বিশ্বের অনেক বড় বড় দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিতলেও শ্রীলংকার বিপক্ষে কখনোই জেতা হয়নি। অথচ শ্রীলংকার বিপক্ষে ২০০২ সাল থেকে আটটি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। একাধিকবার সিরিজ জেতার কাছাকাছি গিয়েও শেষ পর্যন্ত জেতা হয়নি। অবশেষে ঘুচেছে সে হতাশা। শেষ পর্যন্ত শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। আগের ৮টি সিরিজের মধ্যে ৬টিতে জিতেছে লংকানরা। দুটি সিরিজ ড্র হয়েছিল। অবশেষে সে খরা কাটিয়ে বা্ংলাদেশ জিতে নিল ওয়ানডে সিরিজ। গতকাল সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে লংকানদেরকে ১০৩ রানে হারিয়ে টানা দুই ম্যাচে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করল তামিম ইকবালের দল। মুশফিকুর রহিমের দারুণ ব্যাটিং এর পর মিরাজ, সাকিব এবং মোস্তাফিজদের সম্মিলিত বোলিং আক্রমণের সামনে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দাড়াতেই পারেনি লংকানরা। ফলে প্রথমবারের মত সিরিজ হারতে হয়েছে বাংলাদেশের কাছে। আগের অষ্টমবারে ব্যর্থ বাংলাদেশ ঘুরে দাড়িয়েছে নবমবারে এসে। সে সাথে কদিন আগে লংকার মাটিতে টেস্ট সিরিজে হারের প্রতিশোধটাও নেওয়া হলো বাংলাদেশের। এখন বিশ্বকাপ পরবর্তী ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ যে লংকানদের কাছে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছিল সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার পালা।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের জন্য প্রথম ওভারটি ছিল এক রকম স্বপ্নের মত। প্রথম ওভারে ১৪ রান তুলে নেন তামিম। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ধাক্কা খেলেন আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান তামিম। ফিরেছেন এলবিডব্লিউ হয়ে। নিজের প্রিয় পজিশনে আবারো ব্যর্থ সাকিব। প্রথম ম্যাচে ১৫ রান করলেও এবার রানের খাতাই খুলতে পারলেননা সাকিব। সেই ওভারেই এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলেন সাকিবও। ১৫ রানে দুই উইকেট নেই বাংলাদেশের। এরপর উইকেটে আসেন মুশফিক। কিন্তু রানের চাকা গতি পাচ্ছিলনা। দুজন চেষ্টা করছিলেন ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ লিটন। আগের ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরলেও গতকাল ফিরেছেন ৪২ বলে ২৫ রান করে। অনকেটা ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে ফিরলেন লিটন দাশ। প্রায় দুই বছর পর দলে সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত সুযোগটাকে কাজে লাগাতেতো পারলেননা উল্টো দলকে আরো বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে ফিরলেন ১০ রান করে। এবার মুশফিকের সাথে জুটি বাধলেন মাহমুদউল্লাহ। আগের ম্যাচের মত দলকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন দুজন মিলে। পঞ্চম উইকেটে এদুজন যোগ করলেন ৮৭ রান। এই জুটিতেই মূলত ধস ঠেকিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ৫৮ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ৪১ রান করে মাহমুদউল্লাহ ফিরলে ভাঙ্গে এজুটি। লম্বা এ জুটি ভাঙ্গার পর আফিপ হোসেন কিংবা মেহেদী হাসান মিরাজ কেউই সঙ্গ দিতে পারেনি মুশফিককে। কিন্তু একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক। বারবার নিজে স্ট্রাইক নিয়ে রানের চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করেছেন মুশফিক। কিন্তু শেষ বল পর্যন্ত খেলতে পারলেননা মুশফিক। ফিরেছেন ৪৮.১ ওভারে। তখন অবশ্য নামের পাসে যোগ হয়েছে ১২৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। ১২৭ বলে ১০টি চারের সাহায্যে এই ইনিংস খেলেছেন মুশফিক। আর বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ দাড়ায় ২৪৬। অর্থাৎ দলের মোট রানের অর্ধেকেরও বেশি মুশফিকের। অপরদিকে সাইফউদ্দিনের সংগ্রহ ৩০ বলে ১১ রান। শ্রীলংকার হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন দুশমান্ত চামিরা ও লাকসাম সান্দাকান।
জবাবে ব্যাট করতে নামা লংকান ইনিংসের শুরুতেই আঘাত হানেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামা শরিফুল। তার প্রথম শিকার লংকান অধিনায়ক কুশল পেরেরা। তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ দিয়ে লংকান অধিনায়ক ফিরেন ১৫ বলে ১৪ রান করে। সে ধাক্কা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছিলেন গুনাতিলকা এবং নিশাংকা। কিন্তু তাদের জুটিটাকে ২৯ রানের বেশি হতে দেননি মোস্তাফিজ। গুনাতিলকাকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন মোস্তাফিজ। ৪৬ বলে ২৪ রান করেন এই ওপেনার। এরপর উইকেট শিকারে যোগ দিলেন সাকিব। ফেরালেন নিশাংকাকে। তামিম দারুন এক ক্যাচ নিয়ে বিদায় করে এই লংকানকে। ৩৬ বরে ২০ রান করেন নিশংকা। আগের ম্যাচে ৪ উইকেট নেওয়া মিরাজ কেন বাদ যাবেন উইকেট শিরারে। তাই এবার তিনি ফেরালেন কুশল মেন্ডিসকে। সাকিবের দ্বিতীয় শিকার হয়ে যখণ ধনঞ্জয়া ডি সিলভা যখন ফিরেন তখন লংকানদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৮৯। এরপর শ্রীলংকার ব্যাটসম্যানরা আর কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। সানাকাকে ফেরানোর পর আগের ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে প্রতিরোধের দেওয়াল গড়ে তোলা হাসারাঙ্গাকে পিরিয়ে বাংলাদেশের জয়কে সময়ের ব্যাপার মাত্র করে দেন মিরাজ। এরপর বান্দারাকে ফেরান মোস্তাফিজ। এরপর সান্দাকানকেও ফেরান মোস্তাফিজ। ৩৮ ওভারে শ্রীলংকার স্কোর যখন ৯ উইকেটে ১২৬ তখন বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। প্রায় আধ ঘন্টা পর খেলা শুরু হলে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে লংকানদের সামনে নতুন লক্ষ্য দাড়ায় ৪০ ওভারে ২৪৫ রান। বৃষ্টির পর বাকি দুই ওভার খেলে ২০ রান করতে সক্ষম হয় লংকানরা। আর তাতে ১০৩ রানের বিশাল পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন মিরাজ এবং মোস্তাফিজ। ২টি উইকেট নিয়েছেন সাকিব।