নতুন শিক্ষা কারিকুলাম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ষান্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষা মূল্যায়িত হবে সামষ্টিক পদ্ধতিতে। এই দুই শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পরীক্ষা নিয়ে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাধ্যমিক স্তরের অনেক প্রতিষ্ঠান তা মানছে না। এমনকি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তর প্রধানেরও এ নিয়ে নজরদারি নেই বলে অভিযোগ আছে। তবে ওই কর্মকর্তা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিষ্ঠানের নামে সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেছে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে। এমনকি প্রশ্নপত্র ছাপানোসহ পরীক্ষা নেওয়ার বিপরীতে মোটা অংকের টাকাও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ষাম্মাসিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তবে প্রশ্নপত্রের গায়ে সৃজনশীলের স্থলে সামষ্টিক মূল্যায়ন–২০২৩ লেখা হয়েছে। একইভাবে উপকূলীয় বদরখালীর একটি, ঢেমুশিয়ার একটিসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি বিধি মানা হচ্ছে না।
বিষয়টি স্বীকার করে রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন সোমবার আজাদীকে বলেন, অনেক শিক্ষক এখনো নতুন কারিকুলাম ভালো করে রপ্ত করতে পারেননি। সেই জায়গায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কীভাবে সামষ্টিক মূল্যায়ন নিতে হবে তা যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জানতে হবে। তাই আগের মতো প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ষান্মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়ার বিপরীতে শুধুমাত্র বেতন নেওয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়নি। তবে এবার ভুলত্রুটি হলে আগামীতে তা শোধরানো হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক আজাদীকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সৃজনশীলের মতো হুবহু প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিপরীতে পকেট কাটা হচ্ছে অভিভাবকদের।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চকরিয়া উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন–শৃক্সখলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। সভায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। সভার প্রধান এই বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তাঁর কাছে এই ধরনের কোনো তথ্য নেই তিনি বলে সভাকে জানান।
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, চকরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যথাযথ নজরদারি করেন না। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষকদের সাথে সমন্বয় করে প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়া, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিতে পছন্দের লোক অন্তর্ভুক্ত করেন তিনি।
তবে অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার মাধ্যমিক স্তরের ৫৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারের বিধি ও কারিকুলাম অনুযায়ী সবকিছু চলছে। রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেননি।
উপজেলার একাডেমিক সুপারভাইজার রতন কুমার বিশ্বাস আজাদীকে বলেন, উপজেলার যেসব মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণীত শিক্ষা কারিকুলাম মানছে না, তালিকা করে সেইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হবে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান আজাদীকে বলেন, সরকারের প্রণীত শিক্ষা কারিকুলাম অবশ্যই মানতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এই বিধি মানছে না সরেজমিন পরিদর্শন করে সেসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।