শারদীয় দুর্গাপূজায় মহাঅষ্টমী আজ। পাথরঘাটা রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এখানে স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা হবে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। নিম্নচাপের কারণে দুইদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে শারদীয় দুর্গাপূজার আনন্দে অনেকটা ভাটা পড়ে। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সপ্তমীর সকাল ছিল বৃষ্টিমুখর। ভোর থেকেই টানা বৃষ্টি হয়েছে বেলা ৩টা পর্যন্ত। সকালে তাই মণ্ডপগুলোতে জনসমাগম অন্যান্য বছরের তুলনায় ছিল খুবই কম। সঙ্গে ছিল স্বাস্থ্যবিধি মানার কড়াকড়িও। মাস্ক ছাড়া বেশিরভাগ মণ্ডপেই পূজার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। দুপুরে চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমে অনলাইনে সপ্তমীর পুষ্পাঞ্জলির আয়োজন করা হয়। তবে বিকেল ৪টার পর থেকে নগরীর মণ্ডপগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। এদিকে চট্টল মহাশক্তি সম্মিলনী দেওয়ানজী পুকুর পাড় পূজা মণ্ডপ থেকেও কেবল টিভি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান সিসিএল এর সহযোগিতায় ভার্চুয়ালী পুষ্পাঞ্জলির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গতকাল মহাসপ্তমীর ভোর থেকেই শুরু হয় নবপত্রিকা স্থাপন ও দেবী বন্দনা। এরপর অনুষ্ঠিত হয় বিহিত পূজা। মহাসপ্তমীতে চট্টগ্রামে প্রতিটি মণ্ডপে মণ্ডপে প্রকৃতির নানা উপকরণ দিয়ে পূজা করা হয় দেবী দুর্গার। এসময় ঢাক, শঙ্খ আর উলুধব্বনিতে দেবীর বন্দনা করা হয়। প্রতিবছর আড়ম্বরপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হলেও এ বছর করোনা মহামারীর কারণে উৎসব বর্জন করে শুধুমাত্র শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে পূজা-অর্চনা করা হচ্ছে। আরতির মধ্য দিয়ে সন্ধ্যায় আবারও দেবি দুর্গার প্রতি অঞ্জলি নিবেদন করেন ভক্তরা।
আজ পালন হবে শারদীয়া দুর্গা উৎসবের সবচেয়ে বড় আনুষ্ঠানিকতা মহাঅষ্টমী ব্রত-কুমারী পূজা ও রাত ১২টায় সন্ধিপূজা। সকালে মাঙ্গলিকতার মধ্য দিয়ে দুর্গাদেবীর মহাষ্টম্যাদি কল্পারম্ভ। এরপর মহাষ্টমী বিহিত পূজা ও দেবীজ্ঞানে কুমারী পূজা করা হবে। নতুন কাপড় আর বাহারি সাজে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী দুর্গাকে দেয়া হবে পুষ্পাঞ্জলি। শঙ্খ, উলুধ্বনি আর ঢাকের তালে আনন্দে মেতে উঠবে সকলে। আরাধনা করা হবে দেবী দুর্গার। পূজা শেষে বিতরণ করা হবে মহাপ্রসাদ। আর সন্ধ্যায় হবে সন্ধিপূজা।
এই দিনেই মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগৎ জননীর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করে হবে কুমারী পূজা। শাস্ত্র মতে, এদিন পূজিত কুমারী কন্যার নামকরণ করা হয় ‘উমা’। ভক্তদের মতে, এটি একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। মূলত নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা। বালিকার মধ্যে শুদ্ধ নারীর রূপ চিন্তা করে তাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করাই কুমারী পূজা।
শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দির : শারদীয়া দুর্গোৎসবে পাথরঘাটাস্থ শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে ভক্তদের উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আজ সকাল সাড়ে ১০ টায় শ্যামল সাধু মোহন্ত মহারাজের পৌরোহিত্যে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। কুমারী পূজায় সকল প্রকার কৃপা লাভের আশায় সমবেত হয়ে কুমারীকে জ্ঞানরুপিনী, হাস্যময়ী, মঙ্গলদায়িনীরুপে সকল প্রকার সৌভাগ্য, বিপদনাশিনী ও সিদ্ধিলাভের প্রত্যাশায় সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে।