সঙ্কট রয়ে গেছে, রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি : সিইসি

| শুক্রবার , ৩ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

পরবর্তী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপর জোর দিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের এক বছর আগে রাজনৈতিক মতানৈক্যের মধ্যে জাতীয় ভোটার দিবসে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে আলোচনা সভায় এ নিয়ে কথা বলেন তিনি।

এ বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হবে। তবে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক জোটের মতপার্থক্য এখনও রয়েছে। বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক মিত্ররা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার দাবি তুললেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তা মানতে নারাজ। খবর বিডিনিউজের।

সিইসি বলেন, আমরা কিন্তু একটা সঙ্কটে আছি। কারণ আমরা এখনও রাজনৈতিক অঙ্গনে পুরোপুরি ঐকমত্য দেখতে পাচ্ছি না। এ ঐকমত্যটা খুব বেশি প্রয়োজন। দুই পক্ষের মতভেদ না কাটলে রাজনৈতিক সঙ্কট বাড়ার শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। যদি ঐক্যমতের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে রাজনৈতিক সঙ্কট উদ্ভূত হওয়ার শঙ্কাটা তিরোহিত হয়ে যায়। আমরা কখনই চাই না, নির্বাচনের পূর্বে বা নির্বাচনোত্তর কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট উদ্ভূত হোক। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে করার কিছু না থাকলেও সব দলকে নির্বাচনে আনতে নিজেদের চেষ্টার কথা বলে আসছে ইসি। আলোচনা অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, সবার অংশগ্রহণে একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চাই আমরা। ভোটার, দল, প্রার্থী, এজেন্ট, গণমাধ্যমকর্মী সবার জন্যে নির্বিঘ্ন পরিবেশে তৈরিতে কমিশনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতাও চাই আমরা। নির্বাচন কশিমনার রাশেদা সুলতানাও সব দলের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করে বলেন, সবার আস্থা অর্জনে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। তবে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এখনও জনগণের পুরোপুরি আস্থা অর্জন করতে পারেনি বলে স্বীকার করেন সিইসি।

তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা খুব ভালোভাবে আস্থাভাজন এখনও হয়ে ওঠেনি। মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব রয়েছে আস্থা ফিরিয়ে আনা। ইসি যেহেতু নির্বাচন আয়োজন করবে, সেক্ষেত্রে ভোটার এডুকেশনটাও জরুরি। সামনে সংসদ নির্বাচন যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়, তার সঙ্গে যদি ভোটার এডুকেশন সংযুক্ত করতে পারিতাহলে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।

ভোটের উপর মানুষের আস্থা না আসার কারণ ব্যাখ্যা করে সাবেক সচিব হাবিবুল আউয়াল বলেন, ১৯৭৩ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনটি ভালো হয়েছে। পরবর্তীতে সব ওলটপালট হয়ে যায়, সেভাবে নির্বাচনটা এগোতে পারেনি। ১৯৭৫ সালের পর সংবিধান ‘সাসপেন্ডেড’ ছিল। সামরিক শাসনের সময়ে ভোটার উপস্থিতি ভালো থাকলেও সেসব নির্বাচন আস্থাভাজন হয়েছে, তা নয়। এরপর আমরা আবার নির্বাচনী ব্যবস্থায় ফিরে এসেছি। সামরিক শাসন শেষে ১৯৯০ সালের পর ধারাবাহিক নির্বাচন হয়েছে। শুধু ২০০৬২০০৭ সালে ১/১১ গভর্নমেন্ট এসে সংবিধানবহির্ভূতভাবে তাদের অবস্থান করতে হয়েছিল। এরপর নির্বাচনটা আবার চালু হয়েছে এবং ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত আছে।

ভোটার দিবসের আয়োজনে সকালে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করে ইসি। তাতে দেখা যায়, ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ভোটার এখন ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। ‘ভোটার হব নিয়ম মেনে, ভোট দেব যোগ্য জনে’এই স্লোগানে এবারের ভোটার দিবস পালন করেছে ইসি।

আলোচনা সভায় নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ভোটার যারা হয়েছেন, তারা যোগ্য জনে ভোট দেবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, প্রথাগতভাবে দিবস পালন না করে সবার সহযোগিতা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে মূল লক্ষ্য বাস্তবায়ন অর্থবহ করে তুলতে হবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম ও এনআইডি মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর। ভোটার দিবসের এ অনুষ্ঠানে নতুন ভোটার ৩০ শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেন সিইসি। এবার তিনজন কর্মকর্তাকে জাতীয় নির্বাচনী পদক দেওয়া হয়। তারা হলেন নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব মো. শাহেদুন্নী চৌধুরী, রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন এবং বগুড়ার কাহালু উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জান্নাত আরা জলি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালোবেসে বিয়ে, মারধরের শিকার হয়ে মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধআউটার স্টেডিয়ামে আর মেলা হবে না