জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা সংলাপের প্রথম দিনে পাঁচটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছার কথা বলেছেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। এই পাঁচটি বিষয় হল–সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন, স্থায়ী কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে, ১০০ সংরক্ষিত নারী আসন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিধান পরিবর্তন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার মুলতবি বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কমিশনের সহসভাপতি। খবর বিডিনিউজের।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে কিছু কিছু দল পুনর্বিবেচনার কথা বলেছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজকে আলোচনার পর এ বিষয়ে একমত হতে পেরেছি যে ৭০ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন করা হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত সংসদ সদস্যরা অর্থ বিল ও আস্থা ভোটে দলের পক্ষে থাকবেন। তিনি বলেন, সরকারি হিসাব, বিশেষ অধিকার, অনুমিত হিসাব ও সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে আসনের সংখ্যানুপাতে বিরোধীদলের মধ্য থেকে নির্বাচন করার ব্যাপারে সকলে একমত হয়েছি। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় সংসদের নারীর প্রতিনিধিত্বের বিষয়, জাতীয় সংসদের ১০০টি সংরক্ষিত আসনের বিষয়ে একমত হয়েছে সকলে। এর পদ্ধতির জন্য আলোচনা হচ্ছে। এ আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে এখানকার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন প্রয়োজন হলে দলের সাথে আলোচনা করে আমরা এই বিষয়ে কথা বলবো। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি সংবিধানের ৯৫/১ অনুচ্ছেদে আছে, পাশাপাশি ৪৮/৩ অনুচ্ছেদে আছে। সেগুলোর ব্যাপারে এক ধরনের ঐকমত্য হয়েছে। অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। কিন্তু আমরা এ বিষয়টিও আগামী সপ্তাহে পুনর্বার আলোচনা করব। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
আলী রীয়াজ বলেন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের ক্ষেত্রে ঐকমত্য হয়েছে। এটাও বলবো, কিছু কিছু দল আপত্তি জানিয়েছে, কিন্তু এটা কমবেশি সকলেই স্বীকার করেছে, এটা পুনর্বিবেচনা করা দরকার। ১০০ আসনের একটি উচ্চ কক্ষ তৈরি করার ক্ষেত্রে অধিকাংশ একমত হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, আলোচনা শেষ হয়নি, আলোচনা অব্যাহত আছে। অত্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা আশা করছি জুলাই মাসের মধ্যে আমরা জাতীয় সনদে পৌঁছতে পারবো।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে ছিলেন বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এনসিপির তাসনিম জারা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের মুশতাক হোসেনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি।
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন। বৈঠকে ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুর মিয়া, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার। ঐকমত্য কমিশন বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধাপে ধাপে আলোচনা হবে।
কোরবানির ঈদের আগে প্রথম ধাপের আলোচনা শেষে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার জন্য ২ জুন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেছিল ঐকমত্য কমিশন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।