সংঘাতময় পরিস্থিতি কখনোই কাম্য নয়

| শনিবার , ২০ জুলাই, ২০২৪ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ শান্তিপ্রিয়। তারা হানাহানি চায় না। ছাত্রযুব রাজনীতির নামে মাস্তানিচাঁদাবাজি চায় না। আজ দেশ যতটুকু এগিয়ে গেছে তার বড় অবদান স্থিতিশীল পরিবেশ। এই স্থিতিশীলতাই অর্থনীতির ভিত্তি। আগামী দিনে যারা দেশে রাজনীতি করবে, তারা অবশ্যই অর্থনীতিকেই সামনে রেখে করবে। কারণ দেশে আগামী পাঁচ বছরে অনেক উচ্চশিক্ষিত তরুণের রাজনীতিতে আবির্ভাব ঘটবে। তারা রাস্তায় বাস পোড়ানোর রাজনীতি করবে না। তারা যুক্তি দিয়ে আলোচনা করবে। টকশো করবে। সেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা করবে, অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করবে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে গত কয়েক বছর ধরে দেশে অন্তত ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় ছিল। একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। বন্ধ ছিল না দেশের ‘লাইফ লাইন’ খ্যাত ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কও। এর ফলে এগিয়ে গেছে আমদানিরফতানি বাণিজ্যসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতি।

কিন্তু অতি সম্প্রতি কোটা বিরোধী আন্দোলনের ফলে নতুন করে যে সংঘাতপরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা ভাববার বিষয়। এটার মাধ্যমে আবারও সংঘাতের রাজনীতি ফিরিয়ে আনবে কিনা, সেটাই এখন অনেকের কাছে শঙ্কার বিষয়। তাঁরা বলেন, ‘২০১৩১৪ সালে আমরা দেশে অনেক সংঘাত দেখেছি। আগেও দেখেছি। এমন সংঘাতময় পরিস্থিতি আমাদের কাছে কখনোই কাম্য নয়। এটা ঠিক যে ২০১৪ সালের পর আমরা একটি স্থিতিশীল সরকার এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি পেয়েছি। সে জন্য আমরা গত কয়েক বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ পেয়েছি। এই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আমরা সবসময় দেখতে চাই।’

সাম্প্রতিক কোটা বিরোধী আন্দোলন এতো যে ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যাবে, তা কেউ অনুমান করতে পারে নি। হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে তাদের অধিকারের কথা বলছে, যা পরবর্তী সময়ে সহিংতায় রূপ নেয়। শিক্ষার সঙ্গে সংঘাত মানায় না। তবু দুঃখজনক যে সংঘাতসহিংসতা আমাদের সমাজের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে পারে তিনটিচাকরিজীবী সৃষ্টি করা; সংস্কৃতির ভদ্রলোক সৃষ্টি করা এবং বিবেকবান ও সৃজনশীল মানুষ সৃষ্টি করা। হয়তো প্রথম উদ্দেশ্য অর্থাৎ চাকরিজীবী সৃষ্টি হচ্ছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু বাকি দুটি পথ অর্জন যে সহজ নয় সেটা অনুমেয়। এদিকে ‘সংস্কৃতিচর্চা’ কথাটি শুনলেই কেউ কেউ মনে করেন, গানবাজনা, নাচ, কবিতা আবৃত্তি মানেই সংস্কৃতিচর্চা। তারা ভুলে যান, আমাদের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ড, রাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছুই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। মানুষ যা ভাবে, যা বলে, যা করে সবই তার সংস্কৃতির অংশ। একজন মানুষ, দুজন মানুষ, দশজন মানুষের চিন্তাভাবনা ও কর্মকাণ্ড দিয়ে যখন সমাজ এগিয়ে যায়, তখন সেটিই হয়ে ওঠে তাদের সংস্কৃতি।’ বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটানো বর্তমান শিক্ষাপদ্ধতিতে দুরূহ হয়ে পড়েছে। বন্ধ প্রকোষ্ঠে শিক্ষার্থীরা বন্দি। স্বল্প পরিসরে শিক্ষার্থীরা সীমাবদ্ধ থাকায় তাদের মানসিক বিকাশ পরিপূর্ণভাবে হচ্ছে না। তাদের শিক্ষার পরিসর বৃদ্ধি করতে হবে। সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য আছে, এই বৈষম্য দূরীকরণে সরকারসহ সকলে সচেষ্ট। একইভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য বিরাজ করছে। আর এই বৈষম্য দূর করতে সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে। সমাজে সাংস্কৃতিক চর্চা যত বৃদ্ধি পাবে, মানবিক সমাজ ততই পরিপূর্ণতা লাভ করবে।

সংস্কৃতিবান হতে গেলে অবশ্যই জ্ঞানচর্চার সঙ্গে থাকতে হবে। দৃঢ় চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যের হতে হবে। হতে হবে মূল্যবোধনির্ভর আত্মবিশ্বাসী ও নীতিনৈতিকতাবোধ সম্পন্ন। প্রতিটি প্রথা ও বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। সম্যকভাবে জ্ঞান থাকতে হবে কলা ও মানবিকতার। সবচেয়ে বড় কথা, হৃদয়ের চর্চা করতে হবে। হৃদয়ের গভীর থেকেই অনুপ্রেরণা ও উদ্দীপনা তৈরি হয়, যা সৃজন বৃদ্ধিতে কাজে লাগে। আমাদের যুক্তি দিয়ে জানতে হবে সবকিছুতে, জোর করে যে কোনো কিছু দাঁড়াতে পারে না, এই ধারণা বদ্ধমূল হতে হবে। তাহলেই ছেলেমেয়েদের বিচারিক দক্ষতা বাড়বে। ভিন্ন আদর্শের নামে কেউ উগ্রপন্থা তাদের মাঝে অনায়াসে ঢুকিয়ে দিতে পারবে না। অতএব আমাদের প্রত্যাশা, সরকারের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, যা দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে