সকলের সম্মিলিত আওয়াজে নতুন দিনের সূচনা হোক

সৈয়দ আহমেদ বাদল | বৃহস্পতিবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২৫ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

বাঙালি জাতির হাজার বছরের সাধনার ধন স্বাধীন বাংলাদেশ। দেশকে কলুষমুক্ত রাখতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে এ জাতিকে। দিতে হয়েছে এক সাগর রক্ত। গণঅভ্যুত্থান আসে, গণঅভ্যুত্থান যায়, তবে দেশের নাগরিকদের ললাটে ‘উদিত দুঃখের দেশ’ থেকেই যায়। সরকারের পালাবার দিন আসে কিন্তু নাগরিকদের দুঃখ তখনও অব্যাহত থাকে। ফ্যাসিস্ট শাসকরা বেশ কিছুকাল জনতাকে বাঁধা দিয়ে রেখে যেতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাতির একতা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। স্বৈরাচার নিপাত যায়।

সম্প্রতি দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আমাদের দেখিয়েছে, কীভাবে সমাজের তরুণ প্রজন্ম একটি নতুন শুরুর জন্য সংগঠিত হতে পারে। তারা বুঝতে পেরেছে, এই গণঅভ্যুত্থান শুধু একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রতীক। যখন দেশে বৈষম্য বেড়ে যায়, তখন নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়। ছাত্ররা এই মুহূর্তে প্রতিনিধিত্ব করছে আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বরের, যারা সমাজের সঠিক পরিবর্তন চায়।

সম্প্রতি বিদেশী উচ্চমূল্যের শিল্পীকে দিয়ে কনসার্টের আয়োজন করে বিজয়োল্লাস সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে আহত নিহতের পরিবারের অন্ধকার, কোটি কোটি টাকা খরচে বিদেশী গায়কের গান শুনিয়ে সেই দুঃখ কি ভোলানো যাবে? আসলে যতদিন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য রয়ে যাবে, ততদিন এসব অনুষ্ঠানের উল্লাসে কোনো পরিবর্তন আসবে না। সরকারের উচিত জনগণের সমস্যা সমাধানে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। পরিবর্তন প্রয়োজন, আর সেটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক শাসন নয়, বরং সমাজে অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায়ও পরিবর্তন দরকার। আমাদের নতুন প্রজন্মের সন্তানরা শুধুমাত্র আন্দোলন করে লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না, বরং তাদের নেতৃত্বের সংমিশ্রণে আগামী দিনের বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। একটি দেশ, যেখানে নাগরিকেরা সক্রিয়, সচেতন ও সংগ্রামী, সেই দেশ কখনোই পিছিয়ে পড়ে না। এগিয়ে যাবেই।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমনঃ ()রাষ্ট্রযন্ত্রের কার্যকরী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করতে হবে; ()সকল নাগরিকের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করে, বিশেষ করে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে সুলভ শিক্ষার মাধ্যমে জনগণকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে; ()পিছিয়ে পড়া জনগণের জন্য বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করতে হবে, যেমন ক্ষুদ্র ঋণ, প্রশিক্ষণ কর্মসূচী এবং ব্যবসায়িক সহায়তা; ()স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে জনগণ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিষেবা সহজে গ্রহণ করতে পারে; () সমাজে নারীদের সমান সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে তাদের ভূমিকা বাড়াতে হবে, নারীদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থানের অবারিত সুযোগ তৈরি করতে হবে; ()সব শ্রেণির মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী সরকারি নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে, যাতে বৈষম্য হ্রাস পায় এবং সমাজের অসুবিধা দূর হয়; ()সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও গরীব মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; ()সকল শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকল্পে স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, এটি বৈষম্য কমাতে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করতে সাহায্য করবে; ()জনগণকে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়াবলীতে সচেতন করতে বিভিন্ন জনসচেতনতা কর্মসূচী আয়োজন করা যেতে পারে, যাতে তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে জানে এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ করে; (১০)বৈষম্য দূরীকরণে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাসহ বন্ধু দেশগুলোর সহযোগিতা গ্রহণ করা যেতে পারে যা সমৃদ্ধ জাতি গড়ার পথে সহায়ক হবে।

এমতাবস্থায়, আমাদের অধিকার ও স্বপ্নগুলো নিয়ে একত্রিত হতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের আগামীর বাংলাদেশকে আমরা নির্মাণ করবো যেখানে বৈষম্য থাকবে না, যেখানে গণতন্ত্রের ধারা সাম্যের ভিত্তিতে প্রবহমান থাকবে। গণঅভ্যুত্থানের কাব্য রচিত হবে, আমাদের সাহসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেখানে দুঃখের জায়গায় আনন্দের আলো ছড়াবে। এখন সময় এসেছে সবাইকে একত্রিত হয়ে এই সংগ্রামে এগিয়ে আসতে। প্রতিটি যুবক, প্রতিটি ছাত্রছাত্রী আবালবৃদ্ধবনিতা দেশপ্রেমে জাগ্রত হোক। তাদের সম্মিলিত আওয়াজে একটি নতুন দিনের সূচনা হোক। গণঅভ্যুত্থান শুধু একটি আন্দোলন নয়, এটি একটি নতুন যুগের সূচনা, যেখানে আমরা সকলেই পাবো আমাদের প্রাপ্য অধিকার। কিছু বিশেষ পন্থা অনুসরণ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সফল আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তবেই এগিয়ে যাবে দেশ। জাতি পাবে সোনার বাংলাদেশ।

লেখক: প্রাবন্ধিক, সাবেক টার্মিনাল অফিসার, চবক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপ্রকাশিত প্রেম
পরবর্তী নিবন্ধঅতিথি পাখিদের জন্য নিরাপদ আবাস জরুরি