শ্রীমাই পাড়ের দুঃখ এবার ঘুচবে

বেড়িবাঁধ ও সিসি ব্লক নির্মাণকাজসহ ভৌত কাজের ৬৫ শতাংশ শেষ । ডিসেম্বরেই শেষ হচ্ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প । ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ২৬ সালের জুনে

শফিউল আজম, পটিয়া | সোমবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

পটিয়ায় রাক্ষুসী শ্রীমাই পাড়ে বসছে প্রতিরক্ষা ব্লক। এতে দুই তীরে ভাঙন আতঙ্কে থাকা হাজারো মানুষের মাঝে এখন স্বস্তি ফিরে এসেছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পটিয়ার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় শত শত মানুষের ঘরবাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পটি ১১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকার। এ প্রকল্পের কাজ ৭ ভাগে চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, সেচ অবকাঠামো, খাল পুনঃখনন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ, নদীর তীর সংরক্ষণ, ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ ও ভূমি অধিগ্রহণ। প্রকল্পের ৩০ কি.মি খাল পুনঃখননের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে গরুলুটা খালের ১০ কি.মি. শ্রীমাই খালের ৫ কি.মি, চানখালী খালের ৩.৫ কি.মি. বগাখাড়া খালের ২ কি.মি. আলম খাল, কাজির খালসহ আরও অন্যান্য খালের ১০ কি.মি খনন কাজ শেষ করা হয়েছে। সেচ অবকাঠামো (স্লুইস গেট) ২৬টির মধ্যে ইতোমধ্যে ২২টির কাজ শেষ করা হয়েছে। অন্য দুটির কাজ চলমান। এছাড়াও ২৫.৫১ কি.মি বেড়িবাঁধের প্রায় ১২.৫০ কিলোমিটার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

এ মেগা প্রকল্পের আওতায় রয়েছে প্রায় ৩ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ। এর মধ্যে চরকানাই এলাকায় ১৫০ মিটার, মনসা ১৫০ মিটার, খরনখাইন ২০০ মিটার, ভেল্লাপাড়া খালের ডান তীরবর্তী ৭২০ মিটার তীর সংরক্ষণ কাজ শেষ। সে হিসেবে প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়াও ৪৮ মিটারের একটা ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এটি নির্মাণ করা হবে নাইখাইন গ্রামে। ৪.১০ কিলোমিটার ফ্লাড ওয়াল নির্মাণকাজ ৬৫ শতাংশ শেষ করা হয়েছে। বাকি কাজ চলমান রয়েছে।

শ্রীমাই পাড়ের বাসিন্দা আবু ছিদ্দিক বলেন, বিগত ২৩ বছরে অনেকে নিজের ঘর হারিয়েছে। বর্ষা মৌসুম আসলেই বাড়ি ভাঙনের ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। পানির ভয়াবহতা দেখলে ভয় লাগে। এবার দুই পাড়ে ব্লক বসানোর কারণে নিজেদের নিরাপদ মনে করছি। খালের ভাঙন ও পানি থেকে এবার আমরা নিজেদের ঘর বাড়ি রক্ষা করতে পারবো। শ্রীমাই পাড়ের মানুষের দুঃখ এবার ঘুচবে আশা করি। তবে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। ৫৮.৯২৮ হেক্টর জায়গার মধ্যে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৫২ কোটি টাকা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১১টি প্রস্তাবের মাধ্যমে ডিসি অফিসে পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে ৫টি প্রস্তাবের ডিএলসি মিটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকি ৬টির কাজ মাঠ পর্যায়ে চলমান রয়েছে বলে জানান পাউবো’র কর্মকর্তারা। এদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প চাষের আওতায় আসছে আরও ১০ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি। হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে পটিয়াসহ পাশের কর্ণফুলী, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালীতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাউবো গৃহীত এ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পটিয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও ১০ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে পাশাপাশি নদী ও খালের ভাঙন থেকে সুরক্ষা পাবে কর্ণফুলী, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালী উপজেলা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম ডিভিশন১ নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, ‘প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ দেয়াল নির্মাণ, বেড়িবাঁধ ও সিসি ব্লকের বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজসহ ভৌত কাজের ৬৫ শতাংশ শেষ করা হয়েছে। ১১টি খালের নাব্যতা ফেরাতে ৩০ কিলোমিটার খনন ও প্রকল্প এলাকায় ২৬টি রেগুলেটর (স্লুইস গেট) স্থাপন করার মধ্যে ২২টির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ব্লক নির্মাণ, বসানোসহ সব ধরনের কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে।’

পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই খালে মাল্টিপারপাস হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ কাজ চলছে। ১৩৩ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালের জুন মাসে শেষ করা হবে বলে আশা করছে পাউবো। চলমান ২য় এ প্রকল্পটির মধ্যে শ্রীমাই খালে ৮৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ড্যাম নির্মাণের ফলে পাহাড়ি ঢলসহ বর্ষা মৌসুমের বিপুল পরিমাণ জলরাশি সংরক্ষণের মাধ্যমে ১১০৮ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়াও শ্রীমাই খালের উভয় তীরে ৪.৪০০ কিলোমিটার তীর প্রতিরক্ষা কাজ করার মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধ হবে। ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি এ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন হয়।

প্রকল্পের কাজ ৫টি প্যাকেজের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। এর মধ্যে এইচইডি ও আনুষঙ্গিক প্যাকেজ ১টি, বাকি ৪ টি নদী তীর সংরক্ষণ কাজ। চলতি অর্থ বছরে এ প্রকল্পে এডিপিতে বরাদ্দ পেয়েছে ৬ কোটি টাকা।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে ৪ হাজার ৪০০ মিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ৩০০ মিটার খাল খনন, ২১০ মিটার সেচ কাঠামো, ৫১০ মিটার সংযোগ সড়ক, একটি হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম, একটি রেস্ট হাউজ, অফিস ভবন, গার্ড রুম নির্মাণ ইত্যাদি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ৮৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এইচইডি ড্যাম নির্মাণের ফলে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষা মৌসুমের বিপুল পরিমাণ জলরাশি সংরক্ষণ করে এক হাজার ১০৮ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া যাবে। পাশাপাশি পটিয়া উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের নদী তীর সংরক্ষণ করে প্রকল্প এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। এছাড়াও মৎস্য সম্পদ রক্ষা, ইকোট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে আরও বলা হয়েছে, এ অঞ্চলে ড্যাম এবং রিজার্ভার নির্মাণের মাধ্যমে পাহাড়ি ঢালসহ বর্ষা মৌসুমে বিপুল পরিমাণ পানি সংরক্ষণের সুযোগ রয়েছে। যা পরে শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে। পানি সংরক্ষণ ও নদী পথের ল্যান্ডইপিং, সেচের পানি সংরক্ষণ, নদীর ধারণ ক্ষমতা বর্ধন ইত্যাদি নানাবিধ প্রকল্পে এইচইডি (হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম) একটি নতুন প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি অনেকটা রাবার ড্যামের মতো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের মন্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
পরবর্তী নিবন্ধ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে নামে তরুণরা