চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ককে বহু লেনে রূপান্তর করার জন্য চকরিয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের উভয় পাশের অধিগ্রহণকৃত জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় বিগত সরকারের সময়ে। তবে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অসংখ্য প্রভাবশালী দখলবাজ উচ্ছেদকৃত সড়কের জায়গা দখলে নিয়ে ফের স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে। এই অবস্থায় দখল ছেড়ে দিতে বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও ওইসব প্রভাবশালী দখলবাজ তা আমলে নিচ্ছে না। এতে সড়ক বিভাগের অধিগ্রহণকৃত অন্তত ২০০ কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ জায়গা কার্যত বেহাত হয়ে পড়েছে।
সরজমিন দেখা গেছে, চকরিয়া পৌরশহরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র চিরিঙ্গাস্থ সড়ক ও জনপথ বিভাগের চকরিয়া উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয়ের উত্তর পাশের লাগোয়া একেবারে ২০০ গজের মধ্যে অধিগ্রহণকৃত জায়গায় বিলাসবহুল বহুতল বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের বেশ তোড়জোড় দেখা গেছে। এটি নির্মাণ করছেন দুবাই এহেছান নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। ইতোমধ্যে এই বহুতল ভবনের দোকান বিকিকিনিও অনেকটা সম্পন্ন করা হয়েছে দখলবাজ মালিকের পক্ষ থেকে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯৫৭–৫৮ সালে ৩৯ নম্বর এল এ মামলা মূলে চকরিয়া পৌরশহরের মাতামুহুরী সেতুর এপ্রোচ, স্টক ইয়ার্ড ও সওজ ডাকবাংলো নির্মাণের জন্য সড়ক বিভাগ চিরিঙ্গা মৌজার আরএস ১৪১ নম্বর খতিয়ানের ৫৬৫ দাগের ১.৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। সেইসময় জমির মালিক আমিনুল ইসলাম ও বদর মিয়া গং নিজেদের অনুকূলে অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন করে। অভিযোগ ওঠেছে, ১৯৮২ সালে বিএস জরিপের সময় উল্লেখিত জমি নিচু শ্রেণির হওয়ায় সেই জমি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এই সুযোগে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আমিনুল ইসলাম ও মফিজা খাতুনের নামে ফের ওই জায়গা বিএস রেকর্ডভুক্ত করিয়ে নেয়। এরপর কথিত বিএস রেকর্ডের সুযোগে ওই জায়গার বেশকিছু অংশ দুবাই এহেছান ও সুলতান আহমদ সিরাজি মিলেমিশে দখলে নিয়ে সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করে। যেখানে মহাসড়কের অধিগ্রহণকৃত জায়গাও রয়েছে। এমনকি লাগোয়া জমিও দখলে নেওয়ার অভিযোগে একাধিক আদালতে দুবাই এহেছানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন জমজম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
সওজ সূত্র জানায়, জাতীয় মহাসড়ক–১ এর অধীনে চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতু থেকে থানা রাস্তার মাথা পর্যন্ত চকরিয়া পৌর শহরের এক কিলোমিটার সড়কের জন্য ১৯৫৫ সালে জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল ৩২ দশমিক ৫১ একর। সেই জমি থেকে ২০ একরের বেশি এখন বেদখল হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী দখলবাজরা মূল্যবান এই জমিতে বাণিজ্যিক মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে। পৌরশহরের অভ্যন্তরে হওয়ায় সড়ক বিভাগের এই জায়গার মূল্য বেড়েছে শতগুন। বর্তমানে এই জায়গার বাজারমূল্য অন্তত ২০০ কোটি টাকা। মাঝেমধ্যে সড়ক বিভাগ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিলেও ফের দখলে নিয়ে সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করে নেয় দখলবাজরা।
সওজ চকরিয়া কার্যালয়ের উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মো. রাহাত আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, সড়ক বিভাগের জায়গা দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রাখার অভিযোগে দুবাই এহেছান নামের এক ব্যক্তিকে আইনি নোটিশ দিয়েছে কক্সবাজার সড়ক বিভাগ। ওই নোটিশে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা কর্ণপাত করছেন না এহেছান।
এ ব্যাপারে সওজ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকনউদ্দিন খালেদ চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, সড়ক বিভাগের জায়গা দখলে অভিযুক্ত দুবাই এহেছানকে দেওয়া আইনি নোটিশে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে যদি নিজ উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নেন তাহলে ওই জমিসহ আরও যেসব স্থানে সড়ক বিভাগের জায়গা দখলে রাখা হয়েছে তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে গুড়িয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করা হয়েছে।
সড়ক বিভাগের জায়গা দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ প্রসঙ্গে জানার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় অভিযুক্ত দুবাই এহেছানের সঙ্গে। কিন্তু তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অবশ্য বেশ কয়েকজন অবৈধ দখলদারের ভাষ্য হচ্ছে– যদি সওজ কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে তাদের সম্পত্তি উদ্ধার করার কার্যক্রম শুরু করে তাহলে এতে তারা বাধা দেবেন না।









