সংকটের মুখে সার পরিবহন

ঠিকাদার অনিয়মের অভিযোগ টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতার সক্ষমতা নিয়ে সংশয়ে জটিলতা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগের অনিয়মের জের ধরে দেশব্যাপী সার পরিবহন সংকটে পড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। কৃষিখাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফসফেটিক সার পরিবহনে টিএসপি কমপ্লেক্সের ঠিকাদার নিয়োগে এই অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়েছে। একজন ঠিকাদার দেশের ১৩টি স্থানের পৃথক গুদামে সার পরিবহনে টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও তার সক্ষমতা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়ায় পুরো বিষয়টিতে জটলার সৃষ্টি হচ্ছে। নিজের অক্ষমতা ঢাকতে ওই ঠিকাদার ঘাটে ঘাটে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার দৈনিক আজাদীকে বলেছেন যে, তিনি পরিবহন করতে চান, কিন্তু বোর্ড সংশয়ে রয়েছে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গাস্থ ফসফেটিক সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টিএসপি কমপ্লেক্স লি. কর্তৃক দেশের ১৬টি পৃথক গুদামে ৪৭ হাজার ৩২০ টন টিএসপি সার পরিবহনের ঠিকাদার নিয়োগের জন্য গত ১৪ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করে। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে ৫০ কেজি বস্তাভর্তি সার পরিবহনের জন্য উক্ত টেন্ডার খোলা হয়। ওই টেন্ডারে মেসার্স রুহুল আমীন ভূঁইয়া, মেসার্স কমা ক্রিয়েশন, মেসার্স মা ট্রেডার্স, মেসার্স ব্রাদার্স কর্পোরেশন, মেসার্স সালাউজ্জামান এন্ড মেসার্স রাসেল এন্টারপ্রাইজ (জে.ভি), মেসার্স এস এ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স বি এস ট্রেডিং এবং মেসার্স জাহিদ এন্টারপ্রাইজ নামের ৮টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। টেন্ডারে তিনটি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়। এরমধ্যে মেসার্স বি এস ট্রেডিং দেশের বগুড়া, রাজশাহী, বাঘাবাড়ী, মহেন্দ্রনগর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, যশোর, শিরোমণি, ভোলা, টেকেরহাট, টেপাখোলা, ঘোড়াশাল ও আশুগঞ্জে অর্থাৎ মোট ১৩টি গুদামে সর্বমোট ৪১ হাজার ২৭২ টন টিএসপি পরিবহনের জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়। এছাড়া মেসার্স কমা ক্রিয়েশন গাইবান্ধা ও শেরপুরের ২টি গুদামে ৩ হাজার ৯২০ মে. টন এবং মেসার্স রুহুল আমীন ভূঁইয়া ফেঞ্চুগঞ্জের ১টি গুদামে ২ হাজার ১২৮ টন সার পরিবহনের সর্বনিম্ন দরদাতা হয়।
এরমধ্যে ১৩টি গুদামের জন্য পরিবাহিত সারের দরপত্র এবং নিরাপত্তা জামানত বাবদ মেসার্স বিএস ট্রেডিংকে ব্যাংক গ্যারান্টি বাবদ প্রায় ২০ কোটি ২০ লাখ ৩৯ হাজার ৭৯৮ টাকা দেয়ার কথা। এছাড়া মেসার্স কমা ক্রিয়েশনকে দরপত্র এবং নিরাপত্তা জামানত বাবদ ব্যাংক গ্যারান্টির পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৯২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৪২ টাকা এবং মেসার্স রুহুল আমীন ভূঁইয়ার দরপত্র এবং নিরাপত্তা জামানত বাবদ নির্ধারিত ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়ার কথা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৯৬ টাকা। কিন্তু টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া মেসার্স বি এস ট্রেডিং নামক প্রতিষ্ঠানটি দরপত্র এবং নিরাপত্তা জামানত বাবদ নির্ধারিত ব্যাংক গ্যারান্টির ২০ কোটি ২০ লাখ ৩৯ হাজার ৭৯৮ টাকা প্রদান করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। একই সাথে এই কোম্পানির এতগুলো সার পরিবহন করার সক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়েও দেখা দেয় সংশয়। এই কোম্পানির এত বেশি কাজ করার যেমন অভিজ্ঞতা নেই তেমনি এদের পুঁজি নিয়েও সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ওই কোম্পানি যদি নিজ থেকে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে তাকে আর্নেস্ট মানি হিসেবে টেন্ডারের সাথে জমা দেয়া ৩৫ লাখ ৫ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত করতে হবে। আবার ব্যাংক গ্যারান্টি পুরোপুরি নিয়ে তাকে পুরো কাজ দেয়ার সম্ভাবনাও নেই। এই অবস্থায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র সাপও মারবে লাঠিও না ভাঙার পদক্ষেপ নিয়েছে। যাতে উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৩টি গুদামের পরিবর্তে পরিবহনে লাভ হবে এমন ৫টি গুদামের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে বাকি ৮টি গুদামের জন্য পুনঃটেন্ডার আহ্বানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠক হলেও গতকাল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফাইলটি বিসিআইসির বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। বোর্ড থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে আনলে ওই ঠিকাদারের ৩৫ লাখ টাকার আর্নেস্ট মানি রক্ষা পায়, আবার তাকে ২০ কোটি টাকারও বেশি ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হয় না। অপরদিকে ১৩টি পয়েন্টের মধ্যে ব্যয়বহুল রুটগুলো বাদ দিয়ে লাভজনক পাঁচটি রুটে তাকে দিয়ে সার পরিবহন করিয়ে নেয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, ঠিকাদারকে রক্ষা করতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হলে নতুন করে আবারো দরপত্র আহ্বান করতে হবে। ওই টেন্ডারের প্রক্রিয়া শেষে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করে সার পরিবহন করাতে হলে কৃষিতে সংকট অনিবার্য। অবশ্য টিএসপি কমপ্লেঙের এমডি মোহাম্মদ আতাউর রহমান গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারের পছন্দের কোনো সুযোগ নেই। বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। বোর্ডই তাকে কতটি গুদামের জন্য নিয়োগ করে তা দেখতে হবে। বোর্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করার নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে বিএস ট্রেডিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী পংকজ কুমার দাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এককভাবে সব সার পরিবহন করতে চাই। এখন টিএসপি কমপ্লেঙই আমাকে সব সার পরিবহন করতে দিচ্ছে না। তারা বলছে, আমি নতুন মানুষ। তাই পারবো না। আমি সার পরিবহন করতে না পারলে তাদের সমস্যা হবে। তাই তারা আমার গুদামের সংখ্যা কমিয়ে দিতে চাচ্ছে। টেন্ডারের শর্তের বাইরে গিয়ে গুদামের সংখ্যা কম-বেশি করার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব তো আমার ব্যাপার নয়। আমি জানি না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই লড়াইয়ে হয় জয়, নয় মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ যাতে দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি না হয় সেজন্য প্রস্তুত থাকুন : প্রধানমন্ত্রী