিটির আরেক নাম উদয়ী ধলা চোখ। এদের ইংরেজি নাম– ঙৎরবঃধষ ডযরঃব বুব। দুরন্ত ছোট্ট শ্বেতাক্ষীকে জুতসই ফ্রেমবন্দি করা বেশ মুশকিল। পাখিটির চোখের চারপাশে সাদা বৃত্তকার। এ কারণে পাখিটির আরেক নাম উদয়ী ধলা চোখ। আকারে চুড়ুইয়ের ছোট। লম্বায় মাত্র ১০ সেন্টিমিটার। হলদে–সবুজ দেহ। চোখ হলদে–বাদমি। চোখের রিং সাদা এবং চোখের সামনে ছোট কাল দাগ। গলা ও বুক উজ্জ্বল হলুদ। পেট সাদাটে। লেজতল হলদে। কালো চঞ্চুর গোড়া ধূসর। পা ধূসর– হলুদ। এদের ডাক ‘প্রি–উ, প্রি–উ’।
স্থানীয় নিসর্গপ্রেমী প্রলয় বাপ্পী বলেন, প্রতি বছর বসন্তের আগেই এখানে সজনের ফুল আসে। একসাথে এতগুলো গাছ থাকায় এটি সজনের গ্রাম হিসেবেও পরিচিত। সড়কের দুই পাশে কুড়িটির বেশি গাছে সাদা সজনে ফুল ফুটেছে। দেখতে অনেকটায় চেরি ফুলের মতো। যেকোন নিসর্গপ্রেমী মানুষ সজনের এমন সৌন্দয্যে বিমোহিত হবে। সজনে ফুলের মধু খেতে সারাদিনই উদয়ী ধলাচোখসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এখানে আসে।
খাগড়াছড়ির ছোট জঙ্গল, ঝোপঝাড়ে এদের দেখা মিলে। তবে শীতের শেষ থেকে পুরো বসন্তজুড়ে এদের সহজে দেখা যায়। বিশেষত ফুল গাছে এদের বিচরণ বেশি।
পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল বলেন, বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় পাখিদের বিচরণের জায়গা সংকুচিত হয়েছে। ধলাচোখ ছোট আকারের বৃক্ষচারী পাখি। চোখের চারপাশা সাদায় মোড়ানো পাখিটিকে বিশেষভাবে আর্কষণীয় করেছে। এরা পাতা থেকে পোকা খুঁটে খায়। দলে থাকে। ডালে বাসা করে। সাদা সজনের ডালে এদের বেশ সদুর্শন লাগে।