সংস্কারের পর নতুন রূপ

কালুরঘাট সেতু দিয়ে ১৪ মাস পর গাড়ি চলাচল শুরু দুই পারের মানুষের মাঝে স্বস্তি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ অক্টোবর, ২০২৪ at ৮:১১ পূর্বাহ্ণ

সংস্কারের পর নতুন রূপ পেল শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু। বুয়েট বিশেষজ্ঞ দলের তত্ত্বাবধানে সংস্কারের পর এখন মজবুত ও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে সেতুটি। দিনের আলোয় সেতু জুড়ে নান্দনিক চিত্র চোখে পড়ে। সন্ধ্যা গড়াতেই সেই রূপ আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। নতুনরূপে রাতের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে এক সময়ের ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটি। দীর্ঘদিনের অন্ধকারাচ্ছন্ন সেতু এলাকা এখন সোডিয়াম লাইটের আলোয় ঝলমলে। পথচারীসহ ট্রেন ও যানবাহনের যাত্রীদের কাছে এখন সেতু পারাপার অনেকটা রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে।

১৪ মাসের সংস্কার কাজ শেষে গতকাল রোববার সকালে কালুরঘাট সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেতুর উভয় পারের মানুষের মাঝে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস দেখা গেছে গতকাল। স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নদীর ওপারের বোয়ালখালীর মানুষ। খুলে দেওয়ার পর গতকাল সকাল থেকে মানুষ ও যানবাহন পারাপার করছে রেলকাম সড়ক সেতুটি দিয়ে। ভোগান্তি দূর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের মানুষেরা।

সকাল ১০টার দিকে সেতু এলাকায় যান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত, বিভাগীয় প্রকৌশলী আবু রাফিদ মো. ইমতিয়াজ, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রেলওয়ের প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে রেল সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শেষে সকালে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী সেতু দিয়ে বড় ট্রাক ও বাস চলাচল করতে পারবে না। টোল ছাড়াই আপাতত যানবাহন চলাচলের জন্য কালুরঘাট সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ভূসম্পত্তি বিভাগ শিগগিরই রেলসেতু দিয়ে চলা যানবাহন থেকে টোল আদায়ে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা আজাদীকে বলেন, বুয়েট বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে কালুরঘাট সেতুটি সংস্কারের পর এখন অনেক বেশি মজবুত হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে সেতুটি। কালুরঘাট সেতুর নতুন সংযোজন হলো দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে। এখন একদিকে ট্রেন কিংবা যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি ওয়াকওয়ে দিয়ে পথচারীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে। তবে ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। সেতুর পাটাতনের ওপর বিশেষ প্রযুক্তির কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া হয়েছে। আগে সেতুতে পানি জমে থাকায় ঢালাই নষ্ট হয়ে যেত। কংক্রিটের ঢালাই দেওয়ায় এখন আর সেখানে পানি জমে থাকবে না।

রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সেতুটির সংস্কারের পর এখন সর্বোচ্চ ৮ ফুট উচ্চতার সব ধরনের যানবাহন চলাচল করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে চলতে পারবে না ট্রাকবাসের মতো ভারী যান। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল গাড়ি চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরই গতকাল সেতুটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত আজাদীকে বলেন, সংস্কার করার পর আজ (গতকাল) কালুরঘাট সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেতু সংস্কারে সময় লেগেছে প্রায় ১৪ মাস। যানবাহন চলাচলে আপাতত টোল থাকছে না। সেতু দিয়ে সর্বোচ্চ ৮ ফুট উচ্চতার সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে ট্রাকবাসের মতো ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।

সেতু চালু হওয়ায় স্বস্তি দুই পারের মানুষের : ৯৪ বছরের পুরনো এ সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১ আগস্ট। ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আট মাসে সেতুটির সার্বিক সংস্কার কাজের দায়িত্ব পায় ম্যাঙ ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সেতুটি মেরামতে ১৪ মাস পার হয়ে যায়। এক সময়ের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি এখন কঙবাজারগামী ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি যানবাহন করতে পারবে।

২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি দিয়ে ঢাকাকঙবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। মূলত দোহাজারীকঙবাজার নতুন রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে আসার পরও নতুন সেতু নির্মাণ না হওয়ায় পুরাতন কালুরঘাট সেতু সংস্কারের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বিদ্যমান ৬৩৮ দশমিক ৫ মিটার দৈর্ঘ্যের কালুরঘাট সেতুটি ১৯৬২ সালে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে নির্মিত কালুরঘাট সেতুটি বহু আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। বুয়েটের পরামর্শে সেতুটি সংস্কার করা হয়।

ভারী ও দ্রুতগতির ট্রেন চলাচল করতে সেতুর পিলারগুলোর নদীর নিচে প্রায় ৬০ হাজার জিও ব্যাগের মাধ্যমে বালি ফেলাসহ মানুষের যাতায়াতে ওয়াকওয়ে এবং রেলপথের উপর সড়ক কার্পেটিংয়ে বিশেষ নকশা প্রণয়ন করে রেলওয়ে। নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়নের কারণে একমুখী যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

কালুরঘাট সেতু দিয়ে বর্তমানে কঙবাজার পর্যন্ত দৈনিক তিন জোড়া ট্রেন ও দোহাজারী পাওয়ার প্ল্যান্টের জ্বালানিবাহী ট্রেন চলাচল করে। তবে নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণের পর এই রুটে দৈনিক ২৩ জোড়া ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের। আগামী জানুয়ারিতে চালু হওয়া রেলওয়ের ওয়ার্কিং টাইম টেবিলে কঙবাজার পর্যন্ত আরো কয়েকটি ট্রেন যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের।

বোয়ালখালীর মানুষ প্রতিদিন নদী পার হয়ে শহরে যান চাকরি বা পেশাগত কারণে। শহর থেকেও অনেকে বোয়ালখালীতে যান নানা কাজে। সেতুর বিকল্প হিসেবে বোয়ালখালী উপজেলার মানুষকে ফেরির মাধ্যমে পার হতেন। এছাড়া সেতুটি একমুখী হওয়ায় ওই অঞ্চলের মানুষদের পারাপারের জন্য যানবাহনে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হয়। কিন্তু গতকাল সেতু খুলে দেওয়ায় স্বস্তি মিলেছে এ অঞ্চলের মানুষদের।

সকালে সেতুর কালুরঘাট প্রান্তে গিয়ে দেখা গেছে, অপর দিক থেকে গাড়ি আসার জন্য লাইনে অপেক্ষায় আছে ছোটবড় বিভিন্ন যানবাহন। বিকালের পর শত শত মানুষ সেতু এলাকায় ভিড় করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিয়ম না মেনে উভয় দিক থেকে গাড়ি তুলে দিলেন চালকরা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে ভরাটের ক্ষমতা দেয়ার বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল