সংকটেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক গতিপথে

| বৃহস্পতিবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

একটা অবাক করা সংবাদ হলো, ‘অর্থনৈতিক সংকটেও মাথাপিছু আয় বাড়ল ২৩৩ ডলার’। গত ১৫ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধে অর্থনৈতিক সংকটেও আগের অর্থ বছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থ বছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২৩৩ ডলার।
গত অর্থ বছরে মাথাপিছু আয় হয়েছে ২ হাজার ৮২৪ ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৭ টাকা ৫১ পয়সা)। ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৫৯১ ডলার। সে হিসাবে বিগত অর্থ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২৩৩ ডলার।
গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ২০২১-২২ অর্থছরের কার্যাবলি সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, ২০২১-২২ অর্থ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ (সাময়িক), বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার নিরূপিত হয়েছে। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময়ে ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৯ জন বাংলাদেশি কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থান লাভ করেন।
বৈশ্বিক নানা সংকটের মধ্যেও জোরালো জিডিপি প্রবৃদ্ধির কল্যাণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের মতোই ‘স্থিতিশীল’ থাকবে বলে দুই মাস আগে সুখবর দিয়েছিল আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস (এসঅ্যান্ডপি)। গত ২৫ আগস্ট প্রকাশিত বাংলাদেশের ঋণমান দীর্ঘমেয়াদে ‘বিবি-’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘বি’ বহাল রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্থিক সেবাদাতা সংস্থাটি। ঋণমানের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বেশ কিছুদিন ধরে বাহ্যিক চাপের মধ্যে রয়েছে। আর এই চাপে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বড় ঘাটতিতে পড়েছে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক গতিপথে রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী এক বছরের মধ্যে দেশটির অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে পাবে। বাংলাদেশের জোরালো প্রবৃদ্ধির ধারা গড় আয় বাড়তে থাকবে এবং বছরজুড়ে বাহ্যিক ঝুঁকি মোকাবিলা করে টিকে থাকবে বলে যে প্রত্যাশা ছিল, রেটিংয়ে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। ২০১০ সালে এসঅ্যান্ডপির কাছ থেকে প্রথমবারের মতো ঋণমান পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ একই রেটিং পেয়ে আসছে। অর্থনীতির মূল্যায়নের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার একটি দৃঢ় পদক্ষেপে রয়েছে। আগামী তিন বছর দেশটি গড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) অর্জন করবে। রফতানি আয় এবং প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এই প্রবৃদ্ধি অর্জনে যথেষ্ট অবদান রাখবে।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, বাংলাদেশের অর্জনও আছে। বিচ্যুতিও আছে। এই বিচ্যুতি অর্জনকে দুর্বল করে দিতে পারে। টেকসইতা কমিয়ে দিতে পারে। তবে বাংলাদেশ অনেক সমস্যা উত্তরণ করে এ অবস্থায় এসেছে। আশা করা যায়, আগামীতে সমস্যা উত্তরণ করে এগিয়ে যাবে। তাঁরা আরও বলেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে জটিল ও সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশে ও বিশ্বে এমন পরিস্থিতি হতে পারে, তা আগেই বলা হয়েছিল। পাশাপাশি এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় স্বল্পমেয়াদি স্থিতিকরণ কর্মসূচি জরুরি বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। যে কারণে জিডিপির অভিলাষ সংযত করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আর্থিক ও বৈদেশিক লেনদেন নীতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিনিময় হার ও মূল্যস্ফীতিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত শেষ হবে না। বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা বৈদেশিক লেনদেনে নয়। মূল সমস্যা আর্থিক খাতের দুর্বলতা।
তবে অনেক সংশয় ও শঙ্কার মধ্যে আশার সূর্য দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলেন, গত এক দশক ছিল দেশের ইতিহাসে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিশ্রুতিশীল দশক। বলতে হবে সফল দশক। এসময়ে দেশ নিম্নআয় থেকে নিম্নমধ্যম আয়ে উন্নীত হয়েছে।এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে এসেছে। সফলভাবে এমডিজি অর্জন করেছে। এসডিজি বাস্তবায়নে এগিয়েছে। মানুষের আয়ুষ্কাল, কৃষি উৎপাদন, শিক্ষার হার, মাথাপিছু রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে। বলতে হবে গত ১৩ বছর ছিলো অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সমৃদ্ধ সময়। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটেও মাথাপিছু আয় বাড়ার ঘটনা সেই সাফল্যেরই বহিঃপ্রকাশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে