সচেতনতার অভাবে ঝুঁকিপূর্ণরাও পরীক্ষার বাইরে

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৮ মে, ২০২২ at ১১:০০ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ। বিশ্বের ৬২ দেশের ২৩২টি সংস্থা ও অঙ্গ সংগঠনের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘সচেতন হই-প্রচার করি-যত্ন নিই-থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক জ্ঞান উন্নয়নে বিশ্ববাসীর সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করি।’

চিকিৎসকরা বলছেন, রক্তের লোহিত কনিকা জনিত এই রোগটি কার্যকর প্রতিরোধমূলক কোনো কার্যক্রম না থাকায় আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা অপরিহার্য। তবে বাহকদের চিকিৎসার প্রয়োজন নাও হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২০ এর প্রতিবেদনের বরাতে চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে বড় পরিসরে কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বিভিন্ন থ্যালাসেমিয়ার ধরন অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার মধ্যে বিটা থ্যালাসেমিয়ার বাহক ১-৫ শতাংশ এবং হিমোগ্লোবিন ‘ই’ এর বাহক ১০ শতাংশ। রোগাক্রান্ত রোগীর মধ্যে ‘ই’ বিটা থ্যালাসেমিয়া অন্যতম। এর আনুমানিক সংখ্যা ৩০-৫০ হাজার ধারনা করা হলেও এটি বর্তমানে লাখের কাছাকাছি। আক্রান্ত রোগীদের সুনির্দিষ্ট প্রধান চিকিৎসা ব্যয়বহুল অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন যা দরিদ্র রোগীদের জন্য সূদূর পরাহত। ফলে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন/অতিরিক্ত লৌহ বা আয়রন নিষ্কাশনই একমাত্র ভরসা। সেটিও ২০-৩০ শতাংশ রোগী গ্রহণ করে। ফলে বেশিরভাগ রোগী হৃদরোগ/যকৃত জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন।

থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক স্ক্রিনিং ও রোগী নিরুপনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হেমাটোলজি (রক্ত রোগ) বিভাগে ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট (জাতীয় শোক দিবসে) হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফরেসিস মেশিন সংযোজন করা হয়। রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণদের মধ্য থেকে বাহক স্ক্রিনিং ও তাদের প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং করে আসছে বিভাগটির চিকিৎসকরা। পাশাপাশি সন্ধানী চমেক শাখার উদ্যোগে পরিচালিত ‘ডা. তরুন তপন বড়ুয়া থ্যালাসেমিয়া সেন্টারে’ বাহক স্ক্রিনিং কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।

চমেক হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মোট ২১৮ জনের পরীক্ষা হয়েছে। এর মাঝে বিটা থ্যালাসেমিয়ার বাহক পাওয়া গেছে ৩১ জন। যা মোট পরীক্ষার ১৪ শতাংশ। হিমোগ্লোবিন ‘ই’-তে আক্রান্ত ১২ শতাংশ (২৬ জন) এবং রোগাক্রান্ত রক্ত নির্ভর ই-বিটা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত পাওয়া গেছে ৩৩ জন (শতকরা ১৫ ভাগ)। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছরে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা কার্যক্রম গতি পায়নি বলে জানিয়েছেন হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম রাব্বানী। তাছাড়া পরীক্ষা কম হওয়ার পিছনে অসচেতনতাও একটি বড় কারণ। যারা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আছেন, তারাও সচেতনতার অভাবে এ পরীক্ষার আওতায় আসছেন না। আর পরীক্ষা কম হওয়ায় থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তের প্রকৃত চিত্র আসছে না বলে মনে করেন তিনি।

ঝুঁকিপূর্ণদের পরীক্ষার পরামর্শ : চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যে পরিবারে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী রয়েছে, সে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণদেরই থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানোর পরামর্শ চিকিৎসকদের।

এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম রাব্বানী আজাদীকে বলেন, হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফরেসিস মেশিনে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগের বাহক বা আক্রান্ত কি না, তা জানা যায়। তবে রক্ত রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়েই এ পরীক্ষা করাতে হয়। হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে মাত্র ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে এ পরীক্ষা করানো যায়। ঝুঁকিপূর্ণ হলে গর্ভাবস্থায় ভ্রুন (ডিএনএ) পরীক্ষার মাধ্যমেও গর্ভের শিশুটি থ্যালাসেমিয়ার বাহক বা আক্রান্ত কি না, তা জানার সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে এ পরীক্ষা করাতে হয়।

তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসা অপরিহার্য। প্রধান চিকিৎসা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন। কিন্তু ব্যয়বহুল হওয়ায় গরীব রোগীদের পক্ষে সেটি সম্ভব হয় না। যার কারণে অধিকাংশ রোগীকে রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়। তবে বাহকদের সেরকম চিকিৎসা নাও লাগতে পারে।

চিকিৎসকরা বলছেন, থ্যালাসেমিয়া একটি জিনবাহিত রোগ। যা বাহকের মাধ্যমে ছড়ায়। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হলে তা জিনগত কারণে সন্তানদের মধ্যে বিস্তার ঘটাতে পারে। এ জন্য বিবাহযোগ্য ছেলে-মেয়েরা তাদের বিবাহের পূর্বে এই রোগের জিনবাহক কিনা তা জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

বাহকে-বাহকে বিয়ে হলে ২৫ শতাশং শিশু থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হিসেবে জন্ম নেয় জানিয়ে অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, ৫০ শতাংশ জন্ম নেয় বাহক হিসেবে। বাকি ২৫ শতাংশ সুস্থ হিসেবে জন্মের সম্ভাবনা থাকে। যার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হলে যুবক-যুবতীদের বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানো উচিত বলে আমরা মনে করি। এ বিষয়ে সচতেনতা বাড়ানো জরুরি বলেও মত দিয়েছেন এ চিকিৎসক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীবন বলী ধরাশায়ী নিজ জেলায়
পরবর্তী নিবন্ধশূন্য কোটায় হজে যেতে ১০ মে’র মধ্যে আবেদন