বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে হতে পারে, সেজন্য যতটা ভূমিকা রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্র তা রাখবে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে ওই প্রশ্নে মার্কিন এই কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা তিনি শুনেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতি, সে অনুযায়ী, আমরা সব সময় অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। বাংলাদেশেও সেটা যাতে সম্ভব হয়, সেজন্য দীর্ঘমেয়াদী অংশীদার হিসাবে আমাদের সহায়ক ভূমিকা আমরা রাখতে চাই।
চারদিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় এসে পরদিন কঙবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির সফর করেছেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। বৃহস্পতিবার ব্যস্ততম দিনের সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন উজরা জেয়া। ওই বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রমিক অধিকার, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার বিষয় আলোচনা হওয়ার কথা তারা জানান।
এই সফরে উজরা জেয়ার সঙ্গে আছেন মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপ–সহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পশ্চিমা দেশগুলোর নানা তৎপরতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের এই সফরকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দলও এখন বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। আগামী নির্বাচনে সংস্থাটি পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, সেটি এ দলের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ চাইলেও এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সম্পৃক্ত নয় বলে আরেক প্রশ্নে মন্তব্য করেন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার সম্ভাবনা নিয়ে ওই প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি বলব, আপনি জানেন, নির্বাচনের সময়সূচির বিষয়টি বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা সবাই সংলাপের পক্ষে, আপনি যেভাবে বলেছেন সে রকম সরাসরি সম্পৃক্ততা আমাদের নেই।
বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাধাগ্রস্তকারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করতে গত মে মাসে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। নির্বাচনকেন্দ্রিক আরও কোনো কঠোর পদক্ষেপের সম্ভাবনা বিষয়ে এক প্রশ্নে উজরা জেয়া বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারত্বের গুরুত্বের স্বীকৃতি হিসাবে এবং অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো–প্যাসিফিকের জন্য সেই অংশীদারত্বকে আরও গভীর করতে যুক্তরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটাতে আমার এই সফর। (এই সফরে আমাদের) আলোচনাকে আপনি যেভাবে বর্ণনা করেছেন, আমি সেভাবে করছি না। আমি মনে করি, আমরা গঠনমূলক, ফলপ্রসূ এবং অংশগ্রহণমূলক আলোচনা করেছি।
মার্কিন কর্মকর্তাদের এই সফরের মধ্যেই বুধবার নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান থেকে ঢাকায় সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং আন্দোলনে থাকা বিএনপি। সে প্রসঙ্গ ধরে উজরা জেয়া বলেন, গতকাল আমরা বড় বড় রাজনৈতিক সমাবেশ দেখেছি, সৌভাগ্যক্রমে বড় কোনো সংঘাত হয়নি। আমি মনে করি এটা ভালো সংকেত, বারবার এরকমই হোক, সেটাই আমরা চাইব।
সরকারের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, তা তুলে ধরে উজরা জেয়া বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা, প্রতিশোধ বা ভয়ভীতির শঙ্কামুক্ত থেকে সাংবাদিকদের প্রতিবেদন প্রকাশের সক্ষমতা, মানবপাচারের বিরুদ্ধে সহযোগিতা এবং গণতন্ত্রে নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং মতপ্রকাশ ও সমাবেশসহ সব ধরনের মৌলিক স্বাধীনতার বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
মার্কিন এই কর্মকর্তা বলেন, একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নির্ভর করছে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং নির্বাচন ও নিজ দেশের সুশাসনের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশিদের বৃহৎ অংশগ্রহণের ওপর। বাংলাদেশের সব মানুষের সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় একটি সমন্বিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।