সংশয় কাটিয়ে প্রথম দিনেই জমে উঠল বইমেলা

পাঠক লেখক দর্শনাথীর পদচারণায় মুখর সিআরবি শিরীষতলা আসুন, নতুন প্রজন্মকে বইয়ের নেশায় উদ্বুদ্ধ করি : মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

শুরুতে ছিল স্থান নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা। এরপর কিছুটা সংশয় ছিল পরিবর্তিত স্থানে মেলা জমবে কিনা। সে সংশয়ও দূর হয়েছে। কারণ সিআরবি শিরীষতলায় প্রথম দিনেই জমে উঠেছে ‘অমর একুশে বইমেলা২০২৪’। শতবর্ষী বৃক্ষরাজির ছায়ায় ঢাকা মেলাপ্রাঙ্গণ এমনতিইে অপরূপ নৈসর্গিক প্রকৃতিতে সমৃদ্ধ। এ দুয়ের মায়ার সঙ্গে যোগ হল নতুন বইয়ের ঘ্রাণ। তাইতো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টা পূর্বে থেকে বইপ্রেমী পাঠক, লেখক, দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মেলাপ্রাঙ্গণ। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে বইমেলার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এবার বইমেলার স্থান নিয়ে লালদীঘি মাঠসহ আরো কয়েকটা জায়গার প্রস্তাব এসেছিল। আমি সিআরবি শিরীষতলার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এতে অনেকে নাখোশ হয়েছিলেন। কিন্তু আজকে এই বিপুল সমাগম দেখে নাখোশ হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। যেখানেই মেলা করেন না কেন বইপ্রেমীরা সেখানে যাবেন।

মেয়র বলেন, বইমেলা সবার প্রাণের মেলা। এখানে বইপ্রেমী পাঠক, দর্শক, প্রকাশক, লেখক, কবিসাহিত্যিক সবার মেলবন্ধন ঘটে। এবছর সবার উপস্থিতিতে মেলা আরো প্রাণবন্ত হবে। এসময় মেয়র পাঠকদের বই মেলায় আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন আমাদের নতুন প্রজন্মকে বইয়ের নেশায় উদ্বুদ্ধ করি। বইয়ের নেশা পেয়ে বসলে যুব সমাজ মাদকের নেশা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসবে।

সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, বইমেলা শুধু মাত্র বেচাকেনার আসর নয়। এটা কিন্তু বাণিজ্যমেলা নয়। বইমেলায় কিছু ব্যবসায়িক ব্যাপার থাকলেও এটা প্রাণের মেলা। এই মেলার সাথে আমাদের আবেগ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য জড়িত। কাজেই বইমেলা যতবেশি আড়ম্বরভাবে করতে পারব ততবেশি আমরা নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের সৃষ্টি সম্পর্কে জানাতে পারব। সেই সমস্ত লোক যারা বাংলাদেশকে স্বীকার করেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে মানেন না এবং ১৬ ডিসেম্বর মানেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে মানেন না সেই সমস্ত লোকের নীলনকশা থেকে আমাদের নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে পারব। তিনি বলেন, বই মেলাকে সফল করতে মেলার নিরাপত্তার জন্য আমরা সচেষ্ট থাকব।

জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পাঠক আসবে কিনা এমন আশংকার কথা জেনেছি। কিন্তু আজকের জনসমাগম দেখে আমার দৃঢ় বিশ্বাস এবারের বইমেলা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আবারও প্রাণবন্ত হবে। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছিলাম তখন যে মেলা হয়েছে সেখানে আমার বন্ধুরা মিলে স্টল দিয়েছি। স্টল থেকে বই বিক্রি করেছি।

চট্টগ্রামে বইমেলার জন্য ভেন্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভেন্যু নিয়ে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। স্থায়ী ভেন্যুর জন্য যদি কোনো জায়গা আপনারা খুঁজে বের করেন, বিশেষ করে সেটা যদি খাস জমি হয়, ভূমি মন্ত্রণালয় বা জেলা প্রশাসনের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত হয় তাহলে সেখানে বইমেলাসহ সকল ধরনের এক্সিবিশন, কনভেনশনসহ সকল মেলার জন্য স্থায়ী বরাদ্দ দেয়া হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করতে এসে চট্টগ্রাম স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ফৌজদারহাট যেখানে ডিসি পার্ক করা হয়েছে তার পাশেই ৩০ একর জায়গা আমরা বন্দোবস্ত দিয়েছি সেখানে। কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে মুুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের কাজ শুরু হবে। তার পাশে ৫ থেকে ৭ একর জমি মাস্টার প্লানে রেখেছি, যেখানে বইমেলাসহ যত ধরনের মেলা ও আর্ন্তজাতিক ইভেন্ট করার প্রয়োজন হবে সে জায়গাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা আগ্রহী। সিটি কর্পোরেশন চাইলে যৌথভাবে কাজ করা যেতে পারে।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জিএম নাজমুল ইসলাম বলেন, জ্ঞানের প্রধান উৎস হচ্ছে বই। জ্ঞানের পরিধি ব্যাপ্তির জন্য দরকার বই। বইমেলা আয়োজন করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নজির সৃষ্টি করে করেছে। তিনি বলেন, আমরা ডিভাইস নির্ভর হয়ে যাচ্ছি। ফলে জ্ঞান অর্জনের জন্য যে বইয়ের দরকার সেখান থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছি। এসময় তিনি অভিভাবকদের সন্তানকে মেলায় এনে বই উপহার দেয়ার আহ্বান জানান।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মেলা ধীরে ধীরে জমজমাট হবে। পাঠক, লেখক, সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীসহ সকলের মিলনমেলা হয়ে উঠবে বইমেলা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইমেলার আহবায়ক ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফ্‌ফর আহমেদ, চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মো. সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস।

. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের প্রাণের মেলায় পরিণত হবে বইমেলা। মোজাফ্‌ফর আহমেদ বলেন, এবারের মত জমজমাট মেলা অতীতে হয়নি।

মো. সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু বলেন, আজকে সূচনা দেখে মনে হচ্ছে এবার জমজমাট হবে বইমেলা। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে উৎসবমুখর হবে।

আলী প্রয়াস বলেন, আজ পাঠকদর্শকের বাধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখে মনে হচ্ছে এখানে বইমেলা দীর্ঘ মেয়াদে আয়োজন করা যাবে।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন ও আফরোজা কালাম।

মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, নাগরিক সমাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্পসাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করছেন। ২৩ দিনব্যাপী এবারের মেলায় থাকছে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের ৯২ প্রকাশনা সংস্থার ১৫৫টি স্টল। মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

বইমেলা মঞ্চে প্রতিদিনের আয়োজনে থাকবেররীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কবিতা উৎসব, মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা, লোক উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলার দামাল ছেলেরা ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে নামে
পরবর্তী নিবন্ধজিআই স্বীকৃতি কি পাবে না মহেশখালীর মিষ্টি পান