মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে বেশি আসন পেয়ে নতুন সরকার গঠন নিশ্চিত করেছে।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা বিবিসি জানায়, সর্বশেষ নির্বাচনী ফলে নেত্রী অং সান সু চি’র দল এনএলডি ৩৪৬ আসনে জয় পেয়েছে যা সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ৩২২ আসনের চেয়ে বেশি। বিডিনিউজ
এই বিপুল ভোট জয়ের পর আজ শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) জাতীয় ঐক্য সরকার গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি।
এনএলডি’র মুখপাত্র মনিওয়া অং শিন বলেছেন, “সু চির নেতৃত্বে এখনও মানুষের আস্থা আছে তা-ই দেখিয়ে দিয়েছে এ জয়।আমাদেরকে জাতীয় ঐক্য সরকার গড়া নিয়ে কাজ করতে হবে।”
এনএলডি এ প্রক্রিয়ায় ৩৯টি সংখ্যালঘু দলকে তাদের সঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে জানান অং শিন।
এর আগে ২০১৫ সালের নির্বাচনে জয়ের পর সংখ্যালঘু দলগুলোকে এমন প্রস্তাব দেয়নি দলটি।
জাতিগত সংখ্যালঘু রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে জাতীয় পার্লামেন্টের আসনের পাশাপাশি রাজ্য এসেম্বলির জন্যও লড়ছে।
মিয়ানমারে এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত রবিবার।
নির্বাচনের প্রাথমিক ফলে এনএলডি এর আগে জয় দাবি করার পর সর্বশেষ ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করল তবে ভোট গণনা চলছে।
সেই কারণে নির্বাচনের চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিক ফল এখনও ঘোষণা হয়নি। ৪১৬টি আসনের ৬৪টির ফল এখনও ঘোষণা করা বাকি আছে।
এরই মধ্যে পাওয়া ফলে এনএলডি’র জয়ে দলটিকে আগাম অভিনন্দন জানিয়েছে ভারত, জাপান, সিঙ্গাপুর কিন্তু মিয়ানমারের সেনা সমর্থিত বিরোধীদল ইতোমধ্যেই ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) বলেছে, তারা নির্বাচনের ফল মানে না। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, পক্ষপাতহীন, অন্যায় প্রচার মুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীন এবং আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভোট নির্বিঘ্নেই অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বড় ধরনের কোনো অনিয়মও হয়নি। ওদিকে, এনএলডি ভোটে কোনোরকম ত্রুটিবিচ্যুতির প্রমাণ দাবি করেছে।
সেনা-সমর্থিত বিরোধীদল এখন পর্যন্ত তাদের অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।
মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়েছে। নির্বাচনের আংশিক ফলে ইউএসডিপি পেয়েছে ২৪টি আসন।
মিয়ানমারের দুই কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রতিনিধি পরিষদের ৪৪০ এবং উচ্চ কক্ষ জাতীয় পরিষদের ২২৪ আসনের মধ্যে ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। বাকি আসনগুলোতে গত রবিবার ভোট হয়েছে।
এই নির্বাচনকে নেত্রী অং সান সু চির এনএলডি নেতৃত্বাধীন নতুন গণতান্ত্রিক সরকারের প্রশ্নে গণভোট হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
মিয়ানমারে সু চির দল ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দলটির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০১৫ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয় পাওয়া সু চির ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেকটাই ধসে গেছে রোহিঙ্গা ‘গণহত্যার’ ঘটনাপ্রবাহে তার ‘নীরব সমর্থনের’ কারণে।