সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের সবাই। গতকাল ঢাকার গোলাপবাগের সমাবেশে সংসদ সদস্যরা এ খবর জানান। তারা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তারা পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। ৩৫০ আসনের সংসদে বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য হলেন উকিল আব্দুস সাত্তার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২), হারুনর রশীদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ–৩), জি এম সিরাজ (বগুড়া–৭), আমিনুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ–২), জাহিদুর রহমান (ঠাকুরগাঁও–৩), মোশাররফ হোসেন (বগুড়া–৪) ও রুমিন ফারহানা (সংরক্ষিত নারী আসন)।
এদের মধ্যে হারুন বিদেশে রয়েছেন। তিনি পদত্যাগপত্র স্বাক্ষর করে পাঠিয়েছেন বলে জানানো হয়। অন্যরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
এদিকে বিএনপির ৭ সংসদ সদস্য আজ বেলা ১১টায় স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনে বিএনপির ছয়জন বিজয়ী হন। পরে সংরক্ষিত নারী আসনের একটি পায় দলটি। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে শুরুতে বিএনপি জানিয়েছিল, তারা সংসদে যাবে না। পরে সিদ্ধান্ত বদলে শপথ নেন দলটির সংসদ সদস্যরা। চার বছর পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে সংসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল দলটি।
গোলাপবাগ মাঠের সমাবেশে রুমিন ফারহানা বলেন, আমরা সাতজন এমপি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদত্যাগ করেছি। এ সরকারের অবৈধ পার্লামেন্টে আমরা আর সংসদে থাকতে পারি না। বিদেশে থাকা হারুন বাদে আর সবাই সমাবেশে বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে একে একে নিজের পদত্যাগের কথা জানান।
রুমিন বলেন, আমাদের একজন হারুন অর রশীদ ৭ বার এমপি ছিলেন। বিদেশে থাকায় এ সমাবেশে নেই। উনি পদত্যাগপত্রে সই করে গেছেন। উনি আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, দলের সকল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আছেন। আমাদের সবার পদত্যাগপত্র অলরেডি ই–মেইলে (স্পিকারের কাছে) পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল (আজ) হাতে হাতে সংসদে পৌঁছে দেব।
পদত্যাগের প্রস্তুতি : বর্তমান একাদশ সংসদের মেয়াদ ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ সময় শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে (৩০ অক্টোবর–২৯ জানুয়ারি) মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৯ অক্টোবর রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাঁ মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে ফখরুল বলেছিলেন, তার দলের সংসদ সদস্যরা পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত।
পদত্যাগ ও আসন শূন্য : কোনো সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলে তার আসনে উপ–নির্বাচন হবে। তার আগে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে আসনটি শূন্য ঘোষণা করবেন স্পিকার।
সদস্যদের আসন শূন্য হওয়ার বিষয়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৭ (২) এ বলা হয়েছে : কোনো সংসদ সদস্য স্পিকারের কাছে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদত্যাগ করতে পারবেন, এবং স্পিকার কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকলে বা অন্য কোনো কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ডেপুটি স্পিকার যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হবে।
১০ বছর আগে ২০১২ সালে গাজীপুর–৪ আসনের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য তানজিম আহমদ সোহেল তাজের পদত্যাগপত্র নিয়েও জটিলতা হয়েছিল। পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় পরে সশরীরে তা স্পিকারের হাতে জমা দিয়েছিলেন তিনি। সংসদ সদস্যদের পদত্যাগপত্র গৃহীত না হলে সংসদের অনুমতি ছাড়া টানা ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিতির বিষয়টিও রয়েছে আসন শূন্য হওয়ার ক্ষেত্রে।
কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হবে, যদি ৬৭ অনুচ্ছেদের (১) (খ) সংসদের অনুমতি না নিয়ে তিনি একাদিক্রমে নব্বই বৈঠক–দিবস অনুপস্থিত থাকেন।