রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সংবিধান, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নির্বাচন কমিশন ও দ্রব্যমূল্যসহ বেশ কিছু বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে তাদের পরামর্শ তুলে ধরেছে গণফোরাম। গতকাল শনিবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সংলাপ শেষে দলটির সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু সাংবাদিকদের বলেন, পতিত স্বৈরাচার ও তাদের বিদেশি এজেন্টরা বাংলাদেশটাকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। তার থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের সবাইকে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ ২৩ দফা দাবি জানিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন করতে হবে, এটার জন্য সার্চ কমিটি বা কিছু করার প্রয়োজন আছে, ভালো লোক নিয়োগ দেওয়ার দরকার আছে। যাতে অতীতের মতো কোনো সমস্যা না হয়। আমরা কোনো নির্ধারিত তারিখ (নির্বাচনের) উল্লেখ করিনি। বলেছি সংস্কার শেষে অতি দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য। তবে সংস্কার শেষ না হলে সব একই হবে। নির্বাচনের আগে থাকি রাম, নির্বাচনের পরে হই রাবণ। ওই ধরনের নির্বাচন কমিশন চাই না। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন চাই।
সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটি প্রধান উপদেষ্টার চতুর্থ দফা সংলাপ। সবশেষ সংলাপ হয়েছিল গত ৫ অক্টোবর।
সংলাপ শেষে যমুনা থেকে বের হয়ে মন্টু বলেন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কামাল হোসেন কথা বলেছেন। তারা বাজার পরিস্থিতির ওপর জোর দিয়েছেন। সিন্ডিকেট ভাঙার কথা বলেছেন। সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে মন্তব্য করে সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বলেন, বৈঠকে নির্বাচন ব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ বেশ কিছু ব্যাপারে পরমার্শ দিয়েছি। সরকার সেটা ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছে। সরকার গঠিত কমিশনের বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব কয়েকদিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হবে। অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সরকার মন্তব্য করে সবাইকে একমত হয়ে দেশ এগিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন মন্টু । সংলাপ শেষে তিনি বলেন, এ সরকারকে রক্ষার স্বার্থে অর্থাৎ আমাদের নিজেদের রক্ষার স্বার্থে, আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যেকোনো বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা চাইবেন। আমরা যেটা উপলব্ধি করব, সেটাই পরামর্শ দেব। জনগণের জন্য দরজা খোলা আছে বলে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর তাগিদও দেন তিনি। সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছেন কিনা, এমন প্রশ্নে মন্টু বলেন, দুয়েকদিনের মধ্যে আলোচনা করে লিখিত আকারে দেব। আটটি দিবস বাতিলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, জাতীয় দিবস ছাড়া কোনো দিবসই রাখা উচিত না।
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপ করেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন গণফোরামের সমন্বয় কমিটির কো–চেয়ারম্যান এস এম আলতাফ হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, সদস্য একেএম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, মোশতাক আহমেদ ও সুরাইয়া বেগম।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ ২৩ দাবি এলডিপির
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগ দল নিষিদ্ধসহ ২৩ দফা দাবি জানিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। গতকাল যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির কথা উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, যারা আমাদের ছেলেমেয়েদের হত্যা করেছে তারা কি আমাদের দুলাভাই? তাদের কি আমরা নরম বিছানায় শোয়ায়ে রাখব? তিনি বলেন, নির্বাচন দেবেন কি? সব চোর–ডাকাতরা যদি থেকে যায়। যারাই দুর্নীতি করেছেন তাদের বিচার করতে হবে। যারা আমার ছেলেমেয়েদের হত্যা করেছে তাদের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগ দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। যারা জনগণে টাকা লুণ্ঠন করেছে তাদের থেকে সেই টাকাগুলো নিয়ে আসতে হবে। তারপরে নির্বাচন করেন।
২৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, আজকেও আমরা ২৩টি প্রস্তাব দিয়েছি। এই ২৩টি প্রস্তাব দেশের জনগণের জন্য যা প্রয়োজন, সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন, সুন্দর প্রশাসন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য, গরিব, মেহনতি মানুষ যারা দ্রব্যমূল্যের কারণে কষ্ট পাচ্ছে তাদের সুবিধার জন্য এই পয়েন্টগুলো আমরা দিয়েছি। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছে, তাদের চাকরিচ্যুত করারও দাবি জানান অলি।
এবারও ডাক পেল না জাতীয় পার্টি : গতকাল কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসেন প্রধান উপদেষ্টা। তৃতীয় দফার এই সংলাপে গণফোরাম, এলডিপি, লেবার পার্টির মতো রাজনৈতিক দলের ডাক পড়লেও জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ডাকা হয়নি। এবারের সংলাপে আমন্ত্রণ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতারা। শেষ পর্যন্ত আশাহত হতে হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের।
এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, সরকার হয়ত জাতীয় পার্টির মতামত নেওয়া প্রয়োজন মনে করছে না, সে কারণে আমাদের সংলাপে ডাকেনি। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।