সংরক্ষণ ও তদারকিতে টেকনিক্যাল কমিটি

চসিক কমিটির প্রথম সভা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ

করোনার ভ্যাকসিন প্রদানে অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন, টিকাদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা ও গুজব প্রতিরোধকল্পে জাতীয় কমিটির পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একটি করে কমিটি গঠন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে সভাপতি করে জাতীয় কমিটি, মেয়রের নেতৃত্বে সিটি কর্পোরেশন এলাকার কমিটি এবং জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। এ সংক্রান্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এলাকার কমিটি গতকাল প্রথমবার সভা করেছে। চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের সভাপতিত্বে সভায় অন্য সদস্যরা অংশ নেন। চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ কমিটির সদস্য সচিব। সভায় ভ্যাকসিন প্রদানে অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন, প্রদানের প্রক্রিয়া এবং ভ্যাকসিন সংরক্ষণ ও প্রদানে সার্বিক প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। ভ্যাকসিন এলে তা সংরক্ষণসহ তদারকিতে ৫ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন ও ভ্যাকসিন প্রদানের প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে জাতীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। এখান থেকে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। আমরা কেবল জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করব। অবশ্য ভ্যাকসিন পাওয়া গেলে তা সংরক্ষণ ও তদারকিতে প্রাথমিকভাবে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সদস্য কো-অপ্ট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চসিক সূত্র জানায়, ৫ সদস্যের কমিটির ফোকাল পারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। সদস্য হিসেবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের একজন প্রতিনিধি, সিভিল সার্জন এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের দুজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। ভ্যাকসিন সংরক্ষণে নির্ধারণ করা স্টোরের সক্ষমতা যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এ কমিটি।
টাইগারপাসে চসিক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা আশাবাদী। এ বিষয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুয়োগ নেই। ১৮ বছরের কম বয়সীরা করোনা ভ্যাকসিন পাবেন না। এ নিয়ে কিছু ভুঁইফোড় গণমাধ্যম যে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে, দেশ ও নগরবাসীকে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। গুজবে কান না দিতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সরকারি গাইডলাইন অনুসরণ করেই ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে উল্ল্লেখ করে সভায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, জাতীয় কমিটির পরামর্শ মতে এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

সাধারণ তাপমাত্রায় করোনার ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা যাবে জানিয়ে সভায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুসারে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখ সারির কর্মী, রোগ প্রতিরোধহীন ও ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
ভ্যাকসিন প্রদানে সাপ্ল্লাই ও কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের দেখতে হবে চিকিৎসক, নার্স, ক্লিনারসহ সম্মুখ সারির কর্মীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাতে ভ্যাকসিন পায়। সিটি কর্পোরেশন এলাকার কমিটিতে এনজিও প্রতিনিধিসহ আরও তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে সংযুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি ভ্যাকসিন বিতরণ প্রক্রিয়ায় সেন্ট্রাল বা প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি কমিটির সঙ্গে লিংক রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।
ভ্যাকসিন এলে প্রথমে কাদের দেওয়া হবে তার একটি গাইড লাইন সরকারিভাবে দেওয়া হবে বলে প্রত্যাশার কথা জানান চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। নকল ভ্যাকসিন উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতারণা মোকাবেলায় আইনশৃক্সখলা বাহিনীকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও কোভিড ইউনিটের ফোকাল পারসন অধ্যাপক ডা. মো. আবদুস সাত্তার বলেন, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (হু) নির্দেশনা অনুসারে যেকোনো রাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ নাগরিক গণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার ভ্যাকসিন পাওয়ার অধিকার রাখে। সেই মতে রাষ্ট্রের সিনিয়র সিটিজেন হলেন ৬০ বা ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকরা। ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিতেও পরামর্শ দেন তিনি।
করোনার ভ্যাকসিন কারা পাবেন তার যৌক্তিক প্রাপ্যতার জন্য চারটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. আসিফ খান বলেন, চারটি বিষয় হচ্ছে র‌্যাশনাল, ট্রান্সপারেন্সি অর্থাৎ এনআইডি কার্ডের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রদান, সার্ভিস ডিজাইন অর্থাৎ ভ্যাকসিন কীভাবে দেওয়া, রাখা ও যথাস্থানে পৌঁছানো হবে; এর কার্যক্রম ও এসিউরেন্স অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে এই ভ্যাকসিন সবাই পাবেন তার নিশ্চয়তা দেওয়া; যাতে এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে কোনো ভুল বার্তা না যায়।
ভ্যাকসিন প্রদান ও সংরক্ষণে কর্পোরেশনের সার্বিক প্রস্তুতি আছে উল্ল্লেখ করে চসিক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, আমাদের মোট সাতটি স্টোর আছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বাস্থ্য ও ইপিআই কর্মীও রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের আরও প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক নুসরাত সুলতানা, মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. গাজী গোলাম মাওলা, চসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. আলী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং আ্যাস্ট্রোজেনেকা কোম্পানির উদ্যোগে তৈরি ভ্যাকসিন বংলাদেশে সরবরাহ করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আওতায় বেক্সিমকো বাংলাদেশ সরকারকে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে। প্রথম দফায় ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে, যা জনপ্রতি ২ ডোজ করে ২৫ লাখ মানুষকে দেওয়া যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবে টার্মিনাল : উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়নি
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজার মহাসড়কের ৪ সেতু উন্মুক্ত হচ্ছে মে মাসেই