শ্রীলংকায় প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের পর এ বার প্রেসিডেন্টের গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি জোরালো হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা গতকাল বুধবারও কার্ফু অগ্রাহ্য করে পথে নামেন। প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান তারা। এদিকে গতকাল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন গোতাবায়া। তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহেই শ্রীলঙ্কায় তৈরি হতে চলেছে নতুন মন্ত্রিসভা এবং রাজাপাকসে পরিবারের কেউ-ই নয়া মন্ত্রিসভায় থাকবেন না। তিনি জানান, নতুন মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকেই স্থির হয় নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ এবং তরুণ প্রজন্মের নেতাদের নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভার বিষয়টি। প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করব আমি এবং সাধারণ মানুষের বিশ্বাস রয়েছে, এমন নেতাদের নিয়েই নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।’
২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ের পরে গোতাবায়ে রাজাপাকসে পরিবারের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেন। গত ২০ বছরের মধ্যে ১২ বছরই শ্রীলঙ্কার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেছেন রাজাপাকসে পরিবারের সদস্যরা। এর আগে গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
রাজধানী কলম্বোয় হিংসা দমনে মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল বাহিনী। রাস্তায় রাস্তায় সেনা সদস্যরা টহল দিচ্ছে। মোতায়েন করা হয়েছে সাঁজোয়া গাড়িও। বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে বাঁচতে মঙ্গলবার ভোরেই ত্রিঙ্কোমালিতে নৌসেনাঘাঁটিতে সপরিবার আশ্রয় নিয়েছেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। নৌসেনা কমান্ডার নিশান্ত উলুগেতেন্নে জানিয়েছেন, বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ত্রিঙ্কোমালিতে নিরাপদে আছেন। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে যায়, তিনি শ্রীলঙ্কা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং পরিস্থিতি সামলাতে দ্বীপরাষ্ট্রে সেনা পাঠাচ্ছে ভারত। যদিও দু’টি ঘটনাকেই গুজব বলে খারিজ করে দিয়েছে ভারত।
কিছু বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ক্রমবর্ধমান চাপে প্রেসিডেন্ট যদি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে সংবিধানে পার্লামেন্টের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচনের বিধান দেওয়া আছে। তাই ক্ষমতা কেন্দ্রে শূন্যতা তৈরি হবে না। পার্লামেন্টের সদস্যদের জন্য একটি আন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগ দেওয়ার বিধানও আছে।
কয়েক মাস ধরে দেশটির বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সহায়তা যুগিয়ে যাচ্ছে মূলত প্রতিবেশী ভারত, তারা তাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ দেশটিকে এ পর্যন্ত সাড়ে তিনশ কোটি ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্যাকেজের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে দেশটি এবং চীনের কাছেও সাহায্য চেয়েছে। চীন ও ভারত ২ কোটি ২০ লাখ লোকের দেশ শ্রীলঙ্কার ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য বহুদিন ধরেই পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ভারতের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপটি কৌশলগতভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।