দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সম্বলিত জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হলো। ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে স্বাক্ষর করেছেন। সনদে সই করার পর প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো। সারা বিশ্বের কাছে এটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। গতকাল শুক্রবার বিকাল ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষরের এই আনুষ্ঠানিতা সারা হয়। বিকাল ৪টায় এ অনুষ্ঠান শুরু করা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা আধা ঘণ্টার বেশি বিলম্বিত হয়। ঠিক সাড়ে ৪টায় ব্যান্ড দলের বাদ্যের তালে মঞ্চে এসে উপস্থিত হন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁকে স্বাগত জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। অনুষ্ঠান মঞ্চে তাঁর সঙ্গী হন জুলাই সনদ প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। বিকাল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতে অনুষ্ঠান শুরু হয়। খবর বিডিনিউজের।
চব্বিশের অভ্যুত্থান বাংলাদেশে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা এবং সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে তা কাজে লাগাতেই গত বছরের শেষে এই সনদ করার দাবি তুলেছিলেন জুলাই আন্দোলনের প্রথম সারির নেতারা। তাদের গঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঐকমত্যের সংলাপে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি স্পষ্ট না হওয়ার স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জন করেছে দলটি। এছাড়া ইতিহাস সঠিকভাবে না আসা এবং সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন নিয়ে আপত্তির কারণে বাম ধারার চারটি দল সনদে সই না করার ঘোষণা দিয়েছিল। দলগুলো হলো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ঙবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।
ইউনূসের সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও আবুল হাসান রুবেল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা ছাড়াও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব ছিলেন অনুষ্ঠানে।
কূটনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ৩৩ দল ও জোট ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে থাকা কয়েকটি দলের প্রতিনিধিরা সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন। দর্শক সারিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনকেও।
স্বাগত বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, আজকে এদিন দেশের ইতিহাসের একটি অভূতপূর্ব ও অনন্য সময়। একটি ক্রান্তিকালে দেশের জন্য দীর্ঘপথ যাত্রার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।
সরকারের সংস্কারের ধারাবাহিকতা ও ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সনদ স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতার পর সাত মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
সই করেছে যেসব দল : ১. বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ২. জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। ৩. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি–এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. নেয়ামুল বশির। ৪. খেলাফত মজলিস আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ এবং মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। ৫. রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন। ৬. আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। ৭. নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার। ৮. জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব মোমিনুল আমিন। ৯. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। ১০. গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। ১১. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব। ১২. গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন। ১৩. বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী। ১৪. জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি–জাগপার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান ১৫. ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম। ১৬. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। ১৭. গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান। ১৮. জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ও জহিরুল হাসান শেখ। ১৯. জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস। ২০. বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার। ২১. বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম। ২২. ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও মহাসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম)। ২৩. জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। ২৪. ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের ও মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী। ২৫. আমজনতার দল সভাপতি মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ তারেক রহমান।
সরকারের পক্ষে যারা সই করেছেন : ১. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ। ২. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ৩. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য মো. আইয়ুব মিয়া। ৪. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন। ৫. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। ৬. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান, বিচারপতি এমদাদুল হক। ৭. জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।
এদিকে এ অনুষ্ঠানের আগে দুপুরে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসনের দাবিতে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেয় জুলাই শহীদদের পরিবার ও আহত শতাধিক ব্যক্তি। তাদের বিক্ষোভের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ মঞ্চে এসে তাদের দাবি পূরণে জুলাই সনদে সংশোধনী আনার ঘোষণা দেন। ওই প্রতিশ্রুতির পরও জুলাই যোদ্ধারা সেখান থেকে না সরলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ও লাঠিপেটা করে সেখান থেকে তাদের সরায়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করে পুলিশ।
যারা সই করল না : জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ঙবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।
নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো : জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে নবজন্ম হলো বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। এটা শুধু জাতির জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে।
সনদে স্বাক্ষরের পর প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আল্লাহর রহমতে আজকে আমরা সফল করতে পারলাম। এ যে মহান দিবস এবং তার মধ্যে বিশেষ একটি ক্ষণ আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন; সমস্ত জাতি, রাজনৈতিক নেতা একসঙ্গে হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করছে।
রাজনৈতিক মতানৈক্যের মধ্যে ঐকমত্য হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে ইউনূস বলেন, অবাক কাণ্ড। সারা দেশ দেখল, সমস্ত রাজনৈতিক দল শুধু বসল না, চমৎকার আলাপ করল। গভীরভাবে জ্ঞানের সঙ্গে, সৌহার্দ্যের সঙ্গে আলোচনা করল, না দেখলে বিশ্বাস হতো না। সরাসরি সম্প্রচারে সবাই দেখেছেন। সবাই শুনতে পেয়েছে, মনে মনে অংশ নিয়েছে সবাই। সারা জাতিকে এ আলোচনায় শরিক করেছেন।
ক্রমে ক্রমে দলগুলোর ঐকমত্যে আসার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্যদের ধন্যবাদ দেন। তার ভাষায়, তারা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে, তাদের নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে।
ইউনূস বলেন, আজকে এ দিনটি যে পেলাম, এটা মহান দিন। এটার কথা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে। সেটা শুধু জাতির জন্য নয়, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায় পাঠ্যপুস্তকে থাকবে এটা।
এই উদাহরণ সৃষ্টি করায় রাজনীতিবিদদের মোবারকবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ সুযোগ যারা দিল, যার কারণে হলো, তাদের কথা স্মরণ করি, গণ অভ্যুত্থানের নায়কদের কথা স্মরণ করি। জাতি তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। এ সনদের মাধ্যমে দেশ পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আজ আমরা যে কাজটা করলাম, সবাই মিলে স্বাক্ষর করলাম। সেটা দিয়ে বাংলাদেশ পরিবর্তন হবে। এ পরিবর্তন সম্ভব হলো ওই গণভ্যুত্থানের কারণে। এটা হলো দ্বিতীয় অংশ। সেটা করেছিল বলেই আমরা এ সুযোগ পেলাম। পুরনো কথা পাল্টে ফেলে নতুন কথাগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে, সংবিধানের পরিবর্তনের মধ্যে, সরকার চালানোর বিষয়ে নিয়ে এলাম।
তিনি বলেন, অনেক বিষয় এসেছে এ পরিবর্তনের ভেতরে। এ পরিবর্তন এখন আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যাবে। আমরা সে পথে অগ্রসর হবে। আমাদের জন্য আজকে নবজন্ম। আমাদের নবজন্ম হলো। এ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। আমরা যেন সঠিকভাবে যেতে পারি, এটা থেকে যেন বিচ্যুত না হই।
এক মত হয়ে সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করে সামনের দিকে এগোনোর আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এ পরিবর্তনের জন্য জীবন দিয়েছে দেশের আনাচে কানাচে, তরুণরাই বাংলাদেশকে গড়বে, এ দেশের নেতৃত্ব দেবে, পথ দেখাবে। এ দেশ তরুণদের।
দেশের অর্ধেক মানুষের বয়স যে ২৭ বছরের নিচে, সে কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা দেশের সম্পদ। সারা দুনিয়ায় তরুণদের অভাব, তারা বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীকে পরিবর্তন করার সুযোগ তাদের এসেছে। এ সনদের মাধ্যমে বড় কাজ হলো মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসলাম। আমরা এক বর্বর জগতে ছিলাম, যেখানে আইন কানুন ছিল না। এখন আমরা সভ্যতায় এলাম। এমন সভ্যতা গড়ে তুলব মানুষে বিস্ময়ের চোখে দেখবে। সমাজ গঠন করতে পারলে দেশের ভবিষ্যৎ ‘চমৎকার’ বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, অন্য সব কাজে একমত হয়ে চললে অনন্য দেশে পরিণত হবে। এ সনদ তর্ক–বিতর্কের অবসান করবে। আমরা নিয়ম মাফিক চলার জন্য তৈরি হব। অনেক আলোচনার মধ্য দিয়ে আজ সই করলাম, এটা আমাদের পথ দেখিয়ে দেবে। এ পথে চললে সম্পদের ব্যবহার করতে পারব।