সংঘাতের জন্য সবাই মুখিয়ে আছে, কয়েক মাসের মধ্যেই দেখা যাবে : মাহফুজ

| রবিবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে এবং কয়েক মাসের মধ্যে সেই সংঘাত দৃশ্যমান হবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। আর সেই সংঘাতে যদি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ যুক্ত হয়, তাহলে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। তথ্য উপদেষ্টা বলেছেন, প্রত্যেকেরই আদর্শিক অবস্থান নেওয়ার নাগরিক অধিকার আছে। কিন্তু সেই অধিকার যখন আরেকজন ভঙ্গ করবে, তখন আসলে লড়াইটা অনিবার্য হয়। ফলে লড়াইয়ের আগে আমাদের ঐক্যের সুর তোলা উচিত।

প্রধান উপদেষ্টার অবস্থানের কারণে এখন অনেকে সংঘাতে জড়াচ্ছেন না মন্তব্য করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছেন এবং আপনারা অবশ্যই এটা অল্প কয়েক মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন। আমি আশঙ্কা করছি, যদি এটার সঙ্গে ধর্মীয় যে দৃষ্টিকোণ, এটা যদি যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। খবর বিডিনিউজের।

গতকাল শনিবার রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ ভবনের ডা. শামসুল আলম খান মিলন সভাকক্ষে ‘মাজার সংস্কৃতি : সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে বক্তব্য দেন তথ্য উপদেষ্টা। এই সংলাপের আয়োজন করে ‘মাকাম : সেন্টার ফর সুফি হেরিটেজ’। তথ্য উপদেষ্টা বলেন, আমি শুনেছি আওয়ামী লীগ দরবারগুলোর সঙ্গে সংযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছে। দরবারগুলোকে এটা বোঝানোর জন্য যে, অধ্যাপক ইউনূসের সরকার এসে মাজার ভেঙে দিচ্ছে, মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছে। এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইস্যু নয়। এটা ৫০ বছর ধরে চলছে। যখন সরকার পরিবর্তন হয়, মসজিদ কমিটি বদল হয়ে যায়। ইসলামী ফাউন্ডেশনের গভর্নিং কমিটি বদল হয়ে যায়। মাহফুজ আলম বলেন, মাজারসহ যত মতাদর্শ মানুষের বসবাস বাংলাদেশে রয়েছে, সব ধরনের মানুষের মধ্যে যদি সংলাপের সুযোগ না থাকে, তাহলে তা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হবে না।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদ চলে গেলেও সামাজিক ফ্যাসিবাদ এখনো রয়ে গেছে বলেও মনে করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমাদেরকে এখন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদকে মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশে যারা ইসলামের নামে রাজনীতির চর্চা করেন, তারা হাজার বছর ধরে ইসলামের যে ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে, তাতে ভ্রূক্ষেপ করেননি। সে কারণে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক দলের সংশ্লেষও জড়িত। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক আলোচনার জায়গায় ধর্মকে বাদ দেওয়ার যে প্রকল্প, তাকে মোকাবেলা না করলে এই সংকট শিগগিরই কাটবে না। এখন গত এক বছর যাবৎ মাজার, দরবারের উপর যে হামলা হয়েছে তার যদি পাল্টা আঘাত হয় তাহলে তা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাকে নস্যাৎ করবে। ফলে, এই সহিংসতাকে যেকোনো মূল্যেই হোক বন্ধ করতে হবে।

সহিংসতা বন্ধ করার জন্য সামাজিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে; সামাজিক সংলাপের মাধ্যমেই এই সংকট দূরীভূত করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে মাজার ও দরবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্বার্থেই মাজার ও দরবারের প্রতি এই সহিংসতাকে রোধ করতে হবে। আমার পরামর্শ থাকবে, সুফি সমাজের পক্ষ থেকে এই আওয়াজ তোলা উচিত যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের ইশতেহারে যেন সুফি সমাজের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমাদের দেশে মাজার, দরবারের দায়িত্বশীল যারা আছেন, তাদের একটা ঘাটতি হলো, তারা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে প্রভাব রাখতে পারছেন না। যে কারণে তাদের কণ্ঠস্বর রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে পারছে না। সুফি সমাজের এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে আপনারা অবদান রাখতে পারবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅটোমেশনের আওতায় আসছে পুরো জ্বালানি তেল বিতরণ ব্যবস্থা
পরবর্তী নিবন্ধনিজামী-মীর কাসেম-সালাউদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড মিথ্যা মামলায় : ফখরুল