সংস্কৃতির অন্তঃপ্রাণ মানুষ প্রদীপ ভট্টাচার্য

মোঃ আসিফ ইকবাল | রবিবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ at ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের সাহিত্য, সংস্কৃতি লেখালেখির অন্তঃপ্রাণ প্রিয় মানুষ ছিলেন লেখক প্রদীপ ভট্টাচার্য। পটিয়ায় বেড়ে ওঠা এই বলিষ্ঠ সমাজ সংগঠক চট্টগ্রামের সকলের কাছে কমবেশি এক পরিচিত মুখ ছিলেন। ভ্রমণ ছিল যার জীবনের প্রধানতম চালিকা শক্তির মতই। কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, গল্প সবকিছুতেই তাঁর নিদারুণ প্রচেষ্টা ছিল। যেখানেই সাহিত্যসংস্কৃতি ও লেখা পাঠের অনুষ্ঠান সেখানেই প্রদীপ ভট্টাচার্যের দেখা মিলতো অবলীলায়। গুণীজনদের সাথে ছবি তুলতে খুব ভালোবাসতেন। ফেসবুকে দৈনন্দিন স্মৃতিময় ছবি ও লেখা দিতে তেমন সময় নিতেন না। বরং দ্রুত পোস্ট করতে ভালোবাসতেন। সংগঠনের প্রতি তার ছিল অদ্ভুত মায়া। বিশেষ করে সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিশু কিশোর ও ধর্মীয় সংগঠনের জন্য তিনি নিষ্ঠা এবং সততার সাথে শ্রম, অর্থ এবং প্রচুর সময় দিতেন। নিজের পেশাগত এবং পরিবারের চেয়েও তিনি সাংগাঠনিক এবং সমাজকর্মে বেশি সময় দিতেন। ছোটকাল থেকেই তিনি মূলত শিশু কিশোর সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। খেলাঘরের সাথে তিনি ছাত্রাবস্থায় যুক্ত হয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম দক্ষিণজেলা খেলাঘরের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, নিবেদন শিল্পী গোষ্ঠী, পূর্ব গৈড়লা শ্রীশ্রী মঙ্গলধাম কালা বাবার আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক। অসংখ্য সামাজিক, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সাথে প্রদীপ ভট্টাচার্য আমৃত্যু নিয়োজিত ছিলেন।

প্রদীপ ভট্টাচার্য আজাদী, চট্টগ্রাম মঞ্চ, সাপ্তাহিক স্লোগান, মাসিক কিশোরবেলাসহ বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিকে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। অতিথি ডট কম একটি সংস্থায় তিনি একজন ক্রিয়েটিভ পরিচালক হিসেবে দুর্দান্তভাবে কাজ করেছেন। সংস্কৃতীকর্মী প্রদীপ ভট্টাচার্য অত্যস্ত সাদামনের সহজ সরল মানুষ ছিলেন। সহজেই যেকোন মানুষকে আপন করে নিতেন। বিশেষ করে সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল তার। যেকোন বয়সের মানুষের সাথে তিনি অনায়াসে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারতেন। কখনো সহজে কারো সাথে রাগ, অভিমান, ঝগড়া বিবাদে জড়াতেন না। যতটুকু সম্ভব নম্র, ভদ্র ও শালিনতার সাথে নিজেকে এগিয়ে নিতে ভালোবাসতেন। কোন রকম অহংকার যার হৃদয়ে তেমন বাস করত না। মনের কথাগুলো অত্যন্ত সহজ সরলভাবে তিনি বন্ধুর মত করে বলে ফেলতেন। চট্টগ্রাম একাডেমির প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে তিনি লেখা পাঠে অংশগ্রহণ করতেন। সাংগাঠনিক কাজে সময় দিতে ভালোবাসতেন।

এই মানুষটি আমাদের মাঝে আর কখনো ফিরে আসবেন না। কিন্তু তার স্মৃতি, তার লেখা ও কর্মগুলো যুগ যুগ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে। আশা করি তার রেখে যাওয়া অনেক সংগঠন তাকে স্মরণ, শ্রদ্ধা ও শোকসভা করবে। হৃদয়বান বন্ধু ও সংগঠকরা তাঁর স্মৃতিকর্মকে চির স্মরণযোগ্য রাখতে তাঁর জন্য স্মারকগ্রন্থও বের করবে। আগামী প্রজন্মের মাঝে একজন মহৎ, দেশপ্রেমিক, মানবতবাদী নিঃস্বার্থ ও দুরন্তপনা সমাজকর্মী, সংগঠক, কবি, লেখক ও সর্বোপরি ভালো মনের মানুষ হিসেবে প্রদীপ ভট্টাচার্য আমাদের মাঝে চির স্মরণযোগ্য হয়ে থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপশ্চিম অস্ট্রেলিয়া পার্থ-এর প্রাচীনতম শহর ইয়র্ক
পরবর্তী নিবন্ধসমকালের দর্পণ