তাদের গড় বয়স ২০। কারো বয়স ১৬ থেকে ১৮, আবার কারো ২০ থেকে ২২ বছর। গা হিম করা সব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। সম্প্রতি চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে, ঘটেছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি থেকে ধর্ষণের ঘটনাও। প্রতিটি অপরাধে দায়েরকৃত মামলায় আসামিদের অধিকাংশের গড় বয়স ২০। এই বয়সে কিশোর তরুণরা ছুরি চাকু এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মাস্তানি করে, মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। মেয়েদের দিকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে, শিস বাজায়। কথায় কথায় রক্ত ঝরায়। একের পর এক অপরাধ করে নিজেদের ভবিষ্যৎ যেমন নষ্ট করছে, তেমনি পরিবারের শান্তি ও সুনাম বিনষ্ট করছে। এদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এমন সব লোমহর্ষক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত হচ্ছে যা অকল্পনীয়।
কিশোর তরুণদের অপরাধের কারণ তুলে ধরে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন আজাদীকে বলেন, ‘সঙ্গদোষ’ কিশোর অপরাধের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। আমরা যাদের সঙ্গে চলাফেরা করি তাদের একটা প্রভাব সবসময় আমাদের মধ্যে থাকে। এখন কোনো কিশোর যখন খারাপ মানুষের সঙ্গে মিশে তখন সঙ্গদোষের কারণে সে অপরাধীতে পরিণত হতে পারে। অপরাধে জড়িয়ে পড়া কিশোর তরুণদের মধ্যে দরিদ্র পরিবারের সন্তান যেমন আছে, তেমনি আছে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানও।
তবে পুলিশের ভাষ্য, স্বাভাবিকভাবেই কিশোর তরুণদের বিচক্ষণতা, দূরদর্শীতার অভাব আছে। তারা যে অপরাধ করছে, এই অপরাধের ফলে কী হবে, সেটা তারা চিন্তা করছে না। শনিবার (১৮ জুন) দুপুরে বন্দর থানার নিমতলা পানামা টার্নিমাল থেকে একটি বাইসাইকেলসহ গ্রেপ্তার করা হয় মো.আবিদ হোসেন শ্রাবণ নামে এক কিশোরকে। তাকে গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দানকারী বন্দর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই কিশোর মজুমদার আজাদীকে বলেন, বয়স তার ১৬ বছরের দোরগোড়ায়। প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা তার পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত হলেও চুরি বিদ্যায় সে উচ্চশিক্ষিত! নিমিষেই চুরি করে ফেলতে পারে মোটরসাইকেল। চুরিবিদ্যায় সে এতটাই পোক্ত যে, মাত্র সাত মাসে চুরি করেছে ৭টি মোটরসাইকেল। এছাড়া শ্রাবণের নামে রয়েছে নগরীর বিভিন্ন থানায় প্রায় হাফডজন চুরির মামলাও। এর আগেও সে সাইকেল চুরি করতে গিয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে আটক হয়। তবে শ্রাবণ জানায়, শখের বশেই চুরি করে সে। প্রথমদিকে ছোটখাটো চুরি করতো। এরপর সে সাইকেল চুরি করে এবং গত এক বছর ধরে মোটরসাইকেল চুরি করে। প্রতিটি মোটরসাইকেলে ৫/৬ হাজার টাকা পায়। চুরির টাকা দিয়ে সে শহরের বিভিন্ন শিশুপার্কে ঘুরে বেড়ায়। ভালো রেস্টুরেন্টে খাবার খায়। টাকা শেষ হয়ে গেলে আবারও চুরি করে।
বোয়ালখালীর বহুল আলোচিত মাদরাসা ছাত্র ইফতেখার মালেকুল মাশফি (৭) হত্যাকাণ্ডের রহস্য প্রায় সাড়ে ৩ মাস পর উদঘাটিত হয়েছে। একই মাদরাসার হেফজ বিভাগের ১৪/১৫ বছর বয়সী দুই ছাত্র যথাক্রমে ইদু আলম সাকিব ও তৌসিফই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক রমজান আলী হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. শহীদুল ইসলাম হৃদয়কে (১৯) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৮ জুন) রাতে রাজধানী ঢাকার উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ।
কুষ্টিয়ায় স্কুলে ঢুকে শিক্ষকদের সামনে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবিরকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো সংগ্রাম হোসেন সাইফ (১৯), মুহাম্মদ নাফিস ফুয়াদ (১৯) ও তামিম শাহরিয়ার (২২)।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), চট্টগ্রাম জেলার একটি বিশেষ টিম গত ১৫ জুন হাটহাজারী থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে মোটর সাইকেল চোর চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং একটি চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মোঃ সাঈদ (২০), মোঃ ফয়সাল করিম (১৯) ও মোঃ ইসমাইল হোসেন ওরফে বাবু (৩০)।
কুষ্টিয়ার কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র আবিরকে ১৩ জুন দুপুরে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে এলাকার কিশোর গ্যাং লিডার সংগ্রামসহ দলের সদস্যরা। ওই গ্যাংয়ের নাম ‘বিএসবি’। প্রকাশ্যে শিক্ষকদের সামনেই কোপানো হয় আবিরকে। এ সময় শিক্ষকরা বাধা দিতে গেলে তাদের ওপরও চড়াও হয় কিশোর গ্যাং। আবিরকে কুপিয়ে আহত করার পর কিশোর গ্যাং লিডার সংগ্রামসহ তিনজন পালিয়ে চট্টগ্রামে আসে। চট্টগ্রামে র্যাব-৭ গ্যাং লিডার সংগ্রামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো সংগ্রাম হোসেন সাইফ (১৯), নাফিস ফুয়াদ (১৯) ও তামিম শাহরিয়ার (২২)।
বয়সে ছোট হলেও, তাদের অপরাধের কৌশল বড় অপরাধীদের মতোই। ভবঘুরে সেজে দিনরাত ঘুরে বেড়ায় নগরীর অলি গলিতে; নজরদারিতে রাখে আশেপাশের ঘর বাড়ি। কোনো বাড়িতে আলো না থাকলে চুরির পরিকল্পনা সাজায়। আবার কোনো বাড়িতে দারোয়ান না থাকলে সুযোগ বুঝে ওই ভবনে উঠে লোহা কাটার ও ছেনী দিয়ে তালা ভেঙে ঢুকে পড়ে বাসার ভেতরে। এরপর স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয়। দীর্ঘদিন ধরে নগরীর বাসা-বাড়িতে চুরি করে আসা সিরিজ চোর চক্রের চার সদস্যকে গত ১৩ জুন গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। এদের প্রত্যেকের বয়স ১৯ কিংবা ২০।