সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অর্থনৈতিক দারিদ্র্য দূরীকরণে পদক্ষেপ চাই

| শুক্রবার , ২২ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ সুবিধা একটি কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন পন্থা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। চরম দারিদ্র্য পীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এসব কার্যক্রমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক অংশগ্রহণ তথা ক্ষমতায়ন এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করা হয়। তবে তাদের পরিচালিত কার্যক্রমের স্থায়িত্ব নির্ভর করে অগ্রসর ও অনগ্রসর সমন্বয় সাধন পক্রিয়া, বাজারজাতকরণ, নতুন প্রজন্মের দাতার উদ্ভব, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সাথে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংযোগ স্থাপনের ওপর।
একটি কথা আমরা জানি যে, বিশ্বের আশিভাগ মানুষ-৪৮০ কোটি লোক বিশ্বের মোট আয়ের মাত্র ২০ শতাংশের অংশীদার। বাকি আয়টা ভোগ করছে ২০ শতাংশ সৌভাগ্যবান। এক হিসেবে বিশ্বের শতকরা ১০ ভাগ লোক শতকরা ৭০ ভাগ পণ্য উৎপাদন ও সেবা সরবরাহ করে মোট আয়ের ৭০ ভাগ ভোগ করে। অপরদিকে পৃথিবীর অর্ধেক লোক মাত্র শতকরা ৬ ভাগ পণ্য উৎপাদন করে এবং তারা প্রতিদিন দুই ডলারও ব্যয় করার সামর্থ্য রাখে না। আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার রপ্তানি-হ্রাস পাচ্ছে, অপরদিকে ধনী রাষ্ট্রগুলোর রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুক্ত বাণিজ্যে সকলে মিলে অংশগ্রহণ করলে সকলের উন্নতি হবে এই কথায় লোকে বিশ্বাস করতে পারছে না। (তথ্যসূত্রঃ জেন্ডার ও উন্নয়ন কোষ, সম্পাদনা-সেলিনা হোসেন)। আমাদের দেশে সর্বজনস্বীকৃত সমস্যা হচ্ছে দারিদ্র্য। যা গ্রামীণ জীবনের পাশাপাশি নগর জীবনকে ব্যাপক মাত্রায় প্রভাবিত করছে। নগর দারিদ্র্য মূলত শহরে বসবাস উপযোগী জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে অপারগতা, অর্থাৎ নিম্নমানের ঘরবাড়ি, নিম্ন আয়স্তর কর্মদক্ষতার অভাব, সাংস্কৃতিক সীমাবদ্ধতা, অপরাধ প্রবণতা, অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতা, নিম্নমানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ইত্যাদির সমষ্টিগত রূপ। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, নগর দারিদ্র্যের প্রধান কারণ গ্রাম থেকে দরিদ্র জনসাধারণের অভিবাসন। এদের মধ্যে ৭০% পরিবারের কর্তাব্যক্তি ৫১.৬% শিশুসহ পূর্ণ পরিবার, ৫২% নারী এবং ৫০.৫০% তরুণ অভিবাসী। গ্রাম থেকে যারা শহরে আসে, তাদের প্রায় ৮৫% মানুষ দরিদ্র। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ শহরে এসে বিভিন্ন রকমের সংকটে পড়ে, আবার তারা নিজেরা অন্যদেরও সংকটে ফেলে। কেননা, নগরে যে হারে লোকসংখ্যা বাড়ে, ঠিক সেই হারে র্কমসংস্থান ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ে না। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তাঁর এক লেখায় লিখেছিলেন: বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচনের প্রথম ও শেষ দায়িত্ব এ দেশের নিজের। বিদেশি পরনির্ভরতা যতদূর সম্ভব পরিহার করে দেশের অভ্যন্তরে পরস্পর নির্ভরতার ওপর ভিত্তি করে দারিদ্য বিমোচনের সুরাহা করা প্রয়োজন। দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ও কৃষক-শ্রমিক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিবরাত্র পরিশ্রম করে যে প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করছে, তার ফল তারা ভোগ করতে পারছে না। তারা তাদের উৎপাদনের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। মধ্যস্বত্ব ভোগী ও দুর্নীতিবাজরা দরিদ্রের ভাগে ভাগ বসিয়ে যে বঞ্চনার সৃষ্টি করেছে তার দৌরাত্ম্য সম্পূর্ণ দূর করতে না পারলেও তা হ্রাস করতে পারলে দেশের জন্য তাহবে বিরাট লাভ। দুর্নীতি কমাতে পারলেই নর্দমায় যা হারিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায় বা বিদেশে পাচার হয়ে যায়, তা দেশে বিনিয়োগ হলে সে হবে দারিদ্র্য বিমোচনের পক্ষে এক বড় পদক্ষেপ।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে দরিদ্র দেশগুলোর ঋণের প্রয়োজন আছে, প্রয়োজন আছে বিনিয়োগের। তবে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরনির্ভরতার কোনো প্রয়োজন নেই। দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে পরমুখাপেক্ষিতার মতো ভয়াবহ নির্ভরতা আর কিছু নেই। বেকারত্ব ও দারিদ্র্য মূলত এক সাথে বাস করে। বেকারত্ব নানা ধরনের সামাজিক ব্যাধি ও অর্থনৈতিক সংকটের জন্ম দেয়। ফলে সার্বিক আর্থ সামাজিক অবক্ষয় ঘটে। সঞ্চয় কমে গিয়ে বিনিয়োগের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই এমন পরিকল্পনা দরকার যে, েিট হবে মানবকল্যাণমুখী। যার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে দূর হতে পারে সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক ও মানবিক দারিদ্র্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে